khoka1435230156

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ অক্টোবর ২০১৫: জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে ১৩বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ৭ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। খোকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে অবৈধভাবে অর্জিত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। এই রায় যখন হল, বিএনপির সাবেক ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক খোকা তখন ‘চিকিৎসার জন্য’ নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। তাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে। রায়ে বলা হয়, আসামি খোকা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য কর ফাঁকি দিয়েছেন।

রায়ে বলা হয়, আসামি খোকা ১০ কোটি পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকা ৫৪ পয়সা অসৎ উপায়ে অর্জন করে নিজ দখলে রেখেছেন।ওই টাকার সমমূল্যের খোকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। খোকা পলাতক থাকায় তাঁর আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে বা গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার তারিখ থেকে দণ্ডভোগের মেয়াদ ধরা হবে। খোকার বিরুদ্ধে দণ্ড পরোয়ানা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।রায়ে বলা হয়, দুর্নীতি দমন আইনে ২৬ (২) ধারার অপরাধে আসামি খোকাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২৭ (১) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক শামসুল আলম রমনা থানায় মামলাটি করেন। তদন্ত করে দুদক ২০০৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। গত বছরের ৩০ অক্টোবর খোকার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেন আদালত।

এই মামলার মোট ৪৩ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৪০ জনকে আদালতে উপস্থিত করে।রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামি খোকার আইনজীবী মহসিন মিয়া বলেন, খোকা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।দুদকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁরা আদালতে খোকার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন।রায়ে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত থকে বিচারক আদালতে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দিলেও খোকা তা পালন করেননি। তিনি সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করলেও উল্লিখিত টাকা নিজে দখলে রেখে অপরাধ করেছেন। এ কারণে তাঁর প্রতি নমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।রায়ে দুদক আইনের ২৬ এর ২ ধারা অনুযায়ী ‘মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কারণে’ খোকাকে ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। ওই টাকা দিতে না পারলে তাকে আরও এক মাস জেল খাটতে হবে।আর অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ২৭ এর ১ ধারা অনুযায়ী খোকার ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে ভোগ করতে হবে আরও ৬ মাসের সাজা।বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

ঢাকার সাবেক মেয়র খোকার পাশাপাশি তার স্ত্রী ইসমত আরা এবং ছেলে ইসরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেককেও মামলায় আসামি করা হয়।ওই বছর ১ জুলাই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা খোকার ছেলে ও মেয়ের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আর অভিযোগপত্র হওয়ার আগেই ইসমত আরা হাই কোর্টে গিয়ে তার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ পান।এরপর ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় খোকার বিচার শুরু হয়। অবশ্য তার মাস ছয়েক আগেই তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।এ মামলায় দুদকের পক্ষে মোট ৪০ জনের জবানবন্দি শোনে আদালত। তবে আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাননি খোকার আইনজীবী।গত ৪ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার মামলাটি রায়ের জন্য রাখেন।