আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আলামত পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। ডিএমপিকে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের তিনটি পিকআপ ভ্যান হস্তান্তরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডিএমপিকে তিনটি গাড়ি হস্তান্তর করা হয় ।হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। ডিএমপির সদর দপ্তরে এই অনুষ্ঠান শেষে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, তাঁরা জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন, নাকি আর্থিক কোনো বিষয়ের কারণ রয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখন সুস্পষ্ট মন্তব্য করার মতো সময় হয়নি।

আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম’-এর হত্যার দায় স্বীকার সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ধরনের যত ঘটনা ঘটে, তার দুই-এক ঘণ্টার মধ্যে বিদেশ থেকে এ নিয়ে দায় স্বীকারের কথা বলা হয়। এর যৌক্তিকতা এবং বাস্তবতা কতটুকু আছে, তা ভেবে দেখা দরকার। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত সোমবার কলাবাগানের একটি বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডিতে কর্মরত ছিলেন। মাহবুব ছিলেন লোকনাট্য দলের সঙ্গে যুক্ত। দুর্বৃত্তদের কোপে আহত বাড়ির প্রহরী পারভেজ মোল্লা এবং কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ উদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা ও অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। নিহত জুলহাজ মান্নানের ভাই মিনহাজ মান্নান হত্যা মামলাটি করেছেন। সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র আইনে মামলা করেছেন ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের কাছে দায়িত্ব পালন করা উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ। দুটি মামলায়ই অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের সূত্র বলেছে, পালিয়ে যাওয়ার সময় এক দুর্বৃত্তের কাছ থেকে উদ্ধার করা ব্যাগ থেকে পাওয়া একটি দেশি ও একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি,চাপাতি, একটি গামছা, একটি লুঙ্গিসহ নয় ধরনের আলামত পাওয়া গেছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে পুলিশ। এক পুলিশ সদস্য ব্যাগটি উদ্ধার করেন। পালাতে থাকা দুর্বৃত্তদের আটকাতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হন এএসআই মমতাজ।

রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হত্যাকাণ্ড তদন্তে পুলিশের চৌকস অফিসাররা কাজ করছেন। হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের টিম, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সিআইডি ও থানা পুলিশ সমন্বিত হয়ে কাজ করছে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় এক দুর্বৃত্তকে ঝাপটে ধরেন পুলিশের এএসআই মমতাজ। কিন্তু তাকে ধরে রাখা যায়নি। তবে ওই দুর্বৃত্তর কাছ থেকে ব্যাগ ও মোবাইল রেখে দিতে সক্ষম হন এএসআই।সেখানে একটি পিস্তল ও মোবাইলসহ আরও কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এগুলো এখন প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

দুর্বৃত্তরা যে রাস্তা দিয়ে পালিয়েছে ওই রাস্তায় একটি ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, সারাদেশের জঙ্গি সংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে হয়েছে ১১টি। সারাদেশের ১৬টি মামলায় আসামিদের শনাক্ত করা গেছে। এরমধ্যে পাঁচটি মামলার চার্জশিট আমরা দিয়েছি।

আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, কিছু বিপথগামী লোক দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার জন্য এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। এদের দমন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চারদিকে মাঠে নেমে কাজ করছে।

জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন,এমন ঘটনায় আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। পুলিশের প্রতি আস্থা রাখুন। আমরা অতীতের বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড, গোপীবাগের সিক্স মার্ডার এবং খিজির খান হত্যাকাণ্ড প্রায় একই ধরনের। এতে হত্যাকারীরা আলাদা হলেও তাদের উদ্দেশ্য কিন্ত একই।

আনসার আল ইসলামের দায় স্বীকারে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যখনই ঘটে, তার ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়। এই দায় স্বীকারের বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। তদন্ত না করে এ বিষয় কিছুই বলতে পারবো না। দায় স্বীকারের বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে, তদন্ত করে দেখবো।