27-07-16-Sajeeb Wazed Joy_Inauguration IT Incubator-1নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী শক্তিতে ‘অভিভূত’ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার বিশ্বাস তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ এক সময় সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। বুধবার ঢাকায় দেশের প্রথম ‘আইসিটি ইনকিউবেটর’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তরুণ উদ্যোক্তাদের সফল হতে লক্ষ্য ঠিক করে নির্দিষ্ট সময় ধরে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বমানের উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের সহায়তায় রাজধানীর জনতা টাওয়ারে স্থাপিত আইসিটি ইনকিউবেটর চালু করা হয়। আইসিটি ইনকিউবেটর ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরির একটি প্লাটফর্ম; যা তরুণদের ক্ষমতায়ন, কাজের সুযোগ প্রদান এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতি ও সমাজে কাজের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। হোটেল সোনারগাঁওয়ে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয় বলেন, “তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, লক্ষ্য অর্জনে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে এগিয়ে গেলে সাফল্য অর্জন সম্ভব হবে।”

সরকারের প্রত্যেক কাজের লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলেই বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাঁচ বছরের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করেছে, আওয়ামী লীগ মনে করে কিছুই অসম্ভব নয়। “বাংলাদেশ আর গরীব দেশ নেই; এখন মধ্যম আয়ের দেশ।”

দেশের উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরতে সেসব উদ্যোগ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ‘কানেক্টিং স্টার্টআপস বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব শুরু হয়।প্রতিযোগিতার ১০ বিজয়ীকে জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্টার্টআপদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানে বিনামূল্যে অফিস স্পেস ছাড়াও অর্থসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। অন্য প্রতিযোগীরাও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পাবেন। অনুষ্ঠানে বিজয়ী ১০টি গ্রুপের পাশাপাশি যারা জয়ী হতে পারেনি তাদেরও প্রশংসা করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আপনাদের উদ্ভাবন দেখে আমি অভিভূত। আমি আপনাদের কাজ দেখেছি, আমি এখন আত্মবিশ্বাসী, আমি জানি, বাংলাদেশ আইটি খাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে।”

নিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের মতো আমিও একজন আইটি উদ্যোক্তা ছিলাম। অনেকবার ব্যর্থ হয়েছি; তবে চেষ্টা করে এক সময় সফলতা পেয়েছি। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে, কিছুই অসম্ভব নয়; তাহলেই তোমরা করতে পারবে।”

তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু তথ্য প্রযুক্তিতে নয়, সব ক্ষেত্রেই তরুণদের সুযোগ দিচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জয় বলেন, “সাত বছর আগে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজ শুরু করা হয়েছিল, বড় শহরের বাইরে কোনো ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছিল না, ইন্টারনেটের দাম প্রতি মেগাবাইট ছিল এক হাজার ডলারের মতো; ছিল বিদ্যুৎ সমস্যা। “সেখান থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, অনেকে দিন-রাত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে নিজস্ব উদ্যোগে।”

আইসিটি ইনকিউবেটর স্থাপনে সহযোগিতার জন্য অনুষ্ঠানে বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিম্পেলকমকে ধন্যবাদ জানান সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা আইটিইউ’র মহাসচিব হাউলিন ঝাউ বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ আইসিটি ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং স্টার্টআপগুলো উদ্ভাবনের একটি দারুণ উৎস। “আমি বিশ্বাস করি, কোনো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রেখে সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। এজন্য আইটিইউ যেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আইসিটি উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপদের সঙ্গে কাজের পরিধি আরও বৃদ্ধি করে।”

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে প্রথমবারে মতো উদ্যোক্তাদের এই সুযোগ দেওয়া হল। প্রতিযোগিতায় জয়ী ১০টি গ্রুপ ছাড়াও প্রথম সারির ৫০টি গ্রুপ আগামীতে ভালো করবে বলে আশাবাদী তিনি। এ প্রসঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২০ লাখ কর্মসংস্থান এবং এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যের কথাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

ভিম্পেলকমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অগি কে ফাবেলা বলেন, আইসিটি ইনকিউবেটর সেন্টার ভিম্পেলকম গ্রুপের গ্লোবাল কর্পোরেট রেস্পন্সিবিলিটির ‘মেইক ইয়ার মার্ক’ এর অংশ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভিম্পেলকম স্থানীয় উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কর্মসূচি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত করছে।

বাংলালিংকের সিইও এরিক অস্ বলেন, “জাতির ভবিষ্যৎ হিসেবে আমরা তরুণদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। ইনকিউবেটর থেকে প্রাপ্য ‘বিস্ময়কর’ প্রকল্পগুলো নিশ্চিতভাবেই বাংলালিংককে আরও অধিক ডিজিটাল সেবা প্রদান এবং ডিজিটাল লাইফস্টাইলের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।” অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘কানেক্টিং স্টার্টআপস বাংলাদেশ’ এর ১০ বিজয়ী গ্রুপ বাংলালিংক-এর পক্ষ থেকে এক বছরের জন্য পূর্ণ সহযোগিতা পাবে।

বিজয়ী ১০ স্টার্টআপকে কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্থাপিত আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে এক বছরের জন্য বিনামূল্যে নির্ধারিত অফিস স্পেস, নিবেদিত মেন্টরশিপ এবং একসালেরেটর সাপোর্ট দেওয়া হবে। বিজয়ী ১০ স্টার্টআপ হল- অ্যাপ্লিকেশন ককপিট, ৬ এক্সিস, জিওন, বিডিরেটর্স ডটকম, কগনেটিভ হেড হান্টার, হিরোজ অব ৭১, একুশ, ইনটারঅ্যাকটিভ থেরাপি, ম্যাডভাইজার ও খুঁজুন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম উপস্থিত ছিলেন।