bangladesh-betar1450252301বাংলাদেশ বেতারে এখন চলছে তোলপাড়। অনেকেরই মত, বিএনপি-জামায়াতি শক্তির লোকেরা এখনও বেতারে বহাল তবিয়তে রয়েছে। আর সুযোগ বুঝেই তারা নিজেদের কাজটি করে যাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে, তাদেরই কেউ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বেতারে বিএনপির দলীয় সংগীত ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি বাজিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। বেতার কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে অন্তত ১৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। শুক্রবার ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ১০ জনকে বরখাস্তের জন্য সুপারিশও পাঠনো হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ে।

তবে দায়িত্বশীল মহল মনে করছে, এই ঘটনার দায় কর্তৃপক্ষের কোনও পর্যায়ই এড়াতে পারে না। তাদের মত, জাতীয় সংসদের বাজেটের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রথমে কোন সংগীত পরিবেশন হবে, পরে কোনটি পরিবেশন হবে এবং শেষে কোন সংগীতটি পরিবেশন হবে— তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। আর বাজেটের দিন থাকে বাড়তি সতর্কতা। সুতরাং স্বয়ং মহাপরিচালকেরও এক্ষেত্রে দায় রয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে রবিবার কর্তৃপক্ষ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও বিশদ তদন্তের উদ্যোগ নেবে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে তত্ক্ষণাৎ প্রকৌশল বিভাগ ও অনুষ্ঠান বিভাগের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। খুব দ্রুত তারা তদন্ত প্রতিবেদনও দিয়ে দেন যাতে অনুষ্ঠান ও প্রকৌশল বিভাগের মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং ছয়জন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকালেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর প্রথম শ্রেণির ১০ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাদের ব্যাপারে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতেও কমিটি তৈরি হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকা কালে বিএনপি’র দলীয় সঙ্গীত ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ সংগীতটিও নিয়মিত পরিবেশন করা হতো বাংলাদেশ বেতারে। কিন্তু এরপর কেটে গেছে দশটি বছর। এত বছর পর হঠাৎ করে গানটি কেউ ইচ্ছা করে না বাজালে সামনে আসার কথা নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে সংগীতটি যখন বাজানো হয় তখন অনুষ্ঠান ও প্রকৌশল বিভাগের যারা দায়িত্বশীল ছিলেন তারা তা শুনছিলেন। বিশেষ করে অনুষ্ঠান বিভাগের যিনি অনএয়ার করার সময় হেড ফোনে শুনছিলেন তিনি কেন তত্ক্ষণাৎ এটি বন্ধের নির্দেশ দেননি, সে প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

বেতারের মহাপরিচালক এ কে এম নেছার উদ্দিন ভূঁইয়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সোচ্চার হলেও, তার নিজের বিরুদ্ধেও রয়েছে বেতারে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। এমনকি বিএনপি-জামায়াতিদের পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগটিও পুরোনো। সেক্ষেত্রে এমন একটি ঘটনা তারই ফল কি না, সেটাও দেখার বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে।