Driver_229414036

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ঢাকা ২০১৫: ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকরা রাজধানীর কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকটা অঘোষিত এ ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। রোববার সকাল ১০টা থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় অভিযানে মিরপুর তালতলা এলাকায় হিমাচল পরিবহনের এক বাসচালককে এক মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ ঘটনার পর পরিবহন শ্রমিকরা মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় জড়ো হয়ে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সড়ক বন্ধ থাকায় এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।ঘটনার পর রাজধানীর অন্যান্য রুটেও বাস বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। দুপুরের পর রাজধানীর গুলিস্তান থেকে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটে বাস বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর তালতলা থেকেও কয়েকটি বাস বন্ধ রাখার খবর পাওয়া গেছে।আকস্মিক এই পরিবহন ধর্মঘটে অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শত শত যাত্রীকে।ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যেসব গাড়ি ডিপোতে যাচ্ছে সেখান থেকে সেগুলো আর ফিরছে না। তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

জানা গেছে, রাস্তায় চলাচলকারী বাসগুলো ডিপোতে যাওয়ার আর না ফেরায় সড়কে বাসের সংখা কমে গেছে। অনেক যায়গায় গাড়িতে যাত্রী না তুলে বাসগুলো টার্মিনালে নিয়ে রাখা হয়।রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে বারবার বাসে উঠতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন উত্তরাগামী যাত্রী শিরিন আক্তার। আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে এসেছিলেন। পায়ে হেঁটে আগারগাঁও বাস টার্মিনালে এলেও পৌনে এক ঘণ্টা ধরে কোনো বাসে উঠতে পারছেন না তিনি।শিরিন আক্তার বলেন, বাস কম, যাত্রী অনেক বেশি। মানুষের ভিড়ে কোনো বাসে চড়া যাচ্ছে না। তবে হঠাৎ কী কারণে এ অবস্থা জানা নেই তার।বাস সংকটের কারণ অনুসন্ধানে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সামনে যাওয়ার পর দেখা যায়, উত্তরাগামী জাবালে নূর পরিবহনের সবগুলো বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানার চেষ্টা করলে জাবালে নূর পরিবহনের চালক মিজান বলেন, পরিবহন সমিতির লোকদের সঙ্গে পুলিশ খারাপ আচরণ করেছে।

যে কারণে সব বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজনকে পুলিশ মারধর করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাগজপত্র না থাকায় আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদফতরের সামনে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত মিরপুর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী হিমাচল পরিবহনের একজন চালককে জরিমানা করেছেন। এতে পুলিশের সঙ্গে বাসের মালিক-শ্রমিকরা বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। বিবাদের জেরে সড়কে বাস বন্ধ প্রসঙ্গে কাফরুল থানার ডিউটি অফিসার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান বলেন, বাসের কাগজপত্র না থাকায় আবহাওয়া অফিসের সামনে হিমাচলের চালককে জরিমানা করা হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করেছেন। রোববার দুপুর দেড়টার সময় নগরীতে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকটি বাস চলাচল করছে। মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মহাখালী, পূরবী, কালশী, বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে শত শত যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোনো বাস সড়কে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো মিরপুর এলাকায়ই যাত্রীরা চরমে দুর্ভোগে পড়েছেন।

মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, গাড়ির যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট চালককে সাজা দিয়েছেন। এ আদেশের প্রতিবাদে চালকরা বাস বন্ধ রেখেছেন রোববার বেলা ১২টার দিকে শুরু হওয়া এই অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েন মিরপুর-আজিমপুর-গুলিস্তান-মতিঝিল, গাবতলী-উত্তরা-আজিমপুর, গাবতলী-গুলশান-বাড্ডা রুটসহ মিরপুর ১১ নম্বর হয়ে চলাচলরত বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা।বিকেল ৪টার দিকেও এসব রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুর ১১ নম্বরে পূরবী সিনেমা হলের সামনে অবস্থান নেওয়া শতাধিক শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দিতে দেখা গেছে।শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তাদের কয়েকজন চালককে জরিমানা ও সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ট্রাফিক পুলিশ ‘নানা অজুহাতে’ নিয়মিতই তাদের হয়রানি করেন বলে অভিযোগ করেন আশফাকুল নামে এক শ্রমিক।তিনি বলেন, আমরা পেটের দায়ে কাজ করি। প্রতিদিনই নির্দিষ্ট হারে টাকা মালিকের হাতে দিতে হয়, দিতে না পারলে উল্টো আমাদের মজুরি কেটে রাখা হয়। এ অবস্থায় রাস্তায় গাড়ি নামালেই যদি জরিমানা গুণতে হয় তাহলে তো এই কাজ করে ভাত জোটানো সম্ভব না।এর আগে বেলা ২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি বিআরটিসি বাসসহ কয়েকটি গণপরিবহনের কাচ ভেঙে দেয়। প্রায় একই ভাষ্য মিলল গাবতলী থেকে রবরব নামে একটি বাসে করে আসা যাত্রীদের কাছেও।রাজিউন ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি তার দোকানের মালপত্র নিয়ে গুলশান যাচ্ছিলেন। পূরবী আসার পর শ্রমিকরা তাদের জোর করে নামিয়ে দিয়েছে।বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়া অনেক যাত্রীকেই পায়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।