রিজভী

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের প্রতিবাদ কোনোভাবে সহ্য করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিয়ত হুমকিতে জাতি আজ আক্রান্ত। দেশবাসীর কাছে তিনি যেন এখন হুমকি কন্যা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হুমকির মুখে দেশের মানুষের অধিকার আজ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ভোট, নির্বাচন, কথা বলা, সমালোচনা ও প্রতিবাদ,লেখা, প্রকাশ করা, চলাফেরা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের সব স্বাধীনতা দ্বিতীয় মেয়াদের শেখ হাসিনার বাকশালে বন্দী হয়েছে।তিনি দাবি করেন, সরকারি প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্থাগুলোও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সুইচের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।বিএনপি নেতার অভিযোগ, সরকার জনরোষে উৎখাত হবে। তাই আগাম প্রতিক্রিয়ায় গুম, খুন, নিখোঁজ করা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ভয়াবহ সামাজিক নৈরাজ্য, গণতন্ত্রের বিনাশ হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ফাঁসে আটকে যাওয়ার ভয়ে তাই সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা বেআইনিভাবে জোর করে ধরে রেখেছে। বিএনপির এ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, দেশবাসীকে প্রতিনিয়ত এ হুমকির অর্থ হচ্ছে একদলীয় দুঃশাসন প্রলম্বিত করার স্বপ্নযাত্রা।

তিনি বলেন, অন্ধ হুমকি ও উৎপীড়নের রাজত্বে সরকারি প্রশাসনিক সংস্থা ও সাংবিধানিক সংস্থাগুলোও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সুইচের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত নায়েব- মোসাহেবরা উপহাস আর তিরস্কারে লজ্জিত হন না।বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্বাচন কমিশন জাতির অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ভাগ্যলক্ষ্মীকে বিতাড়িত করেছে, যেন এ জাতির ভাগ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনদিন না আসে। এই কমিশনকে এখন গণতন্ত্র ধ্বংসের এক অবিস্মরণীয় ব্যঙ্গ চিত্র হিসেবে জনগণ অবলোকন করছে। আসলে এই মোসাহেব নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ করা আর অরণ্যে রোদন করা একই কথা। জনগণ যদিও সবকিছু দেখছে-শুনছে, তথাপি কমিশনের চরিত্রটা জনগণের নিকট তুলে ধরি।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি স্বাধীন সাংবিধানিক নির্বাচন কমিশনের মর্যাদার প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েছে বর্তমান কমিশন। তাই তাদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ উত্থাপিত হলেও তারা বেহায়ার মতো আচরণ করছে। সরকারের ইচ্ছা পূরণে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনারদের যদি ন্যূনতম শরম থাকতো তাহলে তারা অনেক আগেই পদত্যাগ করতেন।বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে এখন গণতন্ত্র ধ্বংসের এক অবিস্মরণীয় ব্যঙ্গ চিত্র হিসেবে জনগণ দেখছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।এদিকে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, আগামী মার্চে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির মহাসচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে সারাদেশের কাউন্সিলরদের চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য একটি ধারা আছে, যেখানে কাউন্সিলররা বর্তমান গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করতে পারেন। গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য আমরা মহাসচিব বরাবর প্রস্তাব দিতে চিঠি দিয়েছি কাউন্সিলরদের।রিজভী বলেন, কাউন্সিলরদের দেয়া প্রস্তাবগুলো গঠনতন্ত্র সংশোধনের উপকমিটিতে যাবে। কমিটির সদস্যরা দলের চেয়ারপারসনকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন হবে।কাউন্সিলকে সফল করতে একাধিক উপকমিটি গঠনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দু-একদিনের মধ্যে এসব কমিটি গঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।