ITaly citizen murder -1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০১৫: ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা খুনের ঘটনায় তিনজনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ সিজারের হত্যার ঘটনাস্থলের কাছের একটি বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ওই তিনজনকে শনাক্ত করে তারা৷ এদিকে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের এখনো সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন চার দেশের রাষ্ট্রদূত৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে তাঁরা বলেন, ব্যাপারটা (বিদেশি হত্যা) নিয়ে কী হতে যাচ্ছে,তা তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না৷বুধবার দুপুরে চার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷

সিজার তাবেলার খুনের মামলাটি ছয়টি কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ এর মধ্যে সিজারের ব্যক্তিগত, কর্মস্থলের ও গুলশানকেন্দ্রিক শত্রুতার জের এবং নারীঘটিত বিষয় রয়েছে৷ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে রাজনৈতিক কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা-ও বিবেচনায় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা৷এ ছাড়া ইতালিতে লোক পাঠানোর মতো কোনো কিছুর যৌক্তিকতা এ ঘটনার পেছনে আছে কি না,তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তবে তদন্ত দলগুলোর কাছে আশপাশের ভবনের সিসিটিভির ফুটেজই ছিল ঘটনা অনুসন্ধানের শেষ সম্বল৷ ঠিক এ ধরনের একটি সিসিটিভির ফুটেজ এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে৷ফুটেজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখেন, মোটরসাইকেল করে দুজন ও মুঠোফোনে কথা বলা অবস্থায় আরেকজন ঘটনাস্থল পার হচ্ছেন৷ ওই তিনজনকে আটক করতে পারলে সিজার তাবেলা হত্যা মামলার বিরাট অগ্রগতি হবে বলে তাঁরা মনে করছেন৷

গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান-২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের গভর্নর হাউসের দক্ষিণ পাশের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে ফুটপাতে দুই অস্ত্রধারী সিজারকে (৫০) রিভলবার দিয়ে পর পর তিনটি গুলি করে ৷ খুনিরাঅপেক্ষায় থাকা একজনের মোটরসাইকেলে চড়ে ৮৩ নম্বর সড়ক ধরে দ্রুত পালিয়ে যায়৷ পরে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে সিজারের মৃতু্য হয়৷ তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন৷

এদিকে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের এখনো সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন চার দেশের রাষ্ট্রদূত৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে তাঁরা বলেন, ব্যাপারটা (বিদেশি হত্যা) নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না৷বুধবার দুপুরে চার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ সকাল সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বার্ণিকাট এবং কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনোয়িত পিয়েরে লারামি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন ও অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনার এইচইমি গ্রেগ উইলক৷ দেড় ঘন্টা ব্যাপী বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রথমত তাঁরা আমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলেন৷ তবে নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের এখনো সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, ব্যাপারটা (বিদেশি হত্যা) নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না৷

কোন বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে, তা জানতে চেয়ে মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের বলেন, আপনারা তথ্য দেন কোন কোন জায়গায় আপনাদের অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সেসব জায়গা খুঁজে বের করবে৷ এর জবাবে রাষ্ট্রদূতেরা বলেন, যেসব জায়গায় শঙ্কা রয়েছে, সেসব জায়গায় তাঁদের নিজেদের গোয়েন্দারাই কাজ করছেন৷ এ সময় তাঁদের এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি এক সঙ্গে কাজ করি, তাহলে সমস্যাটা বেরিয়ে আসবে৷স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ ভবিষ্যতেও এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখা সম্ভব হবে কি-না সে ব্যাপারে তারা জানতে চেয়েছে৷তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মন্ধ নয়৷ তাই এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় পাবে না৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি-দুই বিদেশী হত্যায় আইএস বা কোনো জঙ্গি সংগঠনেরসম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি৷ এটি স্রেফ একটি ষড়যন্ত্র৷ এ বিষয়টি আমরা শিগগিরই পরিষ্কার করবো৷এক প্রশ্নের তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেছি৷ নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার সরকার তা তা করতে প্রস্তুত৷আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, তাদেরকে বলেছি- দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডে আপনাদের কাছে যদি কোনো সুনির্দষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদেরকে তা সরবরাহ করুন৷ তারা আমাদেরকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি৷তিনি জানান, তারা বলেছেন- আমাদের সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেয়ার বিধান নেই৷ বৈঠকে দুই বিদেশী হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়েও আলাপ হয়েছে৷ তবে খুব শিগগিরই দুই বিদেশী হত্যার রহস্য বের হবে৷

প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর রংপুরে মুখোশধারী দুবর্ৃত্তরা গুলি করে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা করে৷ এর ছয় দিন আগে ঢাকার কূটনীতিক এলাকা গুলশানে একইভাবে খুন হন ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লা৷