চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাজপথে ২২ নারী সার্জেন্ট-1

ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কয়েকমাস আগে ঢাকার রাজপথে নামা নারী সার্জেন্টদের এবার দেখা যাবে নতুন রূপে। মোটরসাইকেল নিয়ে কাজ করা পুরুষ সহকর্মীদের মতো তারাও এখন ব্যবহার করবেন স্কুটি।ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা ২২ জন নারী সার্জেন্টের হাতে রোববার পুলিশ সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুটির চাবি তুলে দেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। এসময় তিনি নারী সার্জেন্টদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।আছাদুজ্জামান বলেন,ট্রাফিক পুলিশের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা এখন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। নারীদেরকে কাজে লাগাতে হবে। জেন্ডার বৈষম্য থাকলে আমরা এগোতে পারব না। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।২০১৪ সালে পুলিশ বাহিনীতে নারী সার্জেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ৪৬ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে ২৮ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ২২ জন নিয়োগ পান ঢাকা মহানগর পুলিশে। আর হাইওয়ে পুলিশ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং খুলনা মেট্রোতে দুই জন করে নারী সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন।পুলিশ বাহিনীতে লিঙ্গ বৈষম্য কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, আপনারা বাহিনীতে মেধা, যোগ্যতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, কারও দয়ায় না। সুতরাং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনার জেন্ডার কি সেটা মনে রাখবেন না। আপনাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাজপথে ২২ নারী সার্জেন্ট

নারী সার্জেন্টরা রাস্তায় দাঁড়ানোয় ট্রাফিক ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিকে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, বিশৃঙ্খলা কমেছে, সুশৃঙ্খল হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে উল্টোপথে গাড়ি চলতে দেখা যায় না।ভবিষ্যতে আরও নারী সার্জেন্ট নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি।রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার।পড়াশুনা করেছি, কাজ করবো না তা কি হয়! আর চাকরিই যদি করবো তবে চ্যালেঞ্জ নিয়েই কিছুই করবো, এটাই ছিল ইচ্ছা। সে ভাবনা থেকেই সার্জেন্ট হয়েছি।

দেশের প্রথম নারী সার্জেন্টের একজন নাজিয়া আফরিন। এভাবেই তার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করলেন কাছে।নারী সার্জেন্টদের মধ্যে রাজধানীতে দায়িত্বরত ২২ জনের মাঝে স্কুটি বিতরণ অনুষ্ঠানেই কথা হয় তার সঙ্গে। অনুষ্ঠানটি রোববার (১৪ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশের (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই দেখা গেল, একেকটি নতুন লাল রঙয়ের স্কুটির পাশে ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন আত্মবিশ্বাসে ভরা এক একজন নারী সার্জেন্ট। সে যে কী সুন্দর দৃশ্য, কেবল দেখলেই অনুভব করা যায়!

২২ নারী সার্জেন্ট-2

চাকরি, স্কুটি চালনা, ট্রাফিক নিয়ে উপলব্ধির কথা জানতে চাইতেই শুরু করেন নাজিয়া আফরিন। বলেন-‘প্রথমেই বলব লেডি নয়, নিজেকে সার্জেন্ট ভাবি। কেননা, নারী হিসেবে নয়, সার্জেন্ট হিসেবেই কাজ করতে এসেছি। সব নতুন অভিজ্ঞতাই রোমাঞ্চকর। কিছুটা ভয়েরও। আর এ পেশাটাতো অনেক চ্যালেঞ্জের। ঝড়, বৃষ্টি, দাবদাহ, বজ্রপাতকে উপেক্ষা করেই কাজ করতে হয়। তাই আত্মবিশ্বাসী হলেও প্রথমে ভয়টা ছিল। তবে এখন নেই।এছাড়া মোটরসাইকেল চালনাটা শেখাও ভয়ের ছিল। এখন তা নেই। জয়েন করার পর অনেক কষ্ট হতো ডিউটিতে। এখন স্কুটি পাওয়ায় তা কমে যাবে। সেবার মানও বাড়বে।তিনি বলেন, এখন কেউ ট্রাফিক আইন অমান্য করেই পার পাবেন না। দ্রুত ধরে ফেলা যাবে। বাধ্য করা যাবে আইন মানতে।পুরুষের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে কাজ করতে স্কুটি অনেক সহায়তা দেবে। তাই, ভালো সার্ভিস দিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা নাজিয়ার। তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বহ্মপুত্র তীরবর্তী খাগডহর এলাকায়। তিনি ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বাংলায় অনার্সসহ মাষ্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

প্রায় একই মনোভাব দেখা গেল পঞ্চগড়ের মেয়ে জিন্নাত রেহানার মাঝেও। তিনি বলেন, মেয়েরা কোনো দিক থেকে আর পিছিয়ে নেই। আমরা পুরুষের পাশাপাশি থেকেই কাজ করতে সক্ষম।২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো নারী সার্জেন্ট নিয়োগ দেয় সরকার। এদের মধ্যে ২২ জন ডিএমপিতে দায়িত্বরত রয়েছে। আর ৬ জন আছেন ঢাকার বাইরে।গত ৩০ জুলাই মোটরসাইকেল চালনা প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট সমাপ্ত হওয়ায় পর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া লেডি সার্জেন্টদের হাতে স্কুটির চাবি তুলে দেন। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।