মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারে এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এবার জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে তার কবর সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানালেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৭ আগস্ট) গাজীপুরের কাশিমপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা জানান। এর আগে, গত বুধবার (২৪ ‍আগস্ট) মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধপরবর্তী বিতর্কিত ভূমিকা প্রমাণ করে, তিনি স্বাধীনতা চাননি। এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তির কবর পবিত্র সংসদ এলাকায় থাকতে পারে না। তাই সংসদ এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরানো হবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা সরাসরি জড়িত ছিল তাদের বিচার হলেও নেপথ্যে যারা ছিল তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে দেশি বা বিদেশি যারা জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন করা হবে।এর আগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারে মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তখন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে পুরস্কার দেওয়ায় আপত্তি জানিয়ে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ওই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে। তখন এই পদক দু’টি বিতরণ না করে প্রদর্শন ও সংরক্ষণের জন্য জাতীয় জাদুঘরে দিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমানের পদকটি গ্যালারি থেকে সরিয়ে গুদামে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভা কমিটি জিয়াউর রহমানের পুরস্কার প্রত্যাহারের পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘর থেকে ওই পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্রও সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছে।

সূত্রমতে, মন্ত্রিসভা কমিটি মনে করে একইসঙ্গে দু‘জনকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে জিয়াউর রহমানকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাছাড়া, স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। যারা দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রেখেছেন তারাই পান এই পুরস্কার। জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি পদ বা রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণের বিষয়টি হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আমলে নিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এ জন্যই কমিটি পুরস্কার প্রত্যাহার এবং মেডেল ও সম্মাননাপত্র জাদুঘরে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটি মনে করে, এই পুরস্কার যদি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে ভুল ইতিহাস উপস্থাপিত হবে এবং একটি ভুল বার্তা যাবে।