ভোট বর্জন, কারচুপি-অনিয়ম ও সহিংসতায় ভোট গ্রহণ

কারচুপি, ভোট বর্জন, অনিময় ও গোলযোগের মধ্যে দিয়ে প্রথম ধাপের ৭১৭ ইউনিয়ন পরিষদ (ই্উপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হয়েছে ভোট গণনা। এই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপির ২৭ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্তত ৩৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দু’জন, জাতীয় পার্টির একজন এবং স্বতন্ত্র চার প্রার্থী রয়েছেন। দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃণমূলের ইউপি নির্বাচন। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ করেছে বিএনপিসহ অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকটি দল। জাতীয় পার্টি ইসিতে এসে কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপির অভিযোগ করে গেছে। মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। বিভিন্ন গোলযোগ ও অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল থেকে বিভাগওয়ারি ইউপি’র ভোটের খোঁজ খবর নিয়েছেন চার নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ ঢাকা ও ময়মনসিংহ, আবদুল মোবারক রংপুর ও রাজশাহী, জাবেদ আলী সিলেট ও চট্টগ্রাম এবং শাহনেওয়াজ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ভোট পরিস্থিতি মনিটরিং করেছেন।কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা অনিয়ম আর সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপে ৩৪টি জেলার ৭১৭ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট। এখন চলছে গণনা।মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা থেকে পর্যায়ক্রমে রাতের মধ্যেই সব ইউপির বেসরকারি ফলাফল পাওয়া যাবে।ভোটে কেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভোটদানে বাধা আর বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় অন্তত ৪০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ার কথা স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন।খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ঝালকাঠিতে। এতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।এর আগে সোমবার পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় ১১ জনের প্রাণহানি ও প্রায় ১ হাজার মানুষ আহত হয়।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সহিংসতার কারণে অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সাময়িক বন্ধ করা হয়। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে কোনো ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়নি। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই ও নানা অভিযোগের মধ্যে শেষ হয়েছে ৭১২ ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ।মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের ভোট গণনাও শুরু হয়েছে।প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, অনিয়ম ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হয়।বিচ্ছিন্নভাবে এসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হলেও পুরো ইউনিয়নে ভোট স্থগিতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ মনে করছেন, প্রথম পর্বের নির্বাচনে ৬০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়বে বলে মনে করছেন তারা।দলীয় প্রতীকে প্রথম এই ইউপি ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, প্রথম পর্বের সাড়ে ৭ হাজার কেন্দ্রে সহিংসতা-সংঘর্ষ তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।উৎসব আমেজে ভোট হয়েছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দাবি করলেও বিএনপি অভিযোগ করেছে, ভোট জালিয়াতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট ছিল বলে ইউপি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তারা উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরেছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যেতে থাকে ভোটের চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাড়তে থাকে সহিংসতা। কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির অভিযোগে একের পর এক কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও ভোটাররা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। তাদের অভিযোগ, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ব্যালট পেপারে অবাধে সিল মারতে দেখা গেছে।ইসি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টির মতো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। সারাদিনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বাংলামেইলকে বলেন, ভাটের আগে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সেটুকু সহিংসতার শঙ্কার কথা বলা হয়েছে, আসলে ততটা হয়নি। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সবখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশালের একাংশ ও নোয়াখালী এলাকার কিছু জায়গায় সংঘর্ষ- গোলযোগ হয়েছে।এরই মধ্যে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপি ভোটে ইসির ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়। এছাড়া দলটি বিকেল সাড়ে ৪টায় ইসিতে এসে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিতে পারে, আমরা এ নিয়ে মন্তব্য করবো না। যেসব অভিযোগ পাচ্ছি, সারবত্তা থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।প্রথম ধাপের শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি, জাল ভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি। পৌরসভার মতো ইউপি নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না বলে মনে করছে দলটি।এর আগে নির্বাচনী তফসিলে প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় বাতিল হয়েছে ও পিছিয়ে গেছে ৩১টির ভোট। ২২ মার্চ ৭১৭ ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে মোট ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী প্রথম ধাপের ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।নির্বাচনে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৭১৭ জন, বিএনপির ৬১৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ২৪৬ জন।উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে ৭ হাজার ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন। প্রথম ধাপে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ছিল ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন।

লক্ষ্মীপুর ঃ চাকামইয়া ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা এবতেদায়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রে তিন শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা-তান্ডব ভাংচুর চালিয়েছে। এসময় মাদ্রাসার দরজা-জানালা- বেড়া কুপিয়ে তছনছ করা হয়। ভাংচুর করা হয় দু’টি ব্যালটবাক্স। ছিনিয়ে নেয় একটি ব্যালট ভর্তি বাক্স। পরে পুলিশ প্রায় এক ঘন্টা পরে ব্যালট বাক্সটি উদ্ধার করে। মঙ্গলবার ভোট চলাকালে আনুমানিক পৌনে নয়টার দিকে এ হামলা তান্ডব চলে। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার একাডেমিক সুপারভাইজর মো. মনিরুজ্জামান জানান, তিন-চার শ’ সন্ত্রাসী চল, বন্দুক, লেজা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে সাত রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। কলাপাড়া থানার ওসি জিএম শাহনেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এতে বিদ্ধ হয় মেম্বার প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক বুদাই, খলিল, শাহজালাল ও সাইদুল ইসলাম। এছাড়া আরও কয়েক জনকে কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরা হলেন আরিফ, ফরিদ, নাসির, একিন, মালেক, হাবিবুর রহমান, মিলন। মোট ১১জন আহত হয়। প্রশাসন ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহন স্থগিত করে দিয়েছে। কেন্দ্রটিতে মোট ১৫২২ জন ভোটার রয়েছেন। এদিকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার সময় হাতেনাতে পুলিশ গ্রেফতার করলে আবুল হোসেন নামে এক নৌকা সমর্থককে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আনিছুর রহমান এক বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন। পুর্বচাকামইয়া কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে টিয়াখালীতে ভোট কেন্দ্র দখল। এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া মারধরসহ প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারার অভিযোগ এনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী আক্কাস উদ্দিন দুপুরে নির্বাচন বর্জন করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মশিউর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এছাড়া নীলগঞ্জ ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কেন্দ্রগুলো ঘুরে ভোটারদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ৭০ বছর বয়সী সালেহা বেগম জানান, সূর্য ওঠার পর থেকেই লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। একই বক্তব্য ৮০ বছরের আব্দুর রব মিয়ার। নিশানবাড়িয়া কেন্দ্র এ দৃশ্য অবলোকন করা গেছে। টিয়াখালী এবং চাকামইয়া ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া নীলগঞ্জ ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৩ জন আহত হয়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় ৫জনকে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া দুপুরের দিকে কমলনগর উপজেলার দক্ষিণ চর ফলকন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালায় ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের দায়ে ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহন স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে কমলনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সাম্মেলনের মাধ্যামে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন। এছাড়া একই অভিযোগ এনে রামগতির চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল পাশা ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন।সকাল ৯ টার দিকে কমলনগরের তোরাবগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দু’মেম্বার প্রাথীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৪ জন আহত হয়। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্পেনের ঘটনা ঘটে। এসময় ওই কেন্দ্রে জাল ভোট প্রধানের অভিযোগে দুইজনকে আটক করেছে জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট।সকাল ১১টার দিকে চর ফলকন ঈদগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দু’মেম্বার প্রাথীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৬ জন আহত হয়।এছাড় দুপুর ১২টার দিকে চর ফলকন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রাথীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংধর্ষের ঘটনায় ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি রায়হানসহ ৩জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত রায়হান ও আব্বাসকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজিরহাটের জাগরণী কিন্ডার গার্ডেন ভোট কোন্দ্রে জাল ভোট প্রধানের দায়ে ৩ জনকে আটক করেছে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

দু’ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অনেকটাই শান্তিপূর্ন ভাবে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তবে পুরুষ ভোটারের চেয়ে মহিলা ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল বেশী। এ ৬টি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৫ জন ও সাধারন সদস্য পদে ১৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।এদিকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষে ভোট কেন্দ্রসমূহে ব্যপক সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্টাইকিং ফোর্স হিসাবে কমলনগর উপজেলায় বিজিবি ও রামগতি উপজেলায় কোস্টগার্ড সদস্যরা টহলে ছিলেন। এ নির্বাচনে ৬ ইউনিয়নের ৫৬ টি কেন্দ্রে এবার ৯২ হাজার ৯শ’ ৬৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা কথা ছিল। এর মধ্যে পুরুষ হচ্ছে ৪৬ হাজার ৬শ’ ১৪ জন এবং মহিলা ভোটার হচ্ছে ৪৬ হাজার ৩শ’ ৫৩ জন।

পাবনা ঃ ভোট কেন্দ্র দখল, পক্ষে বিপক্ষের সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, জোরপূর্বক ব্যালট পেপারে সিলমারাসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।অপরদিকে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করেছেন এক বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামসুর রহমান সমেজ।পাবনার বেড়া উপজেলার দুটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্ততঃ ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর মাসুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপির দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী শামসুর রহমান সমেজ। পুরান মাসুমদিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।মঙ্গলবার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চাকলা ইউনিয়নের নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুশিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।মোজাম্মেল বলেন, সকালে মাসুমদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিরোজ হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপির শামসুর রহমানের সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশের ৫/৬টি বাড়িতে ভাংচুরও চালানো হয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান এই নির্বাচনী কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুর রহমান সোমেজ বলেন, ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করার প্রতিবাদ করায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিরোজ হোসেনের লোকজন তার সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। তারা আমাদের লোকজনকে মারধর করে এবং আব্দুল আওয়াল খা নামে আমার সমর্থকের বাড়িসহ আশপাশের আরও ৫/৬ টি বাড়ি ভাংচুর করে। ঘটনার পর শামসুর রহমান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বলে রিটানিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল জানান। এ বিষয়ে জানতে মিরোজ হোসেনের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।তবে তার বড় ভাই ফিরোজ হোসেন বলেন, স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থী আয়েল খা ও আমজাদ মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। বিষয়টি ঠিক হয়ে গেছে। ভোট গ্রহণও স্বাভাবিক ভাবে চলেছে বলে তিনি দাবী করেন।

এদিকে, চাকলা ইউনিয়ের নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এক পোলিং এজেন্টকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান। এর জেরে ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।এ ব্যাপারে চাকলা ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী আব্দুস সালাম বলেন, আমার লোকজনকে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের লোকজন ভোটারদের তাদের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। এছাড়া কুশিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিরাগতদের দিয়ে ভোট কেটে নেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন প্রকার লাভ হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার পক্ষে ভোটার বেশি থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বি ঈশ্বার্নিত হয়ে এ সব প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া একই ইউনিয়নের তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান।এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ভোট গনণা চলছে বলে সংশি।লষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

বরিশাল : অনিয়মের অভিযোগ তুলে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দড়িচর খেজুরিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মালেকতিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফা রারি (আনারস) স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের লোক। সাংসদের প্রভাব নিয়ে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিচ্ছে তার লোকজন।বেশকিছু কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও করেন আব্দুল মালেক।সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না, তাই আমি এ নির্বাচন বর্জন করলাম।এ ব্যাপারে মোস্তাফা রারি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজয় নিশ্চিত জেনে এ অভিযোগ করেছেন।সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ বর্তমানে এলাকায় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন?

কুমিল্লা : কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেয়াবাদ ইউনিয়নে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।মঙ্গলবার সকালে বড়কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।আহত সোহেল আহম্মেদ (২৫) ও ইসমাইল (২৮) ঘোষঘর এলাকার বাসিন্দা। তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এছাড়া সংঘর্ষের পর ধানি ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।বড়কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাহফুজ রহমান জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় বহিরাগতরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালেট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মারধর করে। পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।এরপর এ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শহিদ জানান, ফতেয়াবাদ ইউনিয়নের সদস্য পদপ্রার্থী কবির হোসেন ও বিল্লাল হোসেনের সমর্থকের মধ্যে গোলাগুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।পরে অতিরিক্ত র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি সদস্য, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান তিনি।এ কারণে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয় বলেও জানান এসআই শহিদ।এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সর্থকদের সংঘর্ষের দুপুরে ধানি ইউনিয়নের খিরাইকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম একথা জানান।

সাতক্ষীরা: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় ভোট শুরুর আগেই দুটি কেন্দ্র দখল করে বাক্স বোঝাই, এবং এক কেন্দ্রে বোমাবাজির খবর পাওয়া গেছে।মঙ্গলবার ভোরে কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবাহ ভোটকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক আওয়ামী নেতা ও তার ছোটভাই আহত হয়েছেন।আহত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস ও তার ছোট ভাই রুহুল আমিনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পাটকেলঘাটা থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, রুহুল কুদ্দুস ও রুহুল আমিনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাগবাহ ভোট কন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকের ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরছিল। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার তাদের বাধা দিতে চাইলেও তারা তা উপেক্ষা করে।পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে কুদ্দুস ও আমিনের পায়ে গুলি লাগে বলে জানান ওসি। এদিকে কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের এক প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটের আগের রাতে জোর করে ব্যালট ছিনিয়ে নেয় বলে খবর পাওয়া গেছে।রোববার গভীর রাতে ইউনিয়নের কলাটুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার গৌতম ঘোষ বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসলামুল হক জোর করে ব্যালট পেপার কেটে বাক্স ভরছিলেন।এদিকে কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের কাজীরহাট কলেজ সংলগ্ন এলাকায় রাতে পরপর কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হামিদ জানান।আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হুমকিতে তার পক্ষে কোনো পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালনে রাজি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।একই উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন অভিযোগ করেছেন, রোববার রাতে তার বাড়ির সামনেও পাঁচটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।