24-08-16-PM_Check Distribution-40

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র চরিত্রের কোন বদল হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান-সন্ততি, আত্বীয়-স্বজনদের নবগঠিত কমিটিতে স্থান দিয়ে বিষয়টি তারা পুরো জাতির কাছে স্পষ্ট করেছে।তিনি বলেন, ৫শ জনের একটা তালিকা দিয়ে তারা একটা কমিটি গঠন করেছে। যেখানে যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত, পাক হানাদারদের সহযোগিতা করার জন্য যাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হয়েছে, তাদেরকে রেখেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালের পর আপনারা দেখেছেন যে কি ঘটেছে, সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের ওপর এরা আক্রমণ করেছে এবং এদের চরিত্র একটুও বদলায়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, যাদের বিচার হয়েছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে- এদেরই ছেলে-পেলে নিয়ে যদি কোন দল গঠন করা হয়- তো সেই দল কি এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, সে দল কি দেশের মানুষের জন্য শান্তি আনতে পারে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তাঁর কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচছল ও দুর্ঘটনাজনিত আহত এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের জন্য বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্র্রাস্ট (ডব্লিইজেডব্লিউটি)-এর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান অন্ষ্ঠুানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইসব যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কমিটিতে স্থান দেয়া অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আজকে দেশের মানষের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত। তারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন,এ চক্র দেশটিকে একটি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ সময় বলেন, সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ এদেশে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। আর এই লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কোন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের স্থান হবে না।দেশের চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের বিচার কোন নতুন ঘটনা নয়। দেশে প্রায় ২১ বছর যুদ্ধাপরাধী চক্র শাসন ক্ষমতায় থাকায় তারা অবৈধ বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ে তুলেছে। যে কারণে নানাভাবে বিচারকে প্রভাবন্বিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আমাদের নীতিতে অটল রয়েছি। আমরা এই বিচার কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং এজন্য ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা, জীবন-মৃত্যু কোন কিছুরই আমরা তোয়াক্কা করি না।তিনি বলেন, ক্ষমতা কোন ভোগের বিষয় নয়। ক্ষমতা হচ্ছে মানুষের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিষয়।শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ স্থাপনে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ কাজ করেছে। আপনারা (সাংবাদিক) কেউ আমাকে কোনো পরামর্শ দেননি। নিজ উদ্যোগে করেছি। এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম জাতির পিতার কাছ থেকে। কেননা জাতির পিতা সংবাদপত্রে কাজ করতেন।তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক রাহাত খান, গোলাম সারোয়ার, আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে ১৯৬ সাংবাদিক এবং সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রধানমন্ত্রী অনুদানের চেক তুলে দেন।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বিল পাশ হয়। এর ভিত্তিতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার এই ট্রাস্ট গঠন করে।প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিএনপি’র সন্ত্রাস ও তাদের শাসনামলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ সালের পর আপনারা দেখেছেন যে কি ঘটেছে সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের ওপর এরা আক্রমন করেছে এবং এদের চরিত্র একটুও বদলায় নাই।

এ সম্পর্কে বিএনপির নবগঠিত কমিটিকে নিয়ে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫শ’ জনের একটা তালিকা দিয়ে তারা একটা কমিটি গঠন করেছে। যেখানে যুদ্ধপিরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত, পাক হানাদারদের সহযোগিতা করার জন্য যাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হয়েছে, তাদেরকে রেখেছে।তিনি এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বঙ্গবন্ধুর প্রথম উদ্যোগ গ্রহণের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এটা বাংলার মানুষের একটা দাবি ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। জাতির পিতা সেই বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই যুদ্ধাপরাধীদেরকে মুক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেই বিচারের জন্য যে অর্ডিন্যান্সনের মার্শাল ‘ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বাতিল করা হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দিয়ে তাদের রাজনৈতিক ও সমাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল এবং যারা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল পাকিস্তানী পাসপোর্টে, সেই পাকিস্তানী পাসপোর্টেই তাদের আবার দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্বও দেয়া হয়। অথচ তারা বাংলাদেশেই বিশ্বাস করে না।বিএনপির নতুন কমিটিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের থাকার প্রসঙ্গ তুলে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি না- সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এসময় সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছে-সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন,যেসব যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের সাথে জড়িত, এদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা করেছে, যাদের বিচার হয়েছে বাংলার মাটিতে; তাদেরই বংশধর, তাদেরই ছেলেপেলে, তাদেরকে নিয়ে যদি কোনো দল গঠন করা হয়, তাহলে সেই দল কি এই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? সেই দল কি এদেশের মানুষের জন্য শান্তি আনতে পারে?শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের শান্তিতে বিশ্বাস করে না, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, এটা হল বাস্তবতা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে অর্থ ঢেলে বিদেশে লবিং করার অভিযোগ তুলে বিচার চলতে থাকবে বলে জানান তিনি।আমাদের যে সিদ্ধান্ত তাতে আমাদের অটল থাকতে হবে। আপনারা জানেন যে, আমরা তাতে থাকবো। কারণ আমার ক্ষমতা হারানোরও ভয় নেই, জীবন হারানোরও ভয় নেই।

শেখ হাসিনা এসময় জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, কিন্তু এখানে অনেক বিভৎস ঘটনা দেখি, যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না।জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজকে সমগ্র জাতি সোচ্চার। আপনাদেরও আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যে, আপনারাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন; আরও সোচ্চার হবেন- সেটাই আমি আশা করি।জনগণের মাঝে যদি আমরা সচেতনতা গড়তে পারি তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।প্রধানমন্ত্রী এসময় দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উচু করে চলতে হবে।

তিনি সাংবাদিকদের জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা ও আবাসন সুবিধাসহ তার সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপও তুলে ধরেন।অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবি জানালে সে বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।আমার কাছে দাবি করার প্রয়োজন হয় না। ট্রাস্টের দাবি আপনারা কেউ করেননি।অষ্টম ওয়েজ বোর্ড আমরা দিয়েছি। আপনারা নবমের দাবি তুলেছেন। এখানে মন্ত্রী আছেন, আমি বলবো, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।পাশাপাশি সাংবাদিকদের দায়িত্বের সঙ্গে কর্তব্য পালনের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু সে স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্বও পালন করতে হয়, দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি দায়িত্ব।এসময় গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা ও বিডিআর বিদ্রোহের সময় টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্র সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আমাদের দেশেই ভোগ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে যেসব ঘটনা ঘটায় তাতে অসুবিধায় পড়ে যেতে হয়।

এজন্য সাংবাদিকদের নীতিমালা মেনে চলতে হবে- মন্তব্য করেন অনলাইন নীতিমালা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখারও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।একটাই উদ্দ্যেশ্য ছিল, আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার বিভিন্ন হত্যাকান্ড ও হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যখন থাকে তখন জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়।সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচারের হাত থেকে। সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে যে অকথ্য নির্যাতন করেছে, অনেকেই সে নির্যাতনের চিহ্ন এখনো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ইতোমধ্যে একজন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাকীদের হত্যার বিচারও আমরা করবো। সে ব্যাপারে আপনাদের সকলের সহযোগিতা দরকার।এখানে আমি কেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে আসিনি। একটা কথা মনে রাখবেন আমিতো সব হারিয়ে এসেছি। তাই আমার হারাবার কোন ভয় নেই। নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে। শেখ হাসিনা এসময় তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশপাশি সংবাদপত্রে জড়িত থাকার কথাও উল্লেখ করেন।তিনিও একসময়, যখন ছাত্র রাজনীতি করেছেন তখন পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই সময় নিজে হাতে করে পত্রিকা বিক্রি করা থেকে শুরু করে পত্রিকায় কাজ করা, সেটাও তিনি করেছেন। কাজেই আমি কিন্তু আপনাদেই পরিবারেরই একজন।অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ১৯৬ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে মোট এক কোটি ৪০ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়।২০১৪ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন পাসের পর ট্রাস্ট গঠন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, পাঁচ কোটি টাকা ‘সিড দিয়ে’ এ তহবিল গঠন করা হলেও ‘অর্থশালীরা কেউ এ তহবিলে দান করেননি।আগামীতে অর্থশালীরা এ তহবিলে দান করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।