abdul hamidসাংবাদিকদের সঙ্গে তার ভালবাসার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। যখন স্পিকার ছিলেন তখন থেকেই গড়ে ওঠে এই ভালবাসা। সংসদ ছেড়ে তিনি বঙ্গভবনে উঠেছেন অনেকদিন হয় গেছে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে তার চলাচল ও অনুষ্ঠানাদীতে অংশগ্রহণ কঠোর রাষ্ট্রীয় প্রটোকল মেনেই করতে হয়। ফলে চাইলেও আগের মতো আর সবার সঙ্গে মিশতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রতি আব্দুল হামিদ সুযোগ পেলেই হয়ে উঠেন প্রটোকলহীন, বাঁধ না মানা তরুণের মতো। বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সংসদে এসে তার পুরনো ভক্ত, বন্ধু, ও সন্তানবৎসল সাংবাদিকদের দেখার জন্য ছুটে এসেছিলেন সংসদের সাংবাদিক গ্যালারিতে। সংসদের ব্যস্ত সময় থেকে সাংবাদিকদের জন্য তিনি ঠিকই বরাদ্দ রাখলেন কিছুটা সময়। সংসদ বিটের চেনা-অচেনা, পুরনো ও নতুন সব সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কাটালেন ১০ মিনিট।

দশম জাতীয় সংসদের ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার ৫০ মিনিট পর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে বিকেল ৪টা ২০মিনিটে সাংবাদিক গ্যালারিতে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপ্রতি আব্দুল হামিদ। ওই ১০ মিনিট সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এ সময় রাষ্ট্রপ্রতি সংসদ বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। যাদেরকে চেনেন তাদের নাম ধরে ডেকে পরিবার-পরিজনের কুশল জানতে চান। সাংবাদিকরা রাষ্ট্রপতিকে পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন। তখন দারুণ প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে উঠে সাংবাদিক গ্যালারি। এসময় সাংবাদিকরা রাষ্ট্রপ্রতির কাছে জানতে চান, তার আত্মজীবনী লেখার কতদুর হলো। জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন,অসুস্থতার কারণে লেখা হয়ে উঠছে না।নিজেকে এখনো এনালগ দাবি করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কাড এগুলো আমি বুঝতেই পারি না। এগুলো এখনো আমার কাছে ‘আন-নোয়িং’ (অপরিচিত)। নিজের মোবাইল ফোনটি প্যান্টের পকেট থেকে বের করে রাষ্ট্রপতি দেখান আমার মোবাইলটাও এনালগ। স্মার্টফোন না। স্মার্ট ফোন একটা টিপলে আর একটা আহে।

সাংবাদিকদের প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভালোবাসা বেশ পুরনো। যখন তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন তখন থেকেই সাংবাদিকদের হৃদ্ধতা ছাপ দেখা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (০২ জুন) বিকেল ৪টা ২০মিনিটে জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ তলায় সংবাদিক লাউঞ্জে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিরাপত্তার ঘেরটেপ পেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আসেন কিছু সময় অবস্থান করে খোঁজখবর নেন সবার। এসময় প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করে ৪টা ৪০ মিনিটে বেরিয়ে যান।রাষ্ট্রপতি বলেন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড আমি বুঝি না। আমি টেহাও জমা দেই চেকের মাধ্যমে। এসময় একজন সাংবাদিক বলেন, স্যার সরকার তো ডিজিটাল। একথা বলার পর রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি তো বাবা ডিজিটাল না, এনালগ।

রাষ্ট্রপতি কুশলাদি বিনিময় করার সময় একজন সাংবাদিক তার জীবনী লেখার কথা জানতে চাইলে বলেন, আমার আগে জিল্লু সাহেব শেষ করতে পারেন নাই, মারা গেছে। আমি শুরু করেছি, মরার আগে করতে পারব…।এ সময় তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাংবাদিকের কুশল জানতে চান। সাংবাদিকরাও রাষ্ট্রপতিকে কাছে পেয়ে তার শরীরের খোঁজ খবর নেন। এসময় রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি যখন এখান থেকে যাই, তখন ছিলাম ৬৮ কেজি, এখন ৬৯ কেজি। এই কয়েক বছরে এক কেজি বাড়ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই এক কেজি বাড়ছে খোয়াড়ের (নিরাপত্তা বলায়ে থাকার কথা বুঝিয়েছেন) মধ্যে থাকি তো। খোয়াড়ের মধ্যে থাকলে ওজন বাড়ে। রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের খোঁজ খবর নেন। এসময় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী বলেন, স্যার আমি এই মাসেই দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি। রাষ্ট্রপতি তার প্রতিউত্তরে বলেন, বাই রোটেশন সবাইকে সুযোগ দেন। লাউঞ্জে সব সুযোগ সুবিধা আছে কি না জানতে চান।

রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি উত্তম চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র, অর্থ সম্পাদক কাজী সোহাগ রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। সংসদের অধিবেশনে এ নিয়ে ৫ম বারেরমতো রাষ্ট্রপতি সাংবাদিকদের লাউঞ্জে এসে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। স্পিকার থাকার সময়ও আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট প্রায়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতেন।