এসপি বাবুলের স্ত্রীকে গুলি করে ভাড়াটে খুনি ওয়াসিম

পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমের হত্যাকারী মোটরসাইকেল আরোহী তিনজনের একজন ওয়াসিম। সে-ই মাহমুদাকে গুলি করেছিল। রোববার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওয়াসিম এ তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। রোববার বেলা তিনটায় নগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ইকবাল বাহার এ কথা বলেন।

এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, গ্রেপ্তার মোহাম্মদ ওয়াসিম ও আনোয়ারের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়।তারা পেশাদার অপরাধী। … তারা আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছে।হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত রাতে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, আনোয়ার ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল। তাঁদের দুজনের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়।ইকবাল বাহার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খুনিরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। কার নির্দেশে, কেন তারা এ খুন করেছে, তা তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। আজ দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অনেক তথ্য দিয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অপরাধীরা পেশাদার। খুনে সাত থেকে আটজন অংশ নিয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।হত্যাকারীরা জঙ্গি কি না বা জঙ্গিরা এ কাজ করিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইকবাল বাহার বলেন, এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

গভীর রাতে পুলিশ পাহারায় বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার পর থেকে বাবুল আক্তারের নিরাপত্তায় পুলিশ ছিল। তদন্তের স্বার্থে মামলার বাদী হিসেবে তাঁর সঙ্গে তদন্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে।ওই সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কি না, জানতে চাইলে কমিশনার কোনো জবাব দেননি।বাবুল আক্তারের পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে কমিশনার বলেন, তারা কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছে জানি না। মামলাটির সঠিক তদন্তে সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে।বাবুল আক্তারকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে নজরদারি কেন?এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যায় নতুন করে দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে’ তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে শনিবার ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিএমপি কমিশনার।পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল ঢাকায় যোগ দেওয়ার তিন দিনের মাথায় ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোডের বাসার কাছে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। মোটর সাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রামের পুলিশ বলে আসছিল, গত দুই বছরে চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানে বাবুলের ভূমিকার কারণে জঙ্গিদেরই সন্দেহের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন তারা; সেভাবেই মিতু হত্যার তদন্ত করছেন তারা।ঘটনার দিনই বাবুল আক্তার নিজে বাদী হয়ে স্ত্রী খুনের ঘটনায় মামলা করেন। সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটকের কথা জানায় পুলিশ। যদিও তাদের রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।মিতু হত্যায় ৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আবু নসুর গুন্নু (৪৬) এবং ১১ জুন নগরীর বায়েজিদ থেকে শাহ জামান ওরফে রবিন (২৮) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ জুন তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পায় পুলিশ। প্রেস ব্রিফিংয়ে নসুর ও রবিন সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার বলেন, ওটা আলাদা বিষয়।

নতুন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ওয়াসিম হত্যাকা-ের পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করা মোটরসাইকেল আরোহীদের একজন জানিয়ে ইকবাল বাহার বলেন, সে-ই গুলি করেছে।আর আনোয়ার হত্যাকান্ডের সময় এলাকা রেকি করেছিলেন বলে এই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি। বাকি কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্তকারীরা ‘মোটামুটি অবগত’ দাবি করে তিনি বলেন, পুরোপুরি তদন্ত শেষ না করে এবং বাকি যারা জড়িত তাদেরকে পেলে তদন্ত করে জানাতে পারব।৬ থেকে ৭ জন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বাকি যারা সবাইকে পেলে তদন্ত করে ঘটনার মোটিভ বলতে পারব। পূর্ণ তদন্ত শেষ হলে আমি পুরোপুরি বলতে পারব। অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলব?তারা সংঘবদ্ধ চক্র মন্তব্য করে সিএমপি কমিশনার বলেন,তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সব বলব না। ঘটনাটি টার্গেট কিলিং নিশ্চিত। তবে কারা ঘটিয়েছে- সেটা নিশ্চিত না হয়ে বলতে পারব না।ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- এমন সংবাদ গণমাধ্যমে আসার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেটাকে আমি আটক বা গ্রেপ্তার বলব না।মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ আমি বলব না। তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।বাদিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে পাল্টা প্রশ্ন করে সিএমপি কমিশনার বলেন, বাদীকে নজরদারি কেন করা হবে? সেক্ষেত্রে তদন্তে যদি কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।