01-05-16-Storm In City-3

পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে বৃষ্টি অনেক সময়ই রাজধানীবাসীর কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বৈশাখের দাবদাহ যখন চারপাশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করছে তখন তো বৃষ্টির প্রার্থনাই করবে সবাই। নগরবাসীও চাতক পাখির মতো এক মুহূর্ত বৃষ্টির জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিল। অবশেষে সেই মেঘভাঙা বৃষ্টিই তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভিজিয়ে গেল গোটা শহরকে। শীতল করে দিয়ে গেল চাককের শুষ্ক ঠোঁট। রোববার পৌনে ৭টার দিকে হঠাৎ করেই রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হলে মুহূর্তেই যেন মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। কাঠফাটা গরমে ঘামে নেয়ে বাড়ি ফেরার পরিবর্তে আজ অনেকেই ভেজা শরীরে ঘরে ফিরবেন- এমনটি ভেবেই অনেককে উল্লসিত দেখা গেছে। কয়েক দিনের টানা তাপদাহের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত এই বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত, এমনকি শিলা বর্ষণেরও সম্ভাবনা হয়েছে।আগামী কয়েকদিন এমন আবহাওয়া বজায় থাকবে বলে জানানো হচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।

রোববার ঢাকার তাপমাত্রা ছিলো ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।বাতাস বইছিলো পূর্ব দিক থেকে। তবে বাতাসের আদ্রতা মাত্র ৩৪.৫৪ শতাংশ হওয়ায় মানুষের শরীর ঘেমেছে কম।এদিন সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া মেঘলা থাকলেও অসহনীয় গরম ছিলো ঠিকই।গত কয়েকদিনের শুষ্ক আবহাওয়ার ধারাবাহিকতায় রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বৃষ্টি হলে সোমবার সর্বোচ্চ তাপামাত্রা নেমে দাঁড়াবে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে সর্বনিম্ন তামপাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রির বেশি কমবে না।এক্ষেত্রে সোমবারের তামপাত্রা ২৬ থেকে ৩৩ ডিগ্রি এবং মঙ্গলবারের তাপমাত্রা ২৪ থেকে ৩৪ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ২৬ থেকে ৩৩ ডিগ্রি, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করবে দিনের তাপমাত্রা। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিন শনিবার তাপমাত্রা থাকবে ২৮ থেকে ৩৬ ডিগ্রির মধ্যে।

অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই দুপুরের দিকে রমনার নির্জন আমের ছায়ায় বসেছিলেন পেপ্রমিকযুগল। আগের দিন থেকেই শ্রমিক দিবসের ছুটিতে সারা দিন ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালের সূর্য মাথার উপরে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিতে থাকে প্রখর তাপদাহ। তারপর কী আর করা! সব ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে নির্ভার হয়ে বসে পড়লেন বৃক্ষের শীতল ছায়ায়। এ শুধু প্রেমিকযুগলের ক্ষেত্রেই নয়, গত কয়েকদিন যাবত দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করায় প্রখর গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় যাদের বাস তাদের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। চারপাশের দেয়ালবদ্ধতায় নগরবাসীর প্রায় সেদ্ধ হওয়ার উপক্রম।প্রখর তাপদাহে যখন গোটা দেশ জ্বলছে ঠিক তেমনই সময়ে অপেক্ষার অবসান হলো। রাজধানীতে এক পশলা বৃষ্টি যেন ক্ষণিকের স্বস্তি দিয়ে গেলো গরমে হাহুতাশ নগরবাসীকে। তবে টানা বৃষ্টি পরক্ষণেই নগরবাসীর মনে জলাবদ্ধতার জ্বালা ধরাতে পারে-এমন ভাবনাও স্বাভাবিকভাবেই আসছে অনেকের মনে। টানা কয়েকদিনের তাপদাহের পর রোববার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। তবে বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাত হচ্ছে। সঙ্গে ৭৫ কিলোমিটার গতিতে বইছে কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়ের গতি আরো বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীতে হঠাৎ করেই ব্যাপক ধুলিঝড় শুরু হয়। ঝড়ের দাপটে সড়কগুলোর লাইট হঠাৎ নিভে গেলে মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে। অনেক স্থানেই লোকজনকে ধুলিঝড় থেকে বাঁচতে ছুটাছুটি করতে দেখা যায়। তবে শিগগিরই ধুলিঝড় হার মানে বজ্রবৃষ্টির কাছে। জনমনে নেমে আসে স্বস্তি।ঢাকায় ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার গতিতে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ঝড় বইছে, সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। সামনে ঝড় ও বৃষ্টি বাড়তে পারে।

রাজশাহী: মৌসুমের প্রথম কাল বৈশাখি ঝড়ে রাজশাহী মহানগরীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার বিকেল ৪টায় থেকে শুরু হওয়া এ ঝড় প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। ঝড়ে নগরীর বেশ কয়েক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ঝড়ে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় নবনির্মিত ৫ তলা ভবন হেলে গেছে।এছাড়াও রেল লাইনের ওপরে গাছ উপড়ে পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে। এছাড়াও ঝড়ে বিভিন্ন ভাবে আহত হয়ে ১০ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ি, ঝড়ে বাতাসের গতি বেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তবে কোনো জয়গায় এর গতি আরো বেশি।আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, এটি রাজশাহীতে প্রথম কাল বৈশাখির হানা। আগামী এক সপ্তার মধ্যে আরো কয়েকটি কাল বৈশাখি রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

এদিকে, ঝড়ের সময় বন্ধ গেইট, দড়ি খরবোনা এলাকাসহ রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ১০ জন আহত হন। প্রাথমিকভাবে আহতদের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের মধ্যে দুই শিশু ও এক বৃদ্ধের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। কালবৈশাখী মৌসুমে ধূলিঝড় বয়ে গেছে রাজশাহীর উপর দিয়ে। যাওয়ার সময় প্রায় সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে। রোববার প্রচণ্ড রোদের পর দুপুর ৩টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে ৪টা ৫ মিনিট পযর্ন্ত চলে ঝড়ের তাণ্ডব। তবে কাক্ষিত বৃষ্টি হয়নি।ঝড়ে মহানগরীর বেশ কয়েক জায়গায় সড়কে গাছ উপড়ে পড়লে যান চলাচল ব্যহত হয়। রেল লাইনের ওপরে গাছ উপড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে।ঝড়ের পর মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় নবনির্মিত একটি ৫ তলা ভবন হেলে গেছে। এছাড়াও পঞ্চবটি, দরগাহপাড়া এলাকায় নদীর তীরে থাকা বেশকিছু কাঁচা ও আধাপাকা ঘর-বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। মহানগরীর শাহ মখদুম কলেজের সামনে ও নতুন বিলশিমলা এলাকায় সড়কের ওপর গাছ উপড়ে পড়েছে।

গোরহাঙ্গা, রেলগেট, শালবাগান, ভদ্রা, নিউমার্কেট, সাহেব বাজার, সোনাদীঘির মাড়, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড, বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে।কোথাও কোথাও ঝড়ে গাছের আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খবর পাওয়া গেছে।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ে বাতাসের গতি বেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তবে কোনো কোনো জয়গায় গতি ছিলো আরও বেশি।আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, এটি রাজশাহীর প্রথম কালবৈশাখী বলা যায়। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও শক্তিশালী কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে রাজশাহীর উপর দিয়ে। রোববার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জানান তিনি

এদিকে, কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় আশিকুর রহমান (১৬) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (০১ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার ছোটপাকা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।মৃত আশিকুর রহমান ওই গ্রামের এনামুল হকের ছেলে। সে এ বছর স্থানীয় পাকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নয়েজ মাহমুদ জানান, বিকেলে ঝড় শুরু হলে বাড়ির পাশে আম কুড়াতে যায় আশিকুর। এ সময় বজ্রপাত হলে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।