একেএম শহীদুল হক

রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত নয়জন নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য বলে ধারণা করছেন পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক।রাতভর অভিযানের পর মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গুলশানে জেএমবির যে গ্র“পটি হামলা চালিয়েছিল, এরা সে গ্র“পেরই কেউ। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়।এ সময় ১ জঙ্গি গুলিবিদ্ধসহ ২ জনকে আটক করে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকাল ৭টায় স্টর্ম-টোয়েন্টি সিক্স নামের এই অভিযান শেষ করে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মাররু হাসান।তিনি বলেন, ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিং নামের ওই বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে সোয়াত, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় তাদের সাথে গোলাগুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। এক জঙ্গি গুলিবিদ্ধসহ আটক করা হয় দু’জনকে।

কমিশনার।ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে মালামল জব্দ চলমান থাকায় নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি মারুফ হাসান।এরআগে, সোমবার দিবাগত রাত ১টার কিছু পর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের জাহাজ বিল্ডিং নামের ৫ তলা বাড়িটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. হাসান নিহত সহযোগীদের নাম জানিয়েছে। এরা হলেন- রবিন, ইমরান, অভি, আতিক, সোহান, ইকবাল, সাব্বির এবং তাপস। একজনের নাম জানাতে পারেনি চিকিৎসাধীন হাসান।

মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরে আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত ৫ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়িতে অভিযান শেষে আহত অবস্থায় আটক মো. হাসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১ নম্বর ব্লকে চিকিৎসাধীন আছে মো. হাসান।চিকিৎসাধীন হাসানের বাড়ি বগুড়ার জীবন নগরে। তার বাবার নাম রেজাউল করিম। সে স্থানীয় শাহ সুলতান কলেজের ছাত্র। অভিযানের শুরু হলে হাসান তিনতলা থেকে নীচে লাফ দেয়। এতে চোট লাগে তার মাথায় ও পায়ে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।

পুলিশ জানায়, আহত হাসান এক বছর আগে থেকে অন্যদের সঙ্গে জঙ্গি তৎপরতায় জড়ায়। এ সময় বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না বলেও সে পুলিশকে বলেছে। এক মাস আগে তাকেসহ অন্যদের এ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এখানে তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ সময় তাকে নিচে নামতে দেয়া হয়নি বলেও জানায় সে। সবাইকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে।ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আইজিপি বলেন, পুলিশ সোমবার রাত সাড়ে ১২টার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ওই বাসায় তল্লাশি করেত গেলে সেখান থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। কিছু সময় পর পুলিশ পুরো বাসাটি কর্ডন করে ফেলে যেন জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে না পারে।এরপর পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াট ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ঘটনাস্থলে যায় ও রেকি করে। ভোর ৫ টা ৫১ মিনিটে পুলিশ সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় জঙ্গিরা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের পরনে কালো রঙের জঙ্গি পোশাক ছিল, মাথায় ছিল পাগড়ি; সঙ্গে ছিল ব্যাগপ্যাক।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ভোরে সোয়াটের এক ঘণ্টার অভিযান অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স শেষ হলে ওই বাসায় নয় জনের লাশ পাওয়া যায়; যাদের সবার পরনে কালো পাঞ্জাবি ছিল।ওই বাসা থেকে আরও বেশ কিছু নতুন কালো পাঞ্জাবি ও কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে একটি গ্রেনেড ও একটি পিস্তল পাওয়া গেছে।গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার আগে পাঁচ জঙ্গি অস্ত্র হাতে কালো পাঞ্জাবি পড়ে আইএস এর কালো পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে, যা পরে আইএস প্রকাশ করে।ওই জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কয়েক দিনপর শ্যাওড়াপাড়া থেকে এক বাড়ির মালিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই বাড়িতেও জঙ্গিদের কালো পোশাক পাওয়া যায়।

আইএস গুলশানের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর এলেও বাংলাদেশের পুলিশ হামলাকারীদের জেএমবি সদস্য বলে আসছে। কল্যাণপুরের অভিযানের পর আবারও সে কথাই বলেছেন আইজিপি শহীদুল হক।আমাদের ধারণা তারা জেএমবির সদস্য, তবে ওরা নিজেদের আইএস বলে দাবি করে। আইএসের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।