_DSC7692

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০১৫: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন বুধবার৷ মুজাহিদের আইনজীবীরা মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন৷মঙ্গলবার বেলা ৩টার পরে মুজাহিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করতে যান আইনজীবীরা৷ সেখানেই সাংবাদিকদের রিভিউয়ের বিষয়টি জানানো হয়৷ মঙ্গলবার বিকেলে শিশির মনিরের নেতৃত্বে মুজাহিদের পাঁচ আইনজীবী জেলগেটে আসেন৷ এরপর তারা কারাগারের ভেতরে ঢোকেন৷ শিশির মনির ছাড়া অন্য চার আইনজীবী হলেন- মসিউল আলম, এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক, মতিউর রহমান আকন্দ ও আসাদ উদ্দিন৷সাক্ষাত শেষে বিকেল চারটার দিকে বের হয়ে জেলগেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিশির মনির৷ তিনি জানান, রিভিউ আবেদন চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আধা ঘন্টা সাক্ষাত করেছি আমরা৷ বুধবার সকাল দশটায় রিভিউ আবেদন দাখিল করবো আপিল বিভাগে৷ এর আগে গত ৩ অক্টোবর সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা নিয়ে আসেন তার আইনজীবীরা৷২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিলেন৷ ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে মুজাহিদের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে গেলে সর্বোচ্চ আদালতও ট্রাইবু্যনালের রায় বহাল রাখেন৷ তবে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইবু্যনাল তাকে তিনটিতে মৃতু্যদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ শুধুমাত্র ষষ্ঠ অভিযোগে অর্থাত্‍ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইবু্যনালের রায় বহাল রাখেন৷ ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর দণ্ড থেকে বাঁচতে মুজাহিদের সামনে এখন খোলা রয়েছে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পথ; যা তিনি অ করতে যাচ্ছেন৷ এতেও যদি তার সর্বোচ্চ দণ্ডই থেকে যায় তবে ফাঁসি থেকে বাঁচতে তার সামনে খোলা থাকবে একটাই রাস্তা তা হলো- রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা৷

দু’টি মূল পয়েন্টে তারা রিভিউ চাইবেন বলে জানিয়ে শিশির মনির বলেন, প্রথমটি হচ্ছে, তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির কোনো তালিকায় তার (মুজাহিদ) নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তাহলে তিনি আলবদর কমান্ডার হলেন কি করে? দ্বিতীয়টি হচ্ছে, একাত্তরের ২৩ বছরের একজন ছাত্র ও বেসামরিক ব্যক্তি কিভাবে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান হন? গত ১৬ জুন মুজাহিদের আপিল মামলার সংক্ষিপ্ত চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ৷ ৩০ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃতু্যদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন৷ অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী৷

০১ অক্টোবর এ চূড়ান্ত রায় পৌঁছে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে জারি করা তার মৃত্যু পরোয়ানা মুজাহিদকে পড়ে শোনানো হয়৷ আইন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিন অর্থাত্‍ আগামী বৃহস্পতিবারের (১৫ অক্টোবর) মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন মুজাহিদ৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃতু্যদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২৷ চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইবু্যনাল এ রায় দেন৷ওই বছরের ১১ আগস্ট ট্রাইবু্যনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি৷ তবে সর্বোচ্চ সাজার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ৷