21-05-16-Patanga_Cyclone-19

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছ চাপা, দেয়াল চাপা, ইটের আঘাত, ট্রলারের চাপা ও জোয়ারের পানির তোড়ে দেশের পাঁচ জেলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে এক শিশু, বাঁশখালীতে ছয়জন ও সীতাকুণ্ডে মা ও শিশু; পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় এক নারী;ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় দুজন;কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় তিনজন এবং নোয়াখালীর হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার এসব ঘটনা ঘটে। এদিকে, উপকূলে শনিবার দুপুরে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সন্দ্বীপ ও বাঁশখালী উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কুতুবদিয়ার চারটি, মহেশখালীর তিনটি, টেকনাফের একটি, পেকুয়ার তিনটি ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়েছে। কক্সবাজারে বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বরগুনায় দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেঘনা মোহনা, নোয়াখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড উপকূল হয়ে রোয়ানু উত্তর দিকে চলে যায়। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, চট্রগাম এলাকার উপর দিয়ে বাংলাদেশ উপকুল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দূর্বল হয়ে ঘূণিঝড় রোয়ানু পরিণত হয়েছে স্থল নিম্ন চাপে। ঝড় কেটে যাওয়ায় সমুদ্রবন্দর গুলোকে তিন নম্বও সর্তকতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর । উত্তরপূর্ব বঙ্গেপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু (জঙঅঘট) ক্রমশ দুর্বল হয়ে চট্টগ্রামের পাশ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। যা পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল পার হয়ে যাবে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে (১৯ নম্বর) বলা হয়ছে, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোয়ানু’র বাতাসের গতিবেগ আগের থেকে কিছুটা কমে ৬২ কিলোমিটারে বেগে বয়ে যাচ্ছে। এ গতিবেগ সর্বোচ্চ ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত হচ্ছে।আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, বিকেলে বাংলাদেশের ফেনী ও হাতিয়া হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের মিজোরাম হয়ে মায়ানমারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত রোয়ানু’র ৭০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বাঁশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ উপেজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে (১৮ নম্বর) বলা হয়, সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডপলার রাডার পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল ঘেঁষে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ উপকূল এলাকায় অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধির পাঠানো খবর:চট্টগ্রাম: পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক আবুল বাশার জানান, নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন ষোলশহর এলাকায় শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে ঝোড়ো বাতাসে ইটের আঘাতে রাকিব নামের ১১ বছর বয়সী এক পথশিশু মারা গেছে। এ ছাড়া নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ভবনের কাচ উড়ে এসে এনামুল কবির নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মো. হামিদ বলেন, বেলা পৌনে দুইটার দিকে এনামুল কবিরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

সীতাকুণ্ড(চট্টগ্রাম): উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নে জঙ্গল ছলিমপুর গ্রামে ঝড়ে গাছের চাপায় ঘরের চাল ভেঙে মা ও শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ওই গ্রামের লোকমানিয়াঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মায়ের নাম কাজল বেগম (৪৮)। ছেলের নাম মো. বেলাল হোসেন (১০)। পাহাড়ি পথ ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দলের যেতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া।

বাঁশখালী: (চট্টগ্রাম):জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, ঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলঅকায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দীন জানান, বাঁশখালীর খানখানাবাদ, সন্দ্বীপের রহমতপুর, সারিকাইত ও কালাপানিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর সংযোগ হালদা নদী দিয়ে রাউজানের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, রহমতপুরের বেড়িবাঁধ মেরামত করে লোনা পানি প্রবেশ ঠেকানো গেছে। আর সারিকাইত ইউনিয়ন এলাকায় বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য লোকজন পাঠানো হয়েছে।আমাদের আনোয়ারার প্রতিনিধি জানান, শঙ্খ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে গহিরা, দক্ষিণ সারেঙ্গা, জুঁইদণ্ডী সাপমারা খালের মুখ, লামার বাজার, গোদারগোড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফকিরহাট এলাকায় ২০টি ঘর পানিতে ভেসে গেছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা আনোয়ারা উপজেলার বার আউলিয়া, চীপাতলী ও উঠান মাঝির ঘাট এলাকা সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে রোয়ানু আঘাত হানায় চট্টগ্রাম নগরের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরের বাদশা মিয়া সড়ক, রৌফাবাদ, বারেক বিল্ডিং মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে পড়েছে রাস্তার ওপর। নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকার ঝিনুক মার্কেটের নিচের অংশের দোকানপাট পানিতে ভেসে গেছে।চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির বলেন, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকাল ১০টা থেকে উড়োজাহাজের ওঠানামা ও বিমানবন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলমের ভাষ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে আজ সকাল আটটা থেকে সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পণ্য ওঠানামা, পরিবহনসহ সব ধরনের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।পিডিবি চট্টগ্রাম নগরের স্টেডিয়াম এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে।

কক্সবাজার: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোয়ানুর প্রভাবে সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ছয়-সাত ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কুতুবদিয়ার চারটি, মহেশখালীর তিনটি, টেকনাফের একটি, পেকুয়ার তিনটি ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেকসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ৭০ হাজার মানুষকে ১২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।জেলায় ৬ নম্বর বিপৎসংকেত বহাল আছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক।

সাগর দ্বীপ কুতুবদিয়ায় উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন উপকূলীয় উত্তাল সাগরে দুটি ট্রলারের চাপায় ফজলুল হক (৫৫) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার কৈয়ারবিল গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে দুপুরে একই ইউনিয়নের ধুরুং গ্রামের ঝড়ের কারণে ঘরের মাটির দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবালের (২৫)। আর বিকেলে বিকালে পুলিশ আলীআকবরডেইল সৈকত থেকে উদ্ধার করে ফকির আলম (৪৯) নামে এক জেলের লাশ। তিনি ওই ইউনিয়নের তাবলেরচর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে স্রোতের টানে ভেসে তাঁর মৃত্যু হয়।কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অংসা থোয়াই জানান, লাশ তিনটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছ ও ঘরের দেয়াল চাপায় উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে আরও সাত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সাগর দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়াতেই ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত হানে। বেড়িবাঁধ ভেঙে এই উপজেলার কৈয়ারবিল, ধুরুং, উত্তর ধুরুং, লেমশিখালী ও আলীআকবর ডেইল ইউনিয়নের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে কক্সবাজারের প্রায় ২৮ কিলোমিটার উপকুলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে লন্ডভন্ড পাঁচটি উপজেলার অন্তত ১৮০টি গ্রাম। এসব গ্রামে কমপক্ষে ৫০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব গ্রামের গৃহহীন প্রায় ৮৪ হাজার লোকজনকে ১৫৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা ও খুটি ভেঙ্গে পাড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় বিদ্্ুযৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

ভোলা প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে দ্বীপ জেলা ভোলার সাতটি উপজেলায় সহ্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এক শিশু সহ আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত্য দেড় শতাধিক। এছাড়া রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলার বিদ্যুৎলাইন।মেঘনা ও তেতঁলিয়া নদীতে জোয়ারের চাপে লাললমোহনের ধলীগৌরনগর ও মনপুরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পরেছে। এতে পানি বন্ধি হয়ে পরেছে কয়েক হাজার পরিবার।

সরেজমিনে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ৩ টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু‘র প্রভাবে তজুমদ্দিন উপজেলার চাদঁপুর ইউনিয়ন সহ পুরো উপজেলা ঘর বাড়ি দোকান পাট ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এঘটনায় রেখা বেগম (৩৫), একরাম (১২) নামের এক কিশোর সহ দুই জন ঘরের নিচে চাপা পরে নিহত হয়েছেন। এসময় তজুমদ্দিন উপজেলার শহর সহ ৫ শতাধিক ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছে চাদঁপুরের হাজী গ্রামের রুমা (২০), আঃ নোমান (২৭), ভূইয়া কান্দির ইয়ানুর বেগম (২৫), তানহা (৬), দালাল কান্দির সোহাগ (১৬), শশীগঞ্জের জাহিদুর রহমান মিলল (৩২), আঃ রহিম (৩৫), আবুল কালাম (৪০) সহ অন্তত ৫০ জন। তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল আহম্মেদ ঘর বাড়ি বিধ্বস্তে বিষয়টি নিশ্চিত বলেন, জেলা প্রশাসক ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করেছেন। এ ছাড়াও নিরাপদ আশ্রয়নকৃত সাধারণ মানুষের জন্যে চিড়া-মুড়ি ও গুরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অপরদিকে দুপুর ১১ টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বাতাসের তোড়ে ভোলার মেঘনা নদীতে বালুভর্তি দুইটি কার্গো ডুবে যায়। এতে ওই দুই কার্গোতে থাকা চার শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেনছেন ভোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির।

অপরদিকে দুপুর ১২ টার দিকে মনপুরায় প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসে তিন দিন বয়সের ১ নবজাতকের মুত্যু হয়েছে। নিহত নবজাতক সামিয়া উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের আর্দশ গ্রামের বাসিন্দা তসলিমের মেয়ে। এছাড়া বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে দৌলতখানে রাণু বিবি (৫২) নামে আরো এক নারী ঘরের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। নিহত রাণু বিবি উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ইসমাইলের স্ত্রী। এছাড়া লালমোহনের ধোলীগৌরনগর ও মনপুরা ৫ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ৫-৬ ফুট জোয়ারে পানি প্রবেশ করে। বিচ্ছিন্ন বেড়ীবাঁধহীন কলাতলীর চর ও চরনিজাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সমস্ত চরাঞ্চলে আশ্রয়ন কেন্দ্র না থাকায় মানুষ উচুঁ মাটির কিল্লা ও ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছে। হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, নায়েবেরহাট, সোনারচর বেড়ীবাঁধ, মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ, কাউয়ারটেক, আন্দ্রিরপাড় বেড়ীবাঁধ, উত্তরসাকুচিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম বেড়ীবাঁধ, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এই সমস্ত বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এছাড়াও দাসেরহাট এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার এলজিইডির পাকা সড়ক জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া লালমোহনের লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম জানান, লালমোহনের ধলীগৌরনগর ও লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের কুমারখালী ও চরকালি দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকছে। উপজেলার বেড়িবাঁধের আশপাশে গাছপালা ও রবিশস্যসহ অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

অপরদিকে চরফ্যাশনের ঢালচরে চেয়ারম্যান ছালাম হওলাদার জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মেঘনার জোয়ারের পানি চরে প্রবেশ করেছে। ঝড়ের কবলে ঘরবাড়ির চালা উল্টে গেছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, অতি জোয়ারের কারণে ভোলার ছোট ছোট দ্বীপচরের নিম্মঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে এসব চরের মানুষ। মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে চরে পানি ঢুকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে ভোলা সদর দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন,লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকান পাট বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে অন্তত আরো ৫০ জন।এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, টর্ণেডোর রোমানু‘র আঘাতে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রেখে সাধারণ মানুষের জানামাল রক্ষার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাইক্লোন সেল্টারে অবস্থানকৃতদের জন্য ত্রাণ তহবিল থেকে খাদ্য সমগ্রী দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবারদেরকে জেলা ত্রাণ তহবিল থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

পটুয়াখালী: দশমিনা উপজেলায় গতকাল রাতে ঝড়ে ঘর চাপা পড়ে নয়া বিবি (৫০) নামের এক নারী মারা গেছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক ঘর। নয়া বিবির বাড়ি উপজেলার দশমিনা ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুরের নিজারাবাদ গোপালদি গ্রামে। দশমিনার মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি সিকদার নজরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে গাছপালাসহ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউএনও আজহারুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী অতিক্রম করে গেছে ঘূর্নিঝড় ‘রোয়ানু’। তেমন কোন প্রভাব না পরলেও শনিবার ভোর রাতে দমকা হাওয়ায় দশমিনার গোপালদি গ্রামে ঘরচাপায় নয়া বিবি (৫৫) নামের একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪ জন। আহতরা হচ্ছে শহিদুল ইসলাম (২৮), সেলিম (২৪), কন্যা সুফিযা (৩৫) ও রাজিয়া (৩২)। বর্তমানে উপকূলে হালকা বর্ষনের সাথে থেমে থেমে চলছে দমকা হাওয়া। দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিত কাঁচা বাড়ী-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কলাপাড়া ও দশমিনায় বেড়িবাধ ভেঙ্গে ২৫-৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাছের ঘেরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। অত্যান্তরীন ও দুরপাল্লার রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে কুয়াকাটা সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ পটুয়াখালী উপকূলে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ায় স্থানীয় নদ-নদী গুলো ক্রমশই পানি বৃদ্ধি হচ্ছে।

লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে পটুয়াখালী পৌর শহরসহ উপজেলা গুলো বেশ কিছু এলাকাতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার নি¤œাঞ্চল ৪-৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে রবিশস্য নিয়ে দুঃচিন্তায় পরেছে কৃষকরা। শত-শত ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

কলাপাড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানাযায়, রাত তিনটা থেকে ঘূর্নিঝড় রোয়ানু উপকূল অতিক্রম করে পটুয়াখালী-বরিশাল হয়ে চিটাগং দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে জেলার অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে। এদিকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একে এম শামিমুল হক সিদ্দিকী দূর্যোগ মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। পটুয়াখালী নৌ-বন্দর উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, পটুয়াখালীর অভ্যন্তরীন নৌপথে ১২টি নৌ রুটে একতলা লঞ্চ (৬৫ ফুটের নীচের লঞ্চ) চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে পটুয়াখালী-ঢাকাগামী যাত্রীবাহি লঞ্চও। কলাপাড়া :পায়রা বন্দরসহ কলাপাড়ার ওপর দিয়ে শনিবার দুপুরে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু অতিক্রম করেছে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ৬০-৬২ কিলোমিটার। মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল তখন। ফলে ১২ ইউনিয়ন এবং কলাপাড়া-কুয়াকাটা পৌরসভার অন্তত দেড় শ’ কাচাঁ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবলবেগে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে গোটা দেবপুর গ্রাম ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িঘর থেকে পুকুর পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। একইদশা নিজামপুর গ্রামের। সেখানকার পাঁচটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী দশায় পড়েছে। পাঁচ হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জলোচ্ছ্বাসের চাপে আগেই আংশিক বিধ্বস্ত লতাচাপলীর আলীপুর পাঁচ ভেন্টের স্লুইসটি সম্পুর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে কুয়াকাটাসহ গোটা ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। নীলগঞ্জের উমেদপুর গ্রামের ভাঙ্গা স্লুইসগেট দিয়ে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। রোয়ানুর তান্ডবে কুয়াকাটা সৈকতের ৩০ ফুট প্রস্থ এলাকা সাগর গিলে খেয়েছে। মূল সড়কটি পর্যন্ত সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শত শত নারিকেল, ঝাউসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা জোয়ারের ঝাপটায় উপড়ে গেছে। সবক’টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে কোথাও কোন মানুষ কিংবা গবাদিপশু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় নি। অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবনের ফলে চম্পাপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সহ¯্রাধিক মানুষ বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, পুরনো বিধ্বস্ত ছাড়াও নতুন করে আরও চার শ’ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। শনিবার বিকালে দেবপুর এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী।
জাতীয়

কাউখালী(পিরোজপুর): ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে পিরোজপুরের কাউখালীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ধমকা হাওয়ায় পর শনিবার বিকেলে সূর্যেও দেখা পাওয়া গেলেও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কাউখালীতে কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। শত শত গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা নিশ্চিত করেছে।বভিন্ন ইউনিয়নের নি¤œঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে।শুক্রবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।উপজেলায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও ধমকা হাওয়া দেখা দেয়। এতে মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। চলে শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত। টানা ভারী বর্ষণে মানুষ ঘরবাড়িতে আটকা পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষেরা কাজ না করতে পেরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।কাউখালীর বেকুটিয়া ফেরিও আমরাজুড়ি ফেরিচলাচল বন্ধ ছিল।কাউখালী থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।

এ দিকে কাউখালী উপজেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কমিটি ঘূর্ণিঝড় পূর্ববতী এবং পরবর্তী সময়ের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কওে ছিল। বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বরিশালের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২০০ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টিপাত হয়েছে।বর্তমানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম।এদিকে, টানা বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ঝড়ো-হাওয়ায় অনেক স্থানে গাছপালা উপরে পড়েছে। এতে দুইজনের আহতের খবর পাওয়া গেছে।এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশাল নগরীর ৯নং ওয়ার্ডে কীর্তনখোলা নদীতীরের রসুলপুর চরের বেশকিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।অপরদিকে, দূযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে বরিশাল নগরীসহ জেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এছাড়া বরিশালের লেবুখালীসহ অভ্যন্তরীণ রুটে ফেরি ও নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছ।এদিকে, নদীতে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর তা অমান্য করে কীর্তনখোলা নদীতে চলাচল করছে যাত্রীবাহী ট্রলার। এ বিষয়ে নজরদারি নেই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ কিংবা নৌ পুলিশের।বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেছে। ফলে বরগুনার বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলের ৩২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

প্লাবিত গ্রামগুলো হচ্ছে-বরগুনা সদর উপজেলার মাঝের চর, ডেমা, গুলিশাখালী, মানিকখালী, লবনগোলা, নাপিতখালী, পূর্ব বুড়িরচর, বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ কালিকাবাড়ি, আলিয়াবাদ, উত্তর কালিকাবাড়ি, ভোড়া, বেতমোড়, উত্তর বেতাগী, কেওয়াবুনিয়া, ঝোপখালী, ছোট বেতাগী, আমতলী উপজেলার বৈঠাকাটা, কুলুর চর, পূর্ব চিলা, পশ্চিম চিলা, উত্তর তক্তাবুনিয়া, জেলে পাড়া, কলাগাছিয়া, আঙ্গারপাড়া, শাখারিয়া, আঙ্গলকাটা, তালতলী উপজেলার খোটকারচর, তেতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়া, আশারচর, সখিনা ও আমখোলা।এসব এলাকার বাড়ি-ঘরে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে কৃষি জমি ও মাছের ঘের। এছাড়া রাতের ঝড়ে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অনেক সড়কের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় বিঘিœত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ নেই জেলার বেশিরভাগ এলাকায়।বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২০ মে) সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বরগুনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১১৭ মিলিমিটার।এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার গেজ রিডার শাখা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরগুনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২.৮২ মিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত মানুষ প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানে’র প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় কিছুটা পানি বাড়লেও শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

মানিকগঞ্জ: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট রুটে লঞ্চসহ ছোট-বড় ট্রলার, নৌকা ও স্পিটবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।শনিবার দুপুর ১টার দিকে এ তথ্য জানান পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখা নৌ পুলিশের ইনচার্জ (আইসি) মো. শাসছুল আলম।তিনি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ থাকবে।

পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখার বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক তানভীর হোসেন জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের জন্য ৯টি রো রো (বড়), ৩টি (কে-টাইপ) মাঝারি ও ৫টি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি চলাচল করছে।তবে ছোট ফেরিতে ছাদ না থাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে পারাপাররত যাত্রীরা ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

নোয়াখালী: জোয়ারের পানির তোড়ে হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) ও ১০ বছরের মেয়ে মরিয়মনেছা এবং জাহাজমার ইউনিয়নের রিপুলা বেগম (৪৭)। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইনুদ্দিন বলেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জোয়ার আসতে দেখে আসবাবপত্র রক্ষা করতে ঘরে ঢোকেন তাঁরা। এর মধ্যে জোয়ারের পানি এসে পড়ায় তারা আর ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এ ছাড়া নিঝুম দ্বীপ, নলিছড়া, চরেশ্বর, চরকিং, তমরুদ্দি, বয়ারচর, নলেরচর এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪-৫ শ কাঁচা ঘর।

ফেনী :রোয়ানু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনিবার বিকেলে ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় এলাকায় ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম ৪-৫ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে গ্রামগুলো জোয়ারের পানি বেড়ে যায়। প্লাবিত এলাকায় চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকায় ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যান ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র এডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনসহ প্রশাসনের লোকজন।সোনাগাজী উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করে প্রায় ২০০০ লোকজনকে আশ্রয়নকেন্দ্রেসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মাঝে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ১০টি মেডিকেল টিম ও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় ৯৬ টিমে ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত গ্রামগুলো হলো চরখোয়াজ, চর খোন্দকার, জেলেপাড়া, দক্ষিণ চরচান্দিয়া, পূর্ববড়ধলী, চরচান্দিয়া বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ, বাহিরচর, চরনারায়ন ও চর আবদুল্লাহ।

এদিকে প্লাবিত এলাকার বাড়ি-ঘরে জোয়ারের পানি প্রবেশের পাশাপাশি কৃষি জমি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে রাস্তার গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফা হক জানান, রোয়ানু ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপজেলার ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া দুর্গত লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত রয়েছে।

চাঁদপুর: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকা এখন ঢেউয়ে উত্তাল। জোয়ারের ফলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।ইতোমধ্যে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার অন্তত ১১ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।এছাড়া ৪টি উপজেলার প্রায় ৪০টি চরাঞ্চলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে ও নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।এদিকে, ঝড়ে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল ও হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক যাত্রী আটকা পড়েছে।চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় শুক্রবার থেকে জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি রেখেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।

সিলেট: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটেও। শুক্রবার (২০ মে) রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি শনিবার সকালে হালকা থাকলেও দুপুরের দিকে তা ক্রমশ বাড়ছে।তবে ঘূর্ণিঝড় সিলেটে বড় ধরনের কোনো আঘাত হানতে সক্ষম নয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলে আঘাতের পর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। এ জন্য শনিবার বিকেল থেকে রাতে বেশি বৃষ্টিপাত হবে। ঝড়ে সিলেটে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন। প্রবল বর্ষণে ভূমিধসে যাতে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য টিলার পাদদেশের লোকজনকে সরে যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাধারণত ভারী বর্ষণ হলে টিলা-পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকার লোকজনকে সতর্ক অবস্থানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।