53_Sajeeb+Ahmed+Wazed+Joy_prime+minister's+ICT+Affairs+Adviser_18102015_02

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ঢাকা ২০১৫: তথ্য-প্রযুক্তি খাতের যে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা (স্টার্টআপ) শুরু করেছেন, প্রথমে ব্যর্থ হলেও তাদের হাল না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে গুগল, ফেইসবুকের মত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকেই গড়ে উঠবে। রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ভবনে আয়োজিত কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নতুনদের সামনে নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পও তুলে ধরেন জয়।তিনি বলেন,লেগে থাকার মানসিকতা নিয়ে মেধা ও পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটালে সফলতা আসবেই।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিনে শৈশবের স্মৃতিচারণ করলেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।তিনি বলেন, আজ আমার ছোট মামা শেখ রাসেলের জন্মদিন। ৭৫ সালে আমার ছোট মামার বয়স ছিল ১০ বছর। আমার বয়স ছিল ৪ বছর।

তিনি বলেন, রাসেল মামা খুব সৌখিন ছিলেন। মামা তার সব খেলনা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতেন। আমি তার খেলনা নিয়ে দৌঁড় দিয়ে নানীর আচঁলের নিচে লুকাতাম।সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে। কয়েকজন খুনি বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সবাইকে ফিরিয়ে এনে আমরা আইনগতভাবে বিচার করবো। এ সময় সজীব ওয়াজেদ জয় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করেন।অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক তৈরি করার। সেটারই যাত্রা শুরু হলো আজ।তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে গুগল-ফেসবুক আনবেন। যেকোনো বড় কাজ করতে নিজের মেধা ও চেষ্টাই বড় কথা।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

জয় বলেন, আমরা চিন্তা করেছি দেশটাকে ডিজিটাল করবো। কিভাবে আমরা মানুষকে ডিজিটাল সেবা দেবো সেটা ভেবেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, প্রযুক্তি বিভিন্ন খাতে ডিজিটাল সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। আইটি ইন্ডাস্ট্রিজ করা আমাদের ইচ্ছা ছিল। আমি যখন ব্যাঙ্গালুরুতে ব্যাচেলর ডিগ্রি করি তখন সেখানে আইটি ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে ওঠে। আমার তখনই মনে হয়েছে বাংলাদেশেও করা যায়। সেখানে হলে বাংলাদেশে কেনো হবে না। আওয়ামী লীগ যখন প্রথম ক্ষমতায় আসে তখন এটার কথা চিন্তা করা হয়। কালিয়াকৈরে জমি দেখা হয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে এটা আর হয়নি।জয় বলেন, বিএনপি আইটির (তথ্যপ্রযুক্তি) দিকে নজরই দেয়নি। তাদের এ ধারণাও ছিলো না।তারা এটা বোঝেও না। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই আমরা উদ্যোগ নেই। কলিয়াকৈরে বড় আকারে হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ চলছে। আইটি বিষয়ে নিজের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে জয় আরও বলেন, শুধু চাকরি করে আমি শান্তি পাই না। আমি সিলিকন ভ্যালিতে স্টার্টআপ শুরু করি। নিজ উদ্যোগে একটা কিছু করবো বলে। তাই আমিও আপনাদের মতো একজন উদ্যোক্তা। একবার না পারলে দু’বার, তিন বার চেষ্টা করলে সফল হওয়া যায়। ভবিষ্যতের গুগল, ভবিষ্যতের ফেসবুক আপনাদের মধ্য থেকে উঠে আসবে।

আপনাদের যে অভিজ্ঞতা আছে সেটা আমারও হয়েছে। সিলিকন ভ্যালিতে একটা কথা আছে, কারো প্রথম স্টার্টআপ কখনো সফল হয়নি। তবে আবার চেষ্টা করতে হয়। একবারে পড়ে গেলে হয় না। উঠে দাঁড়িয়ে আবার চেষ্টা করতে হয়।একবার, দুবার, তিনবার- চেষ্টা করতে থাকলে, নিজের মেধা থাকলে সফলতা একসময় না একসময় আসবেই। এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা।যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তথ্য-প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, প্রথম কোম্পানি খোলার পর তিনি নিজেও সফল হতে পারেননি। তবে হাল না ছেড়ে একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় সাফল্য ঠিকই ধরা দিয়েছে।

আমি কিন্তু আপনাদের মতনই একজন উদ্যোক্তা। আমি বসে থাকতে পারি না। শুধু চাকরি করে আমি শান্তি পাই না। আমি চাই নিজের উদ্যোগেই কিছু করার।অনুষ্ঠানে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বরাদ্দ পাওয়া প্রথম চারটি কোম্পানিকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়াহয়। এ ছাড়া পার্কের চতুর্থ তলায় ‘স্টার্টআপ ইনকিউবেটরে জায়গা বরাদ্দের জন্য কানেকটিং স্টার্টআপস’ শীর্ষক একটি প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়।সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আপনাদের মধ্যে যে উদ্যোক্তারা আছেন, জনতা টাওয়ারে যারা প্রথম আসবেন, আপনাদের আমি শুভেচ্ছা জানাই যে, আপনাদের স্টার্টআপও ভালো করবে।

আশির দশকে ভারতের ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাঙ্গালোরে তখন সবে আমেরিকান কোম্পানিগুলো আসতে শুরু করেছে। তখনই ভারতের নিজস্ব আইটি স্টার্টআপগুলো গড়ে ওঠে ব্যাঙ্গালোরে। আর আজ ব্যাঙ্গোলোর কি হয়েছে আপনারা সবাই জানেন।বাংলাদেশেও তেমন কিছু করার স্বপ্ন তখন থেকেই দেখতে শুরু করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তিনি বলেন, ভারত বা মালয়েশিয়া আইটি খাতে যেভাবে এগিয়ে গেছে তেমনভাবে বাংলাদেশকেও এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করে, যার একটা অংশ ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হবে।

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ বিভিন্ন সিস্টেমগুলোকে ইতোমধ্যেই ডিজিটাইজ করা হয়েছে বলে জানান জয়আওয়ামী লীগ সরকারের মূল উদ্দেশ্য মানুষের সেবা করা। ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে আমরা দেশের মানুষের উন্নয়ন ও সেবা কীভাবে করতে পারি। তেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের চুড়ান্ত লক্ষ্য ছিল দেশে আইটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা। এটা খুবই আনন্দের যে, আজকে দেশের প্রথম সঢটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধন করতে এসেছি।

জয় জানান, জনতা টাওয়ারের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিতে চান। এদের মধ্যে যারা ভালো করবে তাদের জন্য প্রণোদনার কথাও জানান তিনি।তরুণ প্রজন্মকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টায় উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে বলেন, গুগল, ফেইসবুকসহ পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানিগুলো স্টার্টআপ হিসেবেই শুরু করেছিল।বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আর বেগম জানান, কালিয়াকৈর, মহাখালী, যশোর, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ আরও সাতটি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনে সরকার কাজ শুরু করেছে।আগামী এক বছরের মধ্যে কালিকাকৈরের হাইটেক পার্ক যাত্রা শুরু করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।