Rajibpur pictur 23.04.2016 (2)

‘চাল ভাজা খাইতে খাইতে যদি নারী গোয়ালেতে যায়, গুটি বসন্ত হয়ে মাগো গরু মারা যায়’- গৃহস্তের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গবাদিপশুর রোগবালাই সারাতে মঙ্গলগীত গেয়ে কিছুদিন আগেও হিন্দু সম্প্রদায়ের কোয়ালি পেশার অসংখ্য লোক জীবিকা নির্বাহ করতেন। গোয়াল ঘরে সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে তারা ফসলের মৌসুমে গৃহস্তের কাছ থেকে ধান ও গম তুলে আয়ের সংস্থান করতেন। রৌমারী ও রাজীবপুর অঞ্চলের স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে গুরকুনাথ বা গরুর ঠাকুর বলা হয়ে থাকে।

এই গুরকুনাথরা কাঁধে ভার নিয়ে সকাল থেকেই ছুটে চলে এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে। তার ভারের একদিকে থাকে গাধার পিঠে বসানো কথিত শীতলা দেবির মূর্তি। এই মূর্তিকে বসন্তবুড়ি বা গোরখনা বলা হয়। মূর্তিটিতে থাকে সিঁদুর মাখানো। তার ভারের অপর প্রান্তে থাকে একটি ডালা। এ ডালায় গুরকুনাথ গৃহস্তের বাড়ি থেকে উঠানো ধান গম জিনিসপত্র রাখেন।

২০/২২ বছর আগেও এ অঞ্চলে এই গুরকুনাথদের সরব উপস্থিতি ছিল। তারা হিন্দু-মুসলমান সবার বাড়িতেই যেতেন। গোয়াল ঘরের দরজার সামনে বসে একটি কাঁসার বেল বাজিয়ে সুর করে গরুর মঙ্গলগীত গেয়ে থাকেন। এই গীতের মধ্যে থাকে গৃহস্ত বাড়ির মেয়েদের উদ্দেশ্যে কিছু সাবধানবানী। যেমন, ‘স্বামীর আগে রান্ধে বাড়ে স্বামীর আগে খায়, ভরা কলসের জল মাগো তরাসে শুকায়। চুল ছাড়া দিয়ে যদি গোয়ালেতে যায়, ওই বাড়ির মেয়ে মাগো লক্ষ্মীছাড়া হয়। ভেজা কাপড়ে যদি নারী গোয়ালেতে যায়, ওই বাড়ির গরুর মাগো শনির ব্যারাম হয়’- এ রকম আরো কয়েকশ’ শ্লোক তারা সুন্দর আবৃত্তি করে থাকেন।

এখন আর সেই সব গুরকুনাথদের এতদঞ্চলে আর তেমন একটা দেখা যায় না। উপজেলা সদরে এখন পশু চিকিৎসালয় হয়েছে। মানুষ এখন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সর্ম্পকে অনেক সচেতন। তাছাড়া আগের মতো আর গোয়াল ভরা গরু, গোলাভরা ধান নেই কৃষকের ঘরে। ফলে সেই গুরকুনাথদের পেশা বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ এলাকায় কোনো গুরকুনাথের বসবাস নেই। তবে এখনও হাতে গোনা দু-চারজন গুরকুনাথদের দেখা মেলে এলাকায়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গুরকুনাথরা ধান ও গমের মৌসুমে রৌমারী রাজীবপুরে চষে বেড়ায়। তাদের কথা বলে জানা গেছ, দু’একজন যা এ পেশা আকড়ে ধরে আছেন তা শুধু মায়ার টানে। রাজীবপুর উপজেলার বটতলায় আজ শনিবার সকালে কথা হয় বাবলু কাপালি’র সাথে। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ৭দিন আইছি এ এলাকায়। এখন আর আগের মতো ইনকাম হয় না ফলে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এ পেশায়।