27-04-16-PM_Parliament-3

দেশে যখন জরুরি অবস্থা ছিল, তখন বিদেশে অর্থ পাচার বেশি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, অনেকেই বিদেশে ব্যবসা করেন, টাকা দেশে আনেন না।তবে বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা বেশি ঘটেছে ২০০৭ সালে দেশে যখন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল।বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হুসাইনের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার নানা প্রকার দরিদ্র-বান্ধব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, সার্বিক প্রচেষ্টায প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমে আসছে। সাথে সাথে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আগের তুলনায় কমেছে। দেশের সর্বস্তরের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ও জনগণের জীবন উন্নত করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করেছে।তিনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।২০১৫-১৬ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০-১৫ অর্থবছরে দেশে ও বিদেশে মিলে মোট ১০.৩৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি আয় বৃদ্ধিকরণ এবং কৃষি উৎপাদনের উপাদান (সার, বীজ, সেচের পানি, বিদ্যৎ, পল্লী অঞ্চলে রাস্তাঘাট) ও প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নে দরিদ্র মানুষের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে দারিদ্র্য দূরীকণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে মনে করে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে চরম দরিদ্র জনগণের জীবনের ঝুঁকিগুলো মোকাবেলার মাধ্যমে তাদের চরম দারিদ্র্যের বলয় থেকে মুক্ত করা। খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০১০ থেকে দেখা যায় মাত্র ২৪.৫ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ কভারেজ এর অন্তর্ভুক্ত।তিনি বলেন, দারিদ্র্য হ্রাসে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্জিত গতিশীলতা এবং হত দরিদ্রদের জন্য টেকসই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, অতি দরিদ্র ও দুঃস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টেস্ট রিলিফ, একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ন, গৃহায়ণ, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছ গ্রাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচির পাশাপাশি ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ড প্রভৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের মধ্যে বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদায প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং রূপকল্প ২০২১ ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে নীতি ও কৌশল নির্ধারণপূর্বক একটি জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সর্বমোট ১৪০টি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এ সকল কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৫৪৬ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ১২.৭২ শতাংশ এবং জিডিপি’র ২.১৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে এ বরাদ্দের প্রায় সম্পূর্ণই ব্যয়িত হবে এবং যা দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে বের হতে সহায়তা করবে। আগামীতে এ বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার নানা প্রকার দরিদ্র-বান্ধব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের কারাগার সমূহের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ (পুরুষ কারাগার-১)-এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে যা ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিলে উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে বন্দি স্থানান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০টি কারাগার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, মেহেরপুর, নাটোর, নীলফামারী, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ জেলা এবং হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয়) চালু করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের চলমান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দিনাজপুর জেলা কারাগারকে বর্তমান স্থানে রেখেই সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে পুনঃনির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, মাদারীপুর ও পিরোজপুর জেলায় নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন ও কাজ আরম্ভ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে ৪টি কারাগারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় ১০০ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ খুলনা জেলা কারাগারকে অন্যত্র স্থানান্তর করে আরও বৃহৎ আকারে নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদন ও কাজ প্রায় শতকরা ২২ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারকে বর্তমান স্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করে বৃহৎ পরিসরে নতুনভাবে নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন ও কাজ প্রায় শতকরা ৯৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।তিনি বলেন, কারা প্রশিক্ষণ একাডেমী, রাজশাহী নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, কারা বিভাগকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করণার্থে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে কারাগারের ভেতরে বসে অভিনব কায়দায় মোবাইল ফোন ও অন্যান্য নিষিদ্ধ দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য লাগে স্ক্যানার, বডি স্ক্যানারসহ অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ সকল যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে কারা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় ও সমৃদ্ধশালী হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলা কারারক্ষীদের ভালভাবে থাকার আবাসন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কারা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ৩ হাজার ১০৭টি নতুন পদ সৃজনের অনুমোদন প্রদানের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ বন্দিদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দানের জন্য প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা সারাদেশে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও সারাদেশের কারাগারগুলোতে হস্তশিল্প, তাঁত শিল্প, পাট শিল্প, কার্পেট ও পাপোষ শিল্প, কাঠ শিল্প, এলুমিনিয়াম শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প, মোজা শিল্প, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প, প্রেস ও বাঁধাই শিল্প, বেকারি শিল্প, টেইলারিং ও কামার শিল্প এবং অন্যান্য বিভিন্ন শিল্পের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, বন্দিদের আইনগত সহায়তা প্রদান। কারাগার থেকে মুক্তির পর কাজের সুবিধার্থে সেলাই মেশিন সরবরাহ ইত্যাদি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সরকার নানা ধরনের উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশোধনমূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।