স্বপ্নের ফাইনালে খেলা হল না বাংলাদেশের

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: এ মাঠেই ২০১২ সালে একবারে ট্রফি ছোঁয়ার দূরত্বে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। যে এশিয়া কাপের ফাইনাল বাংলাদেশের ক্রিকেটে ২ রানের দুঃখ’ হয়ে থাকবে চিরকাল। একটা বৈশ্বিক ট্রফি চাই, কিংবা বড় টুর্নামেন্টের একটা শিরোপা-বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার সেই দূরত্বটা যুবারাও ঘোচাতে পারল না। ২ রানটাই এবার ‘দুই ধাপে’র অলঙ্ঘনীয় এক দূরত্ব হয়ে থাকল। সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিল স্বাগতিকেরা। যে ব্যাটিংটা যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল এবার, সেটাই হতাশ করল। ২২৬ রানের পুঁজি নিয়ে তবুও লড়াই করল বোলাররা। কিন্তু সেই লড়াইটাই সান্ত্বনা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে না পারার সান্ত্বনা আসলে হয়? ৮ বল আর ৩ উইকেট হাতে রেখে জিতে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৪ সালে সর্বশেষ যেবার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হয়েছিল, সেবারও ফাইনালে গিয়েছিল তারা। সেবার অবশ্য রানার্স আপেই সান্ত্বনা খুঁজতে হয় পাকিস্তানের কাছে হেরে। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ভারত।

স্বপ্নের ফাইনালে খেলা হল না বাংলাদেশের। যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি পর্ব সেরেছিল, সেই দলটির কাছেই বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে স্বপ্ন ভঙ্গ হল মেহেদি হাসান মিরাজ বাহিনীর। পক্ষান্তরে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩ উইকেটের জয়ে এক যুগ পর যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ক্যারিবীয় যুবারা।ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ওভারে ২২৬ রান করে অলআউট হয়। জবাবে স্প্রিঙ্গার ও হেটমায়ারের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে। তাই আগামী ১৪ ফেব্র“য়ারি ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এমন গোমট আবহাওয়ায় সাজ-সকালে টস জিতেও ব্যাটিং নেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে তাই কিছুটা প্রশ্ন থাকছেই। এরপরও প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলাটাই এখন বাংলাদেশের বড় অর্জন হিসেবে লেখা থাকছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে গ্র“প চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেছিল বাংলাদেশ। কোয়ার্টারে নেপালকে হারিয়ে অপরাজিত হিসেবে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লাল-সবুজের দল। গ্র“পপর্ব ও সেমিফাইনালে সাফল্যই বাংলাদেশের প্রত্যাশার পারদটা উপরে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সেমিফাইনালের ব্যর্থতায় সেই প্রত্যাশা এবার আর পূরণ হল না। ফাইনালে পা রাখতে ২২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম কয়েক ওভারেই অনেক রান তুলে নেয়। পাঁচ ওভারে ৪৪ রান হওয়ার পর প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। এরপর দলীয় ৫৬ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকেই সাজঘরে ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। পরে কিসি কার্টিকে শাওন এবং অধিনায়ক হেটমেয়ারকে সাইফুদ্দিন ফেরান। তবে চার উইকেট পতন সত্ত্বেও ক্যারিবীয় যুবারা জয়ের সহজ পথেই হাঁটছিল। ৩৮তম ওভারে হঠাৎই শাওনের জোড়া আঘাতে আশা জাগতে থাকে বাংলাদেশের। শেষ দিকে সাইফুদ্দিনের বলে মাইকেল ফ্রিও (১২) আউট হলেও সেই আশা আলোর মুখ দেখেনি। শুরুতে হেটমেয়ার ও শেষে স্প্রিঙ্গারের ব্যাটিং নৈপুণ্যই ক্যারিবীয়দের ফাইনালে পৌঁছে দেয়। স্প্রিঙ্গার ৮৮ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কার মারে ৬২ এবং হেটমেয়ার ৫৯ বলে সাত চার ও এক ছক্কার মারে করেন ৬০ রান। বাংলাদেশের সালেহ আহমেদ শাওন তিনটি এবং সাইফুদ্দিন ও অধিনায়ক মিরাজ দুটি করে উইকেট নিলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেননি।

ইমলাচকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফিরিয়ে মিরাজ প্রথম উইকেট নেন। এ ছাড়া দ্রুততার সঙ্গে রান তুলে ২৫ বলে ৩৮ রান করা আরেক ওপেনার গিরডন পপকেও বোল্ড করেন তিনি। শাওনের তৃতীয় তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন কার্টি। পরে ৬০ রান করা হেটমেয়ারকে নিজের বলে সাইফের ক্যাচে পরিণত করেন সাইফুদ্দিন। ৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় ও পঞ্চম বলে শাওন সাজঘরে পাঠান জাইদ গুলি ও কিমো পলকে। এতে কিছুটা আশা জেগেছিল। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফ্রিও আউট হলেও তিন উইকেটে ম্যাচ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে মেহেদি হাসান মিরাজের অধিনায়কোচিত ইনিংসে ভর করে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২২৬ রান করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। মাত্র ১১৩ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটে লড়াইয়ে ফিরে যুব টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয় যুবাদের ২২৭ রানের জয়ের লক্ষ্য বেধে দেয় স্বাগতিকরা।

বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যুব বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলনেতা মিরাজ। তবে কুয়াশায় ঘেরা মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মাত্র ২৭ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার পিনাক ঘোষকে হারায় যুব টাইগাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে হোল্ডারের বলে রানের খাতা খোলার আগেই পলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাইফ হাসান সাজঘরে ফেরেন। আলজারি জোসেফের বলে গুলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।তাদের পথ ধরেই হেটেছেন দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান জয়রাজ শেখ, নাজমুল হাসান শান্ত ও জাকির হাসান। দলীয় ৫৮ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যক্তিগত ১১ রানে আউট হন শান্ত। জনের বলে হেটমায়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আর দলীয় ৮৮ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ৩৫ রান করা জয়রাজ শেখ। সবশেষ ২৮তম ওভারে দলীয় ১১৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন জাকির। স্প্রিঙ্গারের বলে জয়রাজ ও হোল্ডারের বলে জাকির বোল্ড হন।

এরপর পঞ্চম উইকেট উইকেট জুটিতে এখন ব্যাট করছেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। অধিনায়ক মিরাজ হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এই জুটিরও ৮৫ রানে ভর করেই মোটামুটি লড়াকু স্কোর গড়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ ৭৪ বল থেকে সাত চারের মারে করেন ৬০ রান। সঙ্গী সাইফুদ্দিন ৫৫ বলে তিন চারের মারে করেন ৩৬ রান। দলীয় ১৯৮ রানে গুরুত্বপূর্ণ এই জুটি ভাঙে। পরে নির্ধারিত ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২২৬ রান। ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে কিমো পল তিনটি এবং স্পিঙ্গার ও হোল্ডার দুটি করে উইকেট নেন।