news_img

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ অক্টোবর ২০১৫: নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের আদালত। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী শুক্রবার এই আদেশ দেন।এর আগে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়।ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, নূর হোসেনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

এদিকে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নূর হোসেনকে ভারত থেকে আনার ব্যাপারে সব ধরনের আইনগত জটিলতা শেষ হয়েছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা দুটি মামলার প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যান। এরপর কলকাতা শহরের অদূরে বাগুইহাটি নামের একটি আবাসনে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।বারাসাত পুলিশ জানায়, গত ১৮ আগস্ট এ মামলায় নূর হোসেনসহ তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আরও দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ সরকার নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়।হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।হত্যাকাণ্ডের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে নিরুদ্দেশ হন নূর হোসেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়।গতবছর ১৮ অগাস্ট নূর হোসেন এবং তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম ও খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ।সোমবার বারাসাতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রবীর কুমার মিশ্রের আদালতে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার আবেদন করেন সরকারী কৌঁসুলি শান্তময় বসু।

আবেদনে বলা হয়, নূর হোসেন বাংলাদেশের একজন পলাতক আসামি এবং তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ রয়েছে। বেআইনিভাবে ভারতে অবস্থান করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাকে বিচারের জন্য ফেরত চাওয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের এ মামলা তুলে নিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় সরকার।ওই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে কবে তাকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।