খন্দকার আয়েশা খাতুন

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করে তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেছেন, তাদের তুলে নেওয়া ছেলেকে না পাওয়া পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারছেন না।দুই মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনিম, পুত্রবধূ শাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার এবং ভাতিজা হাসান জামালকে নিয়ে বুধবার দুপুরে কাশিমপুর কারাগারে কাসেমকে দেখতে যান আয়েশা।প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।কাসেমপতœী বলেন, আমার ছেলে ও আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেমকে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রাণভিক্ষা বা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। এরপর আর কোনো কথা না বলে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে চলে যান যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেমের পরিবারের ছয় সদস্য।

ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেমকে ‘ফিরে পাওয়ার’ পর তার সঙ্গে কথা বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ তার সঙ্গে কথা বলে এসে এ কথা জানান মীর কাসেমের স্ত্রী খোন্দকার আয়শা খাতুন। এ কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি আছেন দেশের শীর্ষ এই যুদ্ধাপরাধী।বুধবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে কারাগারের গেটে আসেন মীর কাসেমের পরিবারের দশজন সদস্য। পরে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা।প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা সাক্ষাত শেষে চারটার দিকে কারাগারের বাইরে বের হয়ে আসেন তারা।

কারাগেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খোন্দকার আয়শা খাতুন। তিনি দাবি করেন, আমাদের ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম নিখোঁজ আছেন। তাকে ২০-২২ দিন আগে সাদা পোশাকধারী লোকজন ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আমাদের ছেলে নিখোঁজ রয়েছেন। আমার স্বামী মীর কাসেম আলী বলেছেন, ছেলে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। তিনি শুধু আমাদের ছেলেই নন, আইনজীবীও। তাই ছেলে ফিরে এলে তার সঙ্গে কথা বলেই প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন। ছেলেকে কাছে পাওয়াই এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য বলেও দাবি করেন মীর কাসেমের স্ত্রীআয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য তার ছেলে ও আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেমের অপেক্ষায় আছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে মীর আহমেদ বিন কাসেমের সঙ্গে আলোচনা করা খুবই দরকার। আমরা ছেলের অপেক্ষায় আছি। তাকে ফিরে পেলে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে পরামর্শ করে তা জানানো হবে।

বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফাঁসি বহাল রেখে রিভিউ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় কাশিমপুর কারাগারের ভেতর পড়ে শোনানো হয় মীর কাসেম আলীকে। এ সময় প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে জানতে চাইলে, তিনি ভাবার জন্য কিছু সময় চান।এরপর মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান তার পরিবারের সদস্যরা। রাষ্ট্রপতির কাছে মীর কাসেমের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে এ সাক্ষাত করেন তারা।

কাশিমপুর কারাগার-২ এর জেলার নাসির আহমেদ জানান, মীর কাসেম আলীর পরিবারের সদস্যদের কারা কর্তৃপক্ষ ডাকেনি। তারা স্বেচ্ছায় কারাগারে এসেছেন। শুনেছি, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া না চাওয়ার বিষয়ে মীর কাসেমের সঙ্গে কথা বলেন তারা। জেলার জানান, বুধবার দুপুরে মীর কাসেমের পরিবারের শিশুসহ ১০ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আসেন। পরে সাক্ষাতের জন্য আবেদন জানালে কারাগারের ভেতর একটি কক্ষে তাদের সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়।কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, পরিবারের সদস্যরা প্রায় দুই ঘণ্টা মীর কাসেমের সঙ্গে কথা বলেছেন।

মীর কাসেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে গত ১০ অগাস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ বলছে, বিষয়টি তাদের অজানা।মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে কারাগারে বসে এক ব্যান্ডের রেডিওর মাধ্যমে সে খবর জানতে পারেন মীর কাসেম।বুধবার সকালে তাকে তার রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না- সে সিদ্ধান্ত জানাতে কাসেম সময় চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার।সব বিচারিক প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি হওয়ায় জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের সামনে এখন কেবল ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগই বাকি।তিনি প্রাণভিক্ষার সুযোগ নিতে চাইলে তার দরখাস্ত রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পরই দন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।আর আবেদন না করলে, অথবা আবেদন করেও রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা না পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ দন্ড কার্যকর করবে।কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, সকালে রায় পড়ে শোনানোর পর কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছিল মীর কাসেমকে। তার চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগ। ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী ২০১২ সাল থেকে এ কারাগারে রয়েছেন। শুরুতে কারাগারে ডিভিশন পেলেও ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডের রায়ের পর তাকে পাঠানো হয় কনডেম সেলে।