24-08-16-Khaleda Zia-2সুন্দরবনের রামপালে প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পকে হঠকারী, অযৌক্তিক ও অলাভজনক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ বিবেচনায় না নিলেও জেনেশুনে সরকার কী উদ্দেশ্যে, কার স্বার্থে লোকসানি প্রকল্প রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে জড়ালো?’ বুধবার বিকাল ৫টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রামপাল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবির পক্ষে সোচ্চার হতে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় অগ্রহণযোগ্য দিক হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের জন্য অলাভজনক। এই প্রকল্পের ১৫ শতাংশ অর্থ জোগান দেবে বাংলাদেশের পিডিবি, ১৫ শতাংশ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে। দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে রামপাল থেকে বিদ্যুৎ কিনে পিডিবিকে অবশ্যই ভর্তুকি দিয়ে জনগণের কাছে বিক্রি করতে হবে বলে পিডিবির লভ্যাংশ শেষ পর্যন্ত লোকসানে পরিণত হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও জনজীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যদি দেশ এবং দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত হয় দেশবিরোধী-গণবিরোধী। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এমনই একটি দেশবিরোধী-গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাগগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ৫৬৫ মেগাওয়াট ওরিয়ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। দেশ-বিদেশের পরিবেশবিদ, সামাজিক সংগঠন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের প্রকল্পের মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে জমি ভরাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে।’

সরকার জবরদস্তিমূলক জনগণের ওপর জনবিরোধী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সুন্দরবনের এত কাছে স্থাপিত কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনিবার্য অশুভ ও মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার সব প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপরও সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে শুধু অস্বীকৃতিই জানাচ্ছে না, বরং আরও দ্রুত এই গণবিরোধী-দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগী হয়েছে। এর দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো যে, এই সরকার স্বৈরাচারী বলেই জনমত কিংবা দেশের স্বার্থের পরোয়া করে না।’

রামপাল প্রকল্প দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক বেষ্টনী ধ্বংস করবে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘জীব-বৈচিত্র্যের বিলোপ ঘটাবে, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের কারণ হবে, পরিবেশ ও পানি দূষিত করবে, আশেপাশের কৃষি জমির উর্বরাশক্তি এবং মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করবে। সর্বোপরি এ প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবেও অলাভজনক। তারপরও এটি বাস্তবায়নে সরকারের যুক্তিহীন জেদ শুধু সন্দেহজনক নয়, দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়ও।’ যে সুন্দরবন লাখ-লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করছে, যে সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এই দেশকে আইলা, সিডর, ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য প্রাকৃতিক সুরক্ষা দিচ্ছে, সেই আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের শিকার করার চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া যায় না, দেওয়া উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ উপেক্ষা করে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রায় আট হাজার পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফসলী জমি ও মাছের ঘের ভরাট করা হয়েছে। এই উচ্ছেদকৃত কৃষিজীবীদের সঙ্গে সুন্দরবনে কাঠ, গোলপাতা, মধু সংগ্রহ করে এবং এর আশপাশের নদী ও খালে মাছ শিকার করে যে হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতো তারাও বেকার ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সুন্দরবনের এত কাছে পশুর নদীর তীরে রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের পশু-পাখির সংখ্যা অনিবার্যভাবে কমে যাবে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।