ছেলের খোঁজে আর্টিজানে মা-বাবা

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টেুরেন্ট থেকে আটক সন্দেহভাজন জঙ্গি জাকির হোসেনে শাওন মারা যাওয়া গুঞ্জনই সত্য হল। তবে সকালে মারা না গেলেও বিকেলের দিকে তিনি মারা যান বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক খাজা আবদুর গফুর নিশ্চিত করেছেন।শুক্রবার (৮ জুলাই) শাওনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়েছে।শুক্রবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে জাকির ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে। অবশ্য জাকিরের বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, দুপুর ১২টার পরপর তাঁর ছেলে মারা গেছেন।তবে পুলিশ দাবি করেছিল, জাকির বেঁচে আছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। অবশ্য দুপুরের দিকে জাকিরের ভাবি ফাতেমা বেগমও দাবি করেন, তিনি নিশ্চিত তাঁর দেবর জাকির মারা গেছেন। তাঁদের জাকিরের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

৪ জুলাই জাকিরের মা-বাবা ছেলেকে খুঁজতে আর্টিজানের সামনে ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা বলেন, হামলার পর থেকে জাকিরকে তাঁরা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাঁর (জাকির) খোঁজে অভিভাবকেরা কয়েকবার গুলশান থানার পুলিশের কাছে গেছেন। পুলিশ ইউনাইটেড হাসপাতালে জাকিরকে খোঁজার কথা বলে। সেখানে গিয়েও তাঁরা ছেলেকে পাননি। ৩ জুলাই রাত দেড়টা পর্যন্ত তাঁরা গুলশান থানায় বসে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ জাকিরের কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।মা-বাবার কাছে থাকা জাকিরের ছবি দেখে ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকেরা রক্তাক্ত অবস্থায় এক তরুণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ে যাওয়ার ছবিটি দেখান। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ছেলের খোঁজে আর্টিজানের সামনে মা-বাবা শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়।পরে ওই দিন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক জানান, হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তিনি কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।

এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকিরকে ৩ জুলাই রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্র বলেছে, তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়। তবে জাকিরের বাবা আব্দুস সাত্তার ও মাহমুদা বেগম দাবি করেছেন, তাঁদের ছেলে হলি আর্টিজানে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। রেস্তোরাঁর হিসাবরক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাজেদুর রহমান ৪ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, জাকিরকে তাঁরা হাসপাতালে শনাক্ত করেছেন। তাঁকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা গত শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে জাপান সরকার তাদের সাত নাগরিকের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। ইতালির নাগরিক নিহত হয়েছেন নয়জন। নিহত ব্যক্তিদের একজন ভারতীয়। শুক্রবার রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে মারা গেছেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আর শনিবার সকালে অভিযানে মারা গেছে ছয় সন্ত্রাসী। গ্রেপ্তার হয়েছে একজন। অভিযানে একজন জাপানি, দুজন শ্রীলঙ্কান ও ১০ জন বাংলাদেশিসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে সকালেই বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে শাওনের বাবা আবদুস সাত্তারের বরাত দিয়ে শাওনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরে আবার সেই সংবাদগুলো সংবাদমাধ্যম থেকে সড়িয়ে নেয়া হয়। এ নিয়ে শুরু হয় নানান কানাঘুষা।এর আগেই দুপুরের দিকে খাজা আবদুর গফুর বাংলামেইলকে জানিয়েছিলেন, শাওনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। এসময় শাওনের মা মাসুদা বেগম জানান, ওর (শাওনের) অবস্থা খুব খারাপ। সকাল থেকে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তান বাঁচবে কি-না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এই মা।

এর কিছুক্ষণ পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আবদুল গফুর শাওনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন। এদিকে পরিবারের ভাষ্যমতে, শাওন প্রায় একবছর ধরে হলি আর্টিসান বেকারিতে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি কোনো অপরাধে জড়িত নন। কিন্তু ১ জুলাই ওই রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাওনকে ধরে নিয়ে যায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর থেকেই শাওন ঢামেকে ভর্তি ছিল।

উল্লেখ্য,শুক্রবার (১ জুলাই) একদল সন্ত্রাসী আর্টিসান রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেডে হামলা ও গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযানে জিম্মি ঘটনার অবসান ঘটে। অভিযানে ৬ জঙ্গিসহ সেখান থেকে তিন বাংলাদেশি ও ১৭ জন বিদেশি নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জীবিত জিম্মিদের মধ্যে উদ্ধার হয় একজন জাপানি, দুজন শ্রীলঙ্কান ও ১০ জন বাংলাদেশিসহ মোট ১৩ জন।