1420121971_672

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ অক্টোবর ২০১৫: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিশু নির্যাতন বন্ধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। সমাজ থেকে শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সুশাসন নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে হবে। শুধুমাত্র আইনের মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয় দূর করা সম্ভব নয়। শিশু নির্যাতন শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হলে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, মন্ত্রী শুক্রবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অধিবেশনে শুক্রবার একথা বলেন।

জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রসি-এর যৌথ উদ্যোগে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংসদীয় পদ্ধতিতে বিশেষ সচেতনবৃদ্ধিমূলক এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তাহমিনা বেগম এনডিসি, সেন্ট যোসেফ উ”চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ব্রাদার রবি পিউরিফেকশন সি.এস.সি,জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্র্যাক-এর জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক শীপা হাফিজা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর স¤পাদক নাছিমা আক্তার জলি প্রমুখ।

‘সুশাসন নয়, সামাজিক অবক্ষয়ই শিশু নির্যাতনের প্রধান কারণ শীর্ষক বিষয়ে সরকারি দল হিসেবে মুন্সীগঞ্জের বজ্রযোগিনী জে. কে উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিরোধী দল হিসেবে ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। নাহিদ শিশুদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য স্কুলে স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সরকার বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠন করেছে। এর মাধ্যমে তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠবে। তাদের মধ্যে নৈতিকতা, সততা, নিষ্ঠা ও মেধার সমন্বয়ে একটি সমৃদ্ধিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠবে।

তিনি শিশু নির্যাতনকারী শিক্ষকদের ‘শিক্ষক নামের কুলাংগার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এখন শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। তাদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই এখন আর তারা বেতনের দোহাই দিয়ে দায়িত্বে অবহেলা করতে পারবে না। দায়িত্বে অবহেলার জন্য শিক্ষকদেরও জবাবদিহি করতে হবে।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমাজে ছেলে – মেয়েদের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হলে মেয়েরা অবশ্যই এগিয়ে যাবে। তিনি মেয়েদের হয়রানি বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মেয়েদের যারা উত্যক্ত করে, তাদের ইভ টিজার বলবো না। এটি ‘আদুরে শব্দ’। আমি তাদের ‘অসভ্য’, ‘ইতর’ এবং ‘বদমাশ’ ছেলে বলি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিশু নির্যাতন বন্ধে সচেষ্ট রয়েছে। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক তৈরি করা এবং তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা। আমরা চাই, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

এজন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। আর এ পরিবর্তন আনয়নে নেতৃত্ব দিবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিচ্ছে। আমরা আশা করি, তারা জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠবে।বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস এবং আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম যৌথভাবে সাত দিনব্যপি শিশু সপ্তাহের আয়োজন করে। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাত দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। আজ ছিলো এর সমাপনী দিন।