????????????????
দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬:  আগামী ২০৫০ সালে দেশের বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য চালের প্রয়োজন হবে ৪৪.৬ মেট্রিক টন। আর গত পাঁচ বছরের চালের উৎপাদন বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে এ পরিমাণ চাল উৎপাদন করেও দেশে ২.৬ মেট্রিক টন চাল থাকবে। বিভিন্ন খাত ভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা যায়, বর্ধিত হারে চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি আছে নানা প্রতিবন্ধকতাও। ধান বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের সম্মিলিত কর্মপ্রয়াস অব্যাহত থাকলে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। শনিবার গাজীপুরে ব্রি মিলনায়তনে ২৪তম ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মশালা এবং ব্রি বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১৪-১৫ এর উদ্বোধনী সভায় বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা এ আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন।

ছয়দিন ব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ। ব্রির মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড.আবুল কালাম আযাদ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আনছার আলী।

অনুষ্ঠানে ব্রি, ডিএই, বারি, বিএআরসি, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। পাঁচ দিন ব্যাপী কর্মশালায় গত এক বছরে ব্রির ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, ব্রি গত দুই বছরে ১১টি উফশী ধানের জাতসহ বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে। উদ্ভাবিত এ জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা সহনশীল বোরো জাত ব্রি ধান৬১ ও ব্রি ধান৬৭, জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২ ও ব্রি ধান৭৪, ঐতিহ্যবাহী বালাম চালের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং সরু বালাম নামে পরিচিত জাত ব্রি ধান৬৩, সরাসরি বপনযোগ্য আগাম আউশ ধানের জাত ব্রি ধান৬৫, খরা সহনশীল ও উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ বোরো জাত ব্রি ধান৬৬, বোরো মৌসুমের আদর্শ উফশী জাত ব্রি ধান৬৮ এবং কম খরচে আবাদযোগ্য উফশী জাত ব্রি ধান৬৯ ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রি উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে আরো আছে, দেশে কৃষক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ফলন দিতে সক্ষম ব্রি ধান২৯ এর সমপর্যায়ের গুণাগুণ স¤পন্ন ব্রি ধান৫৮ এবং আমন মৌসুমের জনপ্রিয় বিআর১১ এর সমতুল্য ব্রি ধান৪৯। তবে এটি ব্রি ধান২৯ এর চেয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগাম। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলার লক্ষ্যে ব্রি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত নয়টি লবণ-সহিষ্ণু, দু’টি জলমগ্নতা সহিষ্ণু, সাতটি খরা সহিষ্ণু, একটি খরা পরিহারকারী, দু’টি শীত সহনশীল এবং চারটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিভিন্ন ধরনের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী আরো ধানের জাত উদ্ভাবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ধানের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য তারা ভিটামিন এ এবং আয়রন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত সরু ও সুগন্ধযুক্ত বোরো মৌসুমের জাত ব্রি ধান৫০ বা বাংলামতি রফতানি সম্ভাবনাময়। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতের চাষাবাদ হয় এবং এর থেকে আসে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯১ ভাগ।

ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. শাহজাহান কবীর কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জানান, ব্রি এ পর্যন্ত চারটি হাইব্রিডসহ ৭৭টি উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে তার মধ্যে বেশ ক’টি প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টি গুণ সম্পন্ন। আশা করা যাচ্ছে, এগুলো কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় হবে এবং সামগ্রিকভাবে ধান উৎপাদন বাড়বে।

ছয় দিন ধরে চলবে দুটি কর্মশালার বিভিন্ন কারিগরী অধিবেশন। দিনব্যাপী প্রথম কর্মশালায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের অর্জন ও অগ্রগতির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। পাঁচদিনব্যাপী ব্রি বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় গত এক বছরে ব্রির ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হবে।