নুরুল-ইসলাম-নাহিদ

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ অক্টোবর ২০১৫: বেসরকারি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ হবে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের মাধ্যমে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে গঠিত হবে এই কমিশন। কমিশন শূন্য পদের হিসেব করে পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী বাছাই করবে। সেখান থেকে মেধা তালিকা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এতে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা কমিটির ক্ষমতা আর থাকছে না।তারা শুধু কমিশনের তৈরি করা মেধা তালিকা থেকে প্রার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের ব্যবস্থা করবেন।বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এটা কার্যকর হতে মাস খানেক সময় লাগতে পারে। এর আগ পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ থাকবে না বলে মন্ত্রী জানান।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে নিয়োগের একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকে পরিচালনা কমিটির হাতে। এতে নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে।

প্রস্তাবিত নিয়মে প্রথমে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করবে কমিশন। এরপর কমিশন পরীক্ষা নেবে। এই পরীক্ষার ভিত্তিতে উপজেলা,জেলা,বিভাগ ও জাতীয় মেধাতালিকা করা হবে।এই তালিকার মধ্য থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে যারা নিবন্ধিত হয়ে আছেন, তাদেরও আগামী তিন বছর পর্যন্ত একটি সুযোগ দেওয়া হবে।প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষা তিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন করছে সরকার, যার মধ্য দিয়ে পরিচালনা পর্যদগুলো এ বিষয়ে তাদের কর্তৃত্ব হারাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন হলে আগের মত আর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে কমিশন পরীক্ষার মাধ্যমে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক নির্বাচন করবে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্যদ কেবল কমিশনের দেওয়া মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেবে।

দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্যদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া এতোদিন তাদের হাত দিয়েই শেষ হত, যা নিয়ে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।নাহিদ বলেন, অনেক সময় স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হয় না, স্বজনপ্রীতি হয়, উপযুক্ত লোকও নিয়োগ পায় না। অনেক সময় আর্থিক লেনদেনও হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।একটি পদের বিপরীতে এনটিআরসিএ-এর পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক যোগ্য প্রার্থী বেরিয়ে আসায় শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের’ এই সুযোগ তৈরি হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠনের পরে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বিলুপ্ত করা হবে। তবে এনটিআরসিএ-এর অধীনে এর আগে যারা সনদ পেয়েছেন তারাও বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের মেধা তালিকায় থাকবেন।নতুন ব্যবস্থায় বছর শেষ হওয়ার তিন মাস আগে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কতজন শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে তা সংগ্রহ করা হবে।

নির্দিষ্ট অঞ্চলের (উপজেলাভিত্তিক) লোককে ওই অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ দেওয়া হবে। কোনো উপজেলার কোনো বিভাগের জন্য যোগ্য শিক্ষক পাওয়া না গেলে নিয়োগ দেওয়া হবে পাশের উপজেলা থেকে।পাশের উপজেলায়ও যোগ্য শিক্ষক পাওয়া না গেলে ওই জেলা থেকে শিক্ষক নেওয়া হবে। আর জেলায়ও পাওয়া না গেলে ওই বিভাগে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।কমিশনের অধীনে শিক্ষক বাছাইয়ের সময় মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একজন ভাল মানুষ ভাল শিক্ষক নাও হতে পারেন। এজন্য বলার ভঙ্গি, বোঝানোর দক্ষতা দেখতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।স্বাধীন কমিশনে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। যারা নিরপেক্ষ, দক্ষ ও শিক্ষা বিষয়ে যাদের অবদান রয়েছে তাদের নিয়ে এই কমিশন গঠন করা হবে।বাংলাদেশে ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য কোয়ালিটি টিচার দরকার।তিনি জানান, কমিশন গঠনের বিষয়টি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি এক মাসের মধ্যে শেষ করারপ্রস্তুতি মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।

শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান জানান, স্বাধীন কমিশন গঠনের পরে এনটিআরসিএ-এর সনদের মেয়াদ থাকবে তিন বছর।এনটিআরসিএ’র অধীনে ১২টি পরীক্ষার মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৩২৯ জন সনদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ হাজার ৪২ জন শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।আর এনটিআরসিএ সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে এখনও কোনো চাকরি পাননি’ এমন প্রার্থীর সংখ্যা তিন লাখের মত বলে শিক্ষা সচিব জানান।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।