22-04-16-Ashugonj_Shipping Strike-1

নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘটের মধ্যে মালিকদের উদ্যোগে ঢাকার সদরঘাট থেকে সীমিত পরিসরে লঞ্চ ছাড়লেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক লঞ্চ ছাড়ায় এই ভোগান্তি বলে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।শুক্রবার সদরঘাটে লঞ্চের অপেক্ষায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অনেক নারী ও শিশুকেও তাদের মধ্যে দেখা যায়। লাগাতার নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটে নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা কাটেনি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনায় বসার কোন উদ্যোগ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, বেতন-ভাতার বিষয়টি মালিক ও শ্রমিকদের বিষয়। দু’পক্ষ চাইলে সরকার মধ্যস্ততা করতে পারে।এদিকে ধর্মঘটি শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মালিকরা ঘোষণা দিয়ে নৌযান চালানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে অনঢ় নৌযান শ্রমিকরা।

মালিকদের ঘোষণার পর দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি রুটে বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও সীমিত যাত্রী নেয়ে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চঘাট থেকে যাত্রীবাহি কিছু লঞ্চ ছেড়ে গেছে। বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছে একটিমাত্র লঞ্চ। দক্ষিণাঞ্চলের কোন রুটে নৌযান চলাচল করছে না বলে দাবি শ্রমিক নেতাদের। সকালে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বরিশালের উদ্দেশ্যে গ্রিনলাইন লঞ্চটি ছেড়ে গেলেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া যাত্রীদের।বিআইডাব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ন আহমেদ জানান, সকালে গ্রিনলাইন সময় মতো ছেড়েও গেলে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে শুধু এমভি ফারহান-১ নামের একটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।স্বাভাবিক সময়ে বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে সকালে যেসব লঞ্চ সদরঘাটে আসে সেগুলো পরবর্তী যাত্রা করে বিকালের পর থেকে। তবে সকালে সদরঘাট থেকে চাঁদপুর ও তার আশপাশের লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়।

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকালের পালায় চাঁদপুরের কোনো লঞ্চই যাত্রী নিতে সদরঘাটে না ভেড়ায় বরিশাল রুটের এমভি ফারহান-১ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে এই একটি মাত্র লঞ্চে যাত্রীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেককেই অপেক্ষায় থাকতে হয়।এছাড়া লঞ্চটিতে চাঁদপুরগামী লঞ্চের মতো কেবিন না থাকায়ও অনেককে পিছিয়ে যেতে হয়। তাদের একজন শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়।গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ইচলিতে যাওয়ার জন্য স্ত্রী রাবেয়াকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সদরঘাটে আসেন শরিফুল।ঘাটে এসে লঞ্চ না দেখে হতাশ হয়ে পড়ি। পরে মাইকে এমভি ফারহান-১ এর যাওয়ার ঘোষণায় আশাবাদী হলেও কেবিন না পাওয়ায় আর যাওয়া হয়নি। ঘাটেই অপেক্ষা করতে থাকি।পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চে ওঠেন তিনি।সকালে সদরঘাট থেকে পাঁচ থেকে ছয়টি লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা থাকলেও সূচি অনুযায়ী শুধু এই লঞ্চটি ছেড়ে যায় বলে ঘাট কর্মকর্তারা জানান।মজুরি বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে বুধবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে নৌযান ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘটের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে লঞ্চ চালানোর ঘোষণা দেয় মালিকপক্ষ।

তবে ওই দিন সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে ১৯টি লঞ্চ, যেখানে অন্যান্য দিন দেশের দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যে ৫০টির বেশি লঞ্চ ছেড়ে যায় বলে বিআইডাব্লিউটিএর পরিদর্শক হুমায়ন জানান।এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী নিয়ে সকালে সদরঘাটে এসেছে ১১টি লঞ্চ, যেখানে অন্যান্য সময় অর্ধশতাধিক লঞ্চ ঢাকা আসে।মালিকপক্ষ ঘোষণা দেওয়ার পরও সকালে সদরঘাটে লঞ্চ কম থাকার কারণ জানতে চাইলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক মালিক বলেন, শিডিউল অনুযায়ী চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহনে না আসায় এটা হয়েছে।তবে দিনের পরের ভাগে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সদরঘাট লঞ্চঘাটে শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যে রুটে দু’টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতো, সে রুটে একটি দিয়ে জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সকাল ৮টায় সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি গ্রীন লাইন।

বেলা ১০টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ফারহান। একই সময়ে ধুলাচরের উদ্দেশ্যে ছেড়েছে আরেকটি লঞ্চ। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন এ সময়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায় ১২টি লঞ্চ। ধর্মঘটের কারনে একইসময়ে শুক্রবার ছেড়ে গেছে মাত্র ৩টি। লঞ্চ পাওয়ার আশায় ঘাটে যাত্রী সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে দেখা গেছে।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিওটিসি) সহকারি মহাব্যবস্থাপক শাহ বরকতউল্ল্যাহ জানান, ধর্মঘট বিবেচনায় সংস্থা দুটি স্টিমার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যায় চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্টিমার দু’টি হচ্ছে এমভি মধুমতি ও ল্যাপচা।

লঞ্চঘাটে কথা হয় বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা যাত্রী মো. এম এ বাবরের সঙ্গে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার লঞ্চ এমপি টিপু-৭-এ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এসময় ধর্মঘটি শ্রমিকরা লঞ্চ ছাড়তে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ শ্রমিকদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়। তবে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা ছিল হাতেগোনা।বিআইডব্লিওটিএ’র সদরঘাট নৌবন্দরের যুগ্ন পরিচালক (যান্ত্রিক) জয়নাল আবেদিন এ প্রতিবেদককে জানান, অনান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা ছিল বেশ কম।তিনি জানান, বিকেল থেকে বেশি সংখ্যক লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিআইডব্লিওটিএ নিজেদের নিরাপত্তা বাহিনির পাশাপাশি পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

জয়নাল আবেদিন আরো জানান, শুক্রবার সকাল থেকে সদরঘাটে বিভিন্ন ন্তব্য থেকে ১২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ভিড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৮টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে সদরঘাট থেকে ৬৫ থেকে ৭০টি ছেড়ে যায়। ধর্মঘট নিয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির প্রধার উপদেষ্টা মো. গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ শ্রমিকদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে মালবাহী, তেলবাহী কোস্টার ও কার্গো শ্রমিকদের।তিনি বলেন, নৌযান চলাচলে বড় ক্ষতি করার জন্য এ ধর্মঘট ডাক দেয়া হয়েছে। এ ধর্মঘট যাত্রীবাহী লঞ্চের নয়, তারপরও ধর্মঘটি মালবাহী শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আমাদের সঙ্গে বসলে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।ধর্মঘটের মুখে দেশের দুই সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মঙলায় পণ্য খালাস, পরিবহন এবং গভীর সমুদ্রে মৎস আহরণ বন্ধ রয়েছে।

নৌযান ধর্মঘট নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন রুটে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও পণ্য পরিবহন নিয়ে সংকট অব্যাহত রয়েছে।

চট্টগ্রাম: শ্রমিক ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন শুক্রবারও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস, পরিবহন এবং ঘভীর সমুদ্রে মৎস আহরন বন্ধ রয়েছে। কর্ণফুলি নদীর ১৬ ঘাটের কার্যক্রমও কার্যত বন্ধ।সকালে কর্ণফুলি ঘাট গুদাম মালিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, দাবি না মানলে ধর্মঘটন চলবে। সদরঘাট থেকে কোন নৌযান চলছে না বলেও দাবি করেন তিনি।

বাগেরহাট: নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে স্থবির মঙলা বন্দর। বন্দর থেকে নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আর ইউ আহমেদ জানান, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে আউটার অ্যাংকরেজে নোংগর করে থাকা মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস এবং নৌপথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো বন্ধ হয়ে আছে। পণ্য উঠা-নামা বন্ধ থাকায় বন্দরের রাজস্ব আয়ও কমছে।
বরিশাল: ধর্মঘটের মধ্যেও সীমিত পরিসরে লঞ্চ ছাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাতে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। শুক্রবারও ছাড়বে বলে ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।স্থানীয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র যুগ্ন-সম্পাদক একিন আরী মাস্টার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার উদ্দেম্যে ছেড়ে লঞ্চের মাস্টার রাজ্জাক মল্লিকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া: শ্রমিক ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে আশুগঞ্জ নৌবন্দর। এতে এ বন্দরে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী শত শত কার্গোজাহাজ।পুর্বাঞ্চলীয় কার্গো মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হাসান বাংলামেইলকে জানান, কার্গো শ্রমিকদের বেতন-ভাতা মাত্র কিছুদিন আগে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে বেতন বাড়ানোর দাবি অযৌক্তিক বলেও জানান তিনি।

পটুয়াখালী: শ্রমিক ধর্মঘটে অচল পটুয়াখালী লঞ্চঘাট। দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার বিকেলে সীমিত পরিসরে লঞ্চ চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঘাট কর্মকর্তারা। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে বুধবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্ট ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন।