saka-mujahid

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ নভেম্বর ২০১৫: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এখন পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। রাষ্ট্রপতির কাছে আদৌ প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না, তা পরে জানাবেন বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তাঁরা।সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না তা জানতে চেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। দণ্ড থেকে বাঁচতে মানবতাবিরোধী এ দুই অপরাধীর সামনে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া ছাড়া নেয়ার মতো আর কোনো পদক্ষেপ নেই। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে কোনো এক সময়ে সিনিয়র জেলসুপার জাহাঙ্গীর কবির তাদের সামনে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। কেন্দ্রীয় কারাগারেরে একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর জবাবে সাকা-মুজাহিদ বলেছেন, তারা আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা না করে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। জবাবে সিনিয়র জেলসুপার বলেছেন, কারাবিধি অনুযায়ী এখন আর আইনজীবীদের সঙ্গে আপনাদের দেখা করার কোনো সুযোগ নেই। এ জবাব পেয়ে নিশ্চুপ ছিলেন সাকা-মুজাহিদ। এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে সাকা-মুজাহিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ও ডা. হাফিজ তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। শুক্রবার সকালে ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, দুজনই শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া কারাগার এলাকার দু’পাশের প্রবেশপথগুলোতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে রিকশা চলাচল করছে।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। তাঁরা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, সময় নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার আবারও তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে। তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আইন অনুযায়ী এ প্রক্রিয়ায় ধাপগুলো মেনে চলা হবে।জানতে চাইলে কারা উপ মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের কেউই প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেননি। শুক্রবার তাঁদের কাছে আবার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়।সাকা ও মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সব আইনি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন কেবল তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। এটা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।গত বুধবার সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের করা ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

এদিকে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর সাক্ষাৎ পেতে আবেদন নিয়ে কারাগারের ফটকে অপেক্ষায় রয়েছেন তার দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আল ফেসানী ও অ্যাডভোকেট জাকারিয়া ইসলাম।শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে তারা ওই লিখিত আবেদনটি নিয়ে কারাফটকে গেলেও বিকেল পর্যন্তও সেটি গ্রহণ করা হয়নি।দুই আইনজীবী জানান, সাকা চৌধুরীর সাক্ষাৎ পেতে আবেদন নিয়ে কারাগারে এসেছেন তারা। জুমার পর কারাফটকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ফটকের কারারক্ষীদের ইনচার্জ) আবেদনটি দিলে জানানো হয়, জেল সুপার নামাজে গেছেন। তিনি এলেই বিষয়টি জানানো হবে। তবে, ওই কর্মকর্তা আবেদনটি গ্রহণ করেননি। তারপর থেকে বিকেল পর্যন্ত কারাফটকে বসে আছেন তারা।হুজ্জাতুল ইসলাম ও জাকারিয়া ইসলাম জানান, তাদের আবেদনটি গ্রহণ করা হবে কি হবে না এ বিষয়েও কর্তৃপক্ষ কিছু বলছে না। এ কারণে তারা এখনও কারাফটকে বসে আছেন।সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না কিনা তা জানতে সাকা ও মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করেছেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও জেলার নেছার আলম।কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার সাকা-মুজাহিদের সঙ্গে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো এ বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা- তা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি দু’জনই।সূত্র আরও জানায়, প্রাণভিক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও পরিবার এবং তাদের আইনজীবীর মাধ্যমেই জানাতে চান বলে আভাস দিয়েছেন।এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির চূড়ান্ত রায় কারাগারে পৌঁছায়।রায় কার্যকরে সরকারের নির্বাহী আদেশ পেলেই কারা কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবারই কারা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল আইনজীবীদের সঙ্গে তার (মুজাহিদ) সাক্ষাতের আর কোনো সুযোগ নেই। তবে পরিবার চাইলে দেখা করতে পারে।এ ব্যাপারে শুক্রবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার আলম বলেন, আইন অনুযায়ী তারা (মুজাহিদের আইনজীবীরা) দেখা করতে পারেন না। তাই এখন পর্যন্ত তারা অনুমতি পাননি।শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অ্যাডভোকেট এইচ এম তামিম বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এখনও পর্যন্ত কোনো রেসপন্স করেননি। আইনজীবীরা তার (মুজাহিদ) সঙ্গে দেখা করতে পারবেন কি না সে ব্যাপারেও কিছু জানা যায়নি।তামিম বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদ তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সময় আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন। পরে আমিসহ ৫ আইনজীবী কারা অধিদপ্তরে একটি লিখিত আবেদন করি।এতে দেখা করার সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় উল্লেখ করা হয়।অ্যাডভোকেট তামিম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টা বাজার পরও কারা অধিদপ্তর থেকে আমাদের ডাকা হয়নি। ডাক পেলেই আমরা যাব, অপেক্ষায় রয়েছি।অন্য চার আইনজীবী হলেন, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান।

এদিকে সকাল সাড়ে ১১টার পর সুপ্রিম কোর্ট ও এর আশপাশের এলাকায় ধীরে ধীরে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ এলাকা কড়া নজরদারিতে রাখছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ এলাকায় সন্দেহভাজন যে কারুরই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে তাদের সাজার চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটের পর সিনিয়র জেলসুপার জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে একজন ডেপুটি জেলার ও একজন সহকারী জেলার তাদের রায় পড়ে শোনান।এর আগে রাত পৌনে ৯টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র সহকারী জজ আফতাবুজ্জমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রায়ের অনুলিপি নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। এরপর সেখানে ওই রায় ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। সাকা-মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচতে এ দুজনের কাছে এখন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর যদি ক্ষমা না পান তবে আইন অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে যেকোনো সময় দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।গত বুধবার সাকা ও মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের মধ্যে দিয়ে তাদের আইনি লড়াই শেষ হয়।তারা আবেদন না করলে বা রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা না পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ, যার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার।শুক্রবার সকালে তিনি বলেন, কাল ট্রাইব্য্যুনাল থেকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর আমরা তাদের পড়ে শুনিয়েছি। ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চেয়েছি।উনারা বলেছেন, সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন। উনাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য আজও আমরা তাদের কাছে যাব।এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁওয়ে খ্রিস্টান কোঅপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের এক অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সরকার আইনের বাইরে কিছু করবে না। আইনে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা আছে, তার সবই করা হবে। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান দুই আসামির কেউ প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন কি না।

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদউত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তারা মার্সি চাইতে পারে। চাইলে আমরা ব্যবস্থা নেব।মন্ত্রী বলেন, দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনো ধরনের অবনতি ঠেকাতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। দেশের মানুষ রিভিউ খারিজের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।বুধবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ে বৃহস্পতিবার বিচারকদের স্বাক্ষরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে অনুলিপি পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির রায়ের কপি নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রায়ের মূল অংশটি ইংরেজি থেকে বাংলায় তর্জমা করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার পর জ্যেষ্ঠ কারা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কনডেম সেলে দুই ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনানো হয় ওই রায়।তখনই জানতে চাওয়া হয়- তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না।এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন এক দিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়েছিল।পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর সাকা চৌধুরীর ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকরা প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে জানতে চান।জবাবে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তিনি বলেন, কী, মার্সি পিটিশন?

একই প্রশ্নে মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, তিনি (বাবা) বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের রাষ্ট্রের ও জনগণের অভিভাবক। তিনি একজন আইনজীবীও। সুতরাং তার কাছে আবেদন করব কি-না আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।মুজাহিদের আইনজীবী গাজী এইচ এম তামিম শুক্রবার সকালে বলেন, আমরা পাঁচ জন আজ সাড়ে ১০টায় কারাগারে গিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি ে েেয়ছিলাম। কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতি দেয়নি।আর সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান আলফেসানী বলেন, পরিবারের সদস্যরা আমাদের বলেছেন, প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আমরা আজ কারাগারে গিয়ে দেখা করার অনুমতি চাইব।এদিকে রিভিউয়ের রায় হওয়ার পর বুধবার থেকেই কারাফটকে জোরদার নিরাপত্তা রয়েছে। সাঁজোয়া যান নিয়ে পুলিশের অবস্থানের পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাবের টহলও। চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশীদ ও র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর উভয়ই বলেছেন, ফাঁসির দুই আসামি থাকায় তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলে চলতি বছরের ১৬ জুন চূড়ান্ত রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে।একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদেরের রায় এসেছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় এ বছর ২৯ জুলাই আপিলের রায়েও বহাল থাকে।তাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই দিনে, ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং কারা কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর তা দুই ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনায়।

এরপর দুই যুদ্ধাপরাধী ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বুধবার আদালত তা খারিজ করে দেয়।প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও আপিল বেঞ্চের অন্য তিন বিচারকের দেওয়া দুই রায়েই বলা হয়, আপিল শুনানির পর দেওয়া রায়ে কোনো ত্রুটি বিচারকদের নজরে আসেনি। সুতরাং দণ্ড পুনর্বিবেচনার কোনো কারণও তারা খুঁজে পাননি।দণ্ড কার্যকরের আগে দুই যুদ্ধাপরাধীর শেষ আইনি সুযোগ ছিল রিভিউ আবেদন। তা খারিজের মধ্য দিয়ে আইনি লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়।বুধবার রিভিউ খারিজের রায় হওয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।কারাবিধিতে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাত দিন সময়ের উল্লেখ থাকলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে তার কোনো সুর্নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া নেই। তবে এই আইনে কারাবিধি প্রযোজ্য হয় না।কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য আসামি যৌক্তিক সময় পাবেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, একটি দরখাস্ত লিখতে যে সময় লাগে- যৌক্তিক সময় তার চেয়ে বেশি হওয়া উচিৎ নয়।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে২০১৩সালের ১৭জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ওই দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।একই রায় এসেছিল সপ্তম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায়।চূড়ান্ত রায়ে চলতি বছরের ১৬ জুন আপিল বিভাগ মুজাহিদের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে প্রথম অভিযোগে আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। সপ্তম অভিযোগে তার সাজা কমিয়ে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।আর ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।তবে রিভিউ শুনানিতে মুজাহিদের আইনজীবী শুধু মৃত্যুদণ্ডের সাজাটি নিয়েই কথা বলেছেন।এটি আইনসম্মতভাবে হয়নি দাবি করে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর রায় এসেছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। সেখানে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।এর মধ্যে চার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।এ বছর ২৯ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আটটিতে দণ্ডাদেশ বহাল রাখে, একটিতে সাকা চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়।৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তার সর্বোচ্চ সাজা বহাল রাখা হয়।২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকলেও ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের সাজার ক্ষেত্রে আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয় চূড়ান্ত রায়ে।সাকা চৌধুরীর দাবি, একাত্তরে ২৯ মার্চ তিনি ঢাকা ছেড়ে করাচি চলে যান আর ফেরেন ১৯৭৪ সালে। আইনের ভাষায় একে বলা হয় ‘প্লি অব অ্যালিবাই’। অর্থাৎ, অপরাধ সংগঠনের সময় ও স্থানে আসামির উপস্থিত না থাকা। রিভিউ আবেদনের শুনানিতে তার আইনজীবী তেমনই দাবি করে আসছিলেন। এ জন্য পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে আনা একটি সার্টিফিকেট তারা আদালতে তুলে ধরেন। তবে অসামঞ্জস্য থাকায় আদালত তা গ্রহণ করেনি।