বিএনপির গঠনতন্ত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদের অনুমোদন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষমতাবলে বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ নামে নতুন একটি পদ যুক্ত করা হয়েছে। কাউন্সিলের আগে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনের সঙ্গে ওই পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলকে সামনে রেখে একটি প্রস্তুতি কমিটিসহ ১১টি উপ-কমিটি করেছে বিএনপি। নতুন এসব কমিটিতে দলের শীর্ষ নেতারা পৃথকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচন কমিশনও গঠন করেছে দলটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। মির্জা ফখরুল জানান, ‘স্থায়ী কমিটির সভায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনের সঙ্গে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের লক্ষ্যে দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার অনুরোধ করা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। গঠনতন্ত্রের ১৯-ক ধারায় চেয়ারপারসনকে এই অধিকার দেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, বিএনপিতে এতোদিন মৌখকভাবে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদটি থাকলেও তা গঠনতন্ত্রে যুক্ত ছিল না। এই পদটিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারম্যার নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। সদস্য করা হয়েছে অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ (ভাইস চেয়ারম্যান) এবং সদস্য সচিব ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আমিনুল হককে (সদস্য নির্বাহী কমিটি)। কমিশন যথাসময়ে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করাসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

কাউন্সিলকে সার্বিকভাবে সফল করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চেয়ারম্যান করে একটি প্রস্তুতি কমিটি এবং ১১টি উপকমিটি করা হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। সব উপকমিটির আহ্বায়করা প্রস্তুতি কমিটির সদস্য হবেন বলেও জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, তাকে অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধন উপ-কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ শৃঙ্খলা ও সেবাদান উপ-কমিটি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ কমিটি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপ-কমিটির দায়িত্বে প্রবীণ সাংবাদিক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক শফিক রেহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে প্রকাশনা উপকমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন স্বাস্থ্য ও সেবা উপকমিটি, দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে দফতর ও যোগাযোগ উপকমিটি, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকছেন। তবে অর্থ কমিটির দায়িত্ব এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দাবি তোলা হয়। ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ কারণে এই মামলা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মামলাটি সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপি নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে এবং সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতেই এই মামলা হয়েছে।’ তিনি গ্রেফতার হওয়া বিএনপির সব নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম,, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।