abdul-hamid

দৈনিকবার্তা-চবি, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬: তরুণ প্রজন্মই সমাজ পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার উল্লেখ করে তাদের স্বপ্ন দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সম্মিলিত প্রয়াস চালানোর আহ্বানও জানান রাষ্ট্রপতি।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি।রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্য দেন সমাবর্তন বক্তা ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

সভাপতির ভাষণে রাষ্ট্রপতি দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা তরান্বিত করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এসময় তরুন প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তাদের তথ্য প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করার তাাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি।তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিলো একটি সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ তরুন প্রজন্মই জাতির প্রাণ শক্তি, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাদের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তাদের তথ্য প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে।বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে আত্মসমালোচনাও থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।তিনি বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে থাকতে হবে নিরলস প্রচেষ্টা, আত্মসমালোচনা ও সহযোগিতা। থাকতে হবে কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ।অর্ধ শতক পেরিয়ে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তনে ৭ হাজার ১৯৪ জনকে বিভিন্ন ডিগ্রি দেওয়া হয়।

২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের এবং ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পিএইচডি, এমফিল, এমএস, চিকিৎসা বিজ্ঞান, নার্সিং ও সাধারণ ডিগ্রিধারীদের সনদ ও চ্যান্সেলর পদক দেওয়া হয়।সমাবর্তনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচর্য রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নতুন জ্ঞানের, যা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে অবদান রাখে।

বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে শতাধিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার পরিধি বেড়েছে। তবে উচ্চশিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে আমাদের অবিরাম তৎপরতা চালাতে হবে।নতুন গ্রাজুয়েটদের সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আজকের এই সমাবর্তন তোমাদের যেমন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি তোমাদের ওপর দায়িত্বও অর্পণ করছে। সেই দায়িত্ব পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি। মনে রাখতে হবে তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সমাজ ও রাষ্ট্রসহ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের অবদান রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের সৎ এবং ইতিবাচক ব্যবহার করবে। একথা তোমাদের মনে সদা জাগরুক থাকা চাই যে প্রকৃত জ্ঞান কল্যাণমুখী না হলে তা কখনোই জ্ঞান বলে বিবেচ্য নয়।

মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা স্মরণ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের সঠিক পথে গড়ে তোলারও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।এ তরুণ প্রজন্মই জাতির প্রাণশক্তি, সমাজ পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার। তাদের অমিত সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে। তাদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। কারণ স্বপ্ন না থাকলে সাফল্য আসে না।শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয়, পয়ঃনিষ্কাশন, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুরে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সামাজিক শৃঙ্খলা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।