Gazipur 16 April 2016 M A Mannan Sent to Jail-1

গাজীপুরে যাত্রীবাহি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মামলায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানসহ গ্রেফতারকৃত ১০জনের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজাতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার বিকেলে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মোঃ ইকবাল মাসুদ এ আদেশ প্রদান করেন।

গাজীপুরের কোর্ট ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কেপি পরিবহনের যাত্রীবাহি একটি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে অধ্যাপক এমএ মান্নানকে প্রধান আসামী করে জয়দেবপুর থানার এসআই মো. আহাদুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মান্নানসহ মোট ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় অধ্যাপক এমএ মান্নানসহ ১০জনকে ওই রাতে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা হতে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে গ্রেফতারকৃতদের গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে আসামীদের জামিন প্রার্থনা করলে শুনানী শেষে আদালতের বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর মধ্যে অধ্যাপক এমএ মান্নানকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১তে এবং কারাগারের সুপারকে কারা বিধি মোতাবেক ডিভিশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন। আদালত বাকীদের গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবীগণ জানান, গ্রেফতারকৃতরা হলো- অধ্যাপক এমএ মান্নানের ভাই বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির, কাউলতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ডিলার, রফিজ উদ্দিন, সমর্থক শাহিন আলম, হাবিবুল্লাহ, এসএম ওয়াসিম, সব্দুল আলী, মো. আলম ও গাড়ি চালক মো. মিজানুর রহমান মিজান। শুক্রবারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামীদের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি পন্থী ১১জন কাউন্সিলর রয়েছেন।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, গাজীপুর সিটির মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান শুক্রবার তার নিজ বাসভবন সালনায় এক-দেড়’শ নেতাকর্মী বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরো অস্থিতিশীল করার জন্য গাজীপুর চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছে। এ গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশ শুক্রবার রাত আটটা ২০ মিনিটের দিকে চান্দনা চৌরাস্তায় গিয়ে দেখেন বিএনপির দুস্কৃতিকারীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চান্দনা স্কুলের সামনে কেপি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এসময় ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় ৯ জনকে আটক করা হয়। পরে ধৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের নির্দেশে তারা বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং অধ্যাপক এমএ মান্নান কালিয়াকৈরের উদ্দেশ্যে চলে যায়। পরে ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় ধাওয়া করে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ফাঁড়ির সামনে থেকে মেয়র মান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ অধ্যাপক এমএ মান্নানসহ ১০জনকে জয়দেবপুর থানায় আনা হয়। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে গ্রেফতারকৃতদের গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে মামলার শুনানীতে অংশ নেন গাজীপুর বারের সভাপতি ড. শহিদুজ্জামান, সাবেক সভাপতি সুলতান উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক স্পেশাল পিপি মোস্তফা কামালসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত কতৃর্ক অভিযোগপত্র গৃহিত হলে ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। তার অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে গত ২ মার্চ অধ্যাপক মান্নান জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। কারা মুক্তির পর গত ৩১ মার্চ এ সাময়িক বহিস্কারাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এম এ মান্নান। মেয়র মান্নানকে দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত সোমবার ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। পরে গত বুধবার সুপ্রীম কোর্টে আপিল করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন।