Sec. com

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ ঢাকা ২০১৫: সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’ ৭১৷ সংগঠনটির চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন৷শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এই কনভেনশন শুরু হয়৷ এতে বক্তারা বলেন, তাঁদের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়া৷ মানুষের সহযোগিতা ও আকাঙ্খার ফলেই এ বিচার শুরু হয়েছে৷কনভেনশনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করতে পারাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন৷ যুদ্ধাপরাধীমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম, এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে৷কনভেনশনের আহ্বায়ক ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য আমরা সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে ধন্যবাদ জানাই৷ আমাদের প্রত্যাশা সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের পর প্রধান সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ পরে স্বাগত বক্তব্য দেন ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব৷ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন প্রমুখ৷

সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাংলাদেশ গড়তে ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে আসার উপর জোর দিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক৷অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, বাংলাদেশ সকলের জন্য৷ সকলের কথাই আমাদের শুনতে হবে৷ সকলে যে যার যার ধর্ম পালন করতে পারে৷এমনকি যে ধর্ম মানেও না, দেশটি তারও৷ আল্লাহ কিন্তু তাকেও খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, প্রতিপালন করছেন- সে কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে৷গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন লেখক-ব্লগার খুন হয়েছেন, যারা লেখালেখির জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মধ্যে ছিলেন৷ তাদের হত্যার জন্য উগ্রপন্থিদেরই দায়ী করা হচ্ছে৷ সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আইন শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সব অপরাধীকেই বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন৷তিনি বলেন, শুধু যুদ্ধাপরাধ বলে কথা নয়, যে কোনো অপরাধীরই বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ আইনের শাসন তা-ই বলে৷একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ভার নেওয়া সাবেক সহকর্মীদের কাজে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন বিচারপতি খায়রুল হক৷তাদের কাছে আমাদের এই আশাই ছিল, তারা আশা পূরণ করতে পেরেছেন৷ তারা এটা আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটাই আমাদের আশা৷বিচারের ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে তথ্য প্রমাণই বেশি কার্যকর, তাও সবাইকে মনে করিয়ে দেন বিচারক জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়ে আসা খায়রুল হক৷ ইমোশন ছাড়া মানুষ হতে পারে না৷ কিন্তু আইনে শুধু ইমোশন নয়, তথ্য প্রমাণের যথাযথ উপস্থাপনও জরুরি৷স্বপ্নের শোষণমুক্ত সমাজ এখনও প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ এখনও চলমান বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, যারা রাইফেল চোখে দেখেনি তারাও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ কৃষকরা গেরিলাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল৷ তাদের বীরত্ব কোনো জেনারেল, ফিল্ড মার্শালের চেয়ে কম ছিল না৷তারা হয়ত কোনো পদক পাননি, তারা কোনো সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না, কিন্তু এটাই তাদের শ্রেষ্ঠ বীরত্ব যে, তারা যখন যুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা জানতেন না, সেখান থেকে ফিরে আসবেন কি না৷স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা নিয়ে বাঙালির দেশ গঠনের স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্বের কথাও উঠে আসে খায়রুল হকের কথায়৷সমগ্র বাংলাদেশের সকল জনগণ স্বাধীনতা চাই’ মন্ত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলে ছিল একজন ব্যক্তির অসাধারণ পরিশ্রম৷ তিনি ২৩ বছর ধরে বাঙালিকে যেভাবে গড়ে তুলেছেন, সেটার ওপর ভিত্তি করেই এটা হয়েছিল৷ বাঙালি জাতির আলাদা কৃষ্টি-সংস্কৃতি থাকার বিষয়টি তিনিই শিখিয়েছেন৷ এ কারণেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি৷উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চত্বর বা স্বাধীনতা স্তম্ভ সম্পূণরূপে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি৷আমাদের গৌরবোজ্জ্বল দিনটিকে স্মরণীয় করার জন্যই এটা দরকার৷ জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এর জন্য জোরালো ভূমিকা পালন করা দরকার৷অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ পাঠক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তারা কোনো কিছু পাওয়ার আশায় যায়নি৷ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি সামান্য সুযোগের জন্য এখন অনেকে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করে৷মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরা এবং এর বাস্তবায়ন করা৷

নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লা বীরউত্তম বলেন, শুধু কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে হবে না, তারা দেশের কোন কোন জায়গায় ঢুকে পড়েছে সেখান থেকে খুঁজে বের করতে হবে, বিচারের আওতায় আনতে হবে৷অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ইমাম মওলানা ফরীদউদদীন মাসঊদ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি জানান৷দুয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসি দিলেই হবে না, জামায়াতকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে৷ তারা ইসলামের নাম করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, এখন তারা ইসলামের নামে রাজনীতি করে৷ যদিও ধমের্র এমন রাজনৈতিক ব্যবহার ইসলামের পরিপন্থি৷স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব, শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জিয়াউদ্দীন আহমেদ৷