31-05-16-Mongla_Pirates Surrender-2

সুন্দরবনের জলদস্যু মাস্টার বাহিনী’র প্রধান মোস্তফা শেখসহ ১০ জলদস্যু মঙ্গলবার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছেন। বেলা তিনটার দিকে মংলা বন্দরের জেটি সংলগ্ন এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সামনে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তাঁরা দেশি-বিদেশি ৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে চার হাজার গুলি জমা দেন।এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্য জলদস্যুরাও যদি এভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল আনোয়ার লতিফ, খুলনা রেঞ্জে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মনিরুজ্জামান মিয়া, র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।সুন্দরবনের বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার (৪৫) ও তার আরও ৯ জন সহযোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন।

মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টায় মংলার বিএফডিসি জেটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকাতদল ৫২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ডের বেশি গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। দস্যুদের জমা দেয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, ১৮টি একনলা বন্দুক, ৮টি দো-নলা বন্দুক, ৬টি .২২ বোরের পিস্তল, ১টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ৩টি ওয়ান শুটারগান, ৫টি রাইফেল, ২টি সিঙ্গেল রাইফেল, ৫টি শটগান, ২টি এয়ার গান, ২টি শাটারগান।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, বনডাকাতরা সমাজের ক্ষতিকর মানুষ হিসাবে রূপ নিয়েছে। এই উপলব্ধি থেকে তারা আজ আত্মসমর্পন করেছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যে কাজ শুরু করেছে সে কাজের জন্য আমরা তাদের সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দিয়ে যাবো।তিনি আরও বলেন, আমরা সুন্দরবনকে নিরাপদ স্থান হিসাবে দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সুন্দরবনকে একটি পর্যটন জোন হিসাবে গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেনি তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহায়তা করবো। এ জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।আত্মসমর্পণকারীরা হলেন- মাস্টার বাহিনীর প্রধান মো. মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার, সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সোহাগ আকন, মো. সোলায়মান শেখ, ফজলু শেখ, মো. সুলতান খাঁ, শাহীন শেখ, সুমন সরদার, আরিফ সরদার. মো. হারুন ও আসাদুল ইসলাম ওরফে কোকিল। বনডাকাত মোস্তফা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কাটাখালী এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা আবদুল লতিফ একজন মাছ ব্যবসায়ী। মোস্তফার ছোট ভাই কামরুল দুই বছর আগে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হোন।

সুন্দরবনে জেলেদের ত্রাস ছিল মাস্টার বাহিনী। নৌকা ও জেলেদের জিম্মি করে বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করতো। কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে ডাকাতরা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়।সেই লক্ষ্যে রোববার (২৯ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে হাড়বাড়িয়ার চরাপুটিয়া এলাকায় র‌্যাবের কাছে এ মাস্টার বাহিনীর প্রধানসহ ৭ ডাকাত দেশি-বিদেশি ৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও পাঁচ হাজার গুলি জমা দেন।কিন্তু ওইদিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।র‌্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের পশ্চিম উপকূল এবং সুন্দরবনের জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালদের ত্রাস ডাকাতদল মাস্টার বাহিনী। নৌকা ও জালের হিসাব করে নির্ধারিত হারে ডাকাতদের চাঁদা দিতে হতো জেলে ও বনজীবীদের। এতোদিন অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল এ বাহিনীর সদস্যরা। ডাকাতদের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল, মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়।