26-11-15-PM_AL Meeting-4

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনমুখী দল। এ জন্য আওয়ামী লীগ সব সময় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব সময় স্থানীয় সরকার পর্যন্ত দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে রাজনৈতিক দলগুলো আরো শক্তিশালী হতো।এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তো। প্রার্থীরাও ভোটারদের স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে বেশি মন দিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের জরুরি সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, এবার একটু দেখতে চাই নিজ দলের মার্কা নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় কিনা। এটি তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। শেখ হাসিনা কতিপয় পত্রিকার সমালোচনা করে বলেন, এর আগেও একই দিন একাধিক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। একদিনে জোড়া ফাঁসি কার্যকর এটাই প্রথম নয়। এর আগেও হয়েছে।তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে তো গণফাঁসি কার্যকরের করা হয়েছে। আর আমাদের আমলে তো মানবতাবিরোধীদেরকে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এই মানবতাবিরোধীরা একাত্তরে যে বর্বরতা চালিয়েছে তা আজ অনেকেই ভুলে গেছে।আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান সরকার স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াও স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের প্রতি এদের কোনো দরদ নেই। থাকার কথাও নয়।পঁচাত্তরের পর পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় বসে বাংলাদেশ ধ্বংসের সব চক্রান্ত করেছিল, এই দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়েছিল। এই বাংলাদেশ যেন দাঁড়াতে না পরে, সে অপচেষ্টা হয়েছিল।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ায় মনোনিবেশ করেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সাধ্যের সবকিছু করেন তিনি। পঁচাত্তরের পর পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় বসে স্বাধীন বাংলাদেশ ধ্বংসের সব চক্রান্ত করে। এই বাংলাদেশ যেন দাঁড়াতে না পারে সে অপচেষ্টা করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে নিয়োগ দেন, সরকারি চাকরি দেন। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানান।তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরের পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল পরাজিত শক্তি। এই সময়ে স্বাধীনতার চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই অবস্থা থেকে দেশকে টেনে তোলে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই। মানুষের প্রতিও কোনো দরদ নেই। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। এ কারণে তারা সহ্যও করে না যে, বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।এসময় দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের জন্য মানুষের জন্য রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ চায় বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নিরাপদ, অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এদেশের নিরাপত্তা অনেক বেশি। অথচ, এই বাংলাদেশকে অস্ত্র সরবরাহের পথ বানানো হয়েছিল। মন্ত্রী-এমপি খুন হয়েছিল।

বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানও কমেছে।এসময় সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পত্র-পত্রিকায় আসা একসঙ্গে দু‘জনের প্রথমবারের ফাঁসির খবরের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে দু’জনের ফাঁসি এই প্রথমবার হয়নি। জিয়াউর রহমানের সময় ১৯টি ক্যু হয়। সেসময় কারাগারে কারাগারে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি হয়েছে।তিনি পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত যদি দলীয়ভাবে নির্বাচন সবসময় হতে থাকতো, তবে সব রাজনৈতিক দল আরও শক্তিশালী হতো। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তো। অন্যদিকে প্রার্থীরাও ভোটারদের স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে বেশি মন দিতেন। শেখ হাসিনা বলেন, এই দলটি উপমহাদেশের প্রাচীন একটি সংগঠন। গণতন্ত্র মেনেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। দেশে সবরকম আন্দোলনের তালিকায়, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে-সংগ্রামের জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি রয়েছেন।তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেই দলীয়ভাবে নির্বাচনের এই উদ্যোগ। এতে সবাই থাকবে, সব দলের জন্য এটি ভালো হবে। নিজ নিজ দলও শক্তিশালী হবে। আওয়ামী লীগ নিজেও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়।আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি যোগ দেয়নি। তারা নির্বাচনকে বাতিল করতে অনেক কাজ করে গেছে। কিন্তু পারেনি সফল হতে। আসলে বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই হত্যার রাজনীতি করে আসছে। আবার তাদের মধ্যে একটা দ্বৈততা আছে- তারা স্থানীয় সব নির্বাচনে ঠিকই অংশ নিচ্ছে, কিন্তু জাতীয় কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এবার একটু দেখতে চাই নিজ দলের মার্কা নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় কিনা। এটি তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।