%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%be

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম বিতর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। বিতর্ক শেষ হওয়ার পর সিএনএন/ওআরসির এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মার্কিনিই বিতর্কে হিলারিকে বিজয়ী মনে করছেন। যোগ্যতা নেতৃত্ব আর বোঝাপড়ার প্রশ্নে তারা এগিয়ে রাখছেন হিলারিকে।

বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার সকালে তারা প্রথম পরস্পরের মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। একে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের ইতিহাসে ‘সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিতর্ক’ বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে। ৯০ মিনিটের এই বিতর্কে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এনবিসি টিভির লেস্টর হল্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত প্রথম ওই বিতর্কে উঠে আসে বর্ণবাদ, যুদ্ধ, পররাষ্ট্রনীতি ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

বিতর্কের পর সিএনএন/ওআরসির প্রকাশ করা এক জরিপে বলা হয়, ৬২ শতাংশ মনে করেন হিলারি জয়ী হয়েছেন। আর মাত্র ২৭ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। যারা সরাসরি বিতর্কটি দেখেছেন, টেলিফোনে তাদের সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে এই জরিপ সম্পন্ন হয়। সরাসরি বিতর্ক উপভোগকারী রেজিস্টার্ড ভোটারদের মধ্যে ৫২১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপটি পরিচালিত হয়েছে। সিএনএন/ওআরসির হিসেব অনুযায়ী, জরিপের ফলাফলে ৪.৫ শতাংশ ত্রুটিবিচ্যূতি থাকতে পারে। এই জরিপে নির্বিচারি নমুনায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সিএনএন-এর খবরে বলা হয়েছে ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির মধ্যে অনুষ্ঠিত বিতর্কের ফলাফলও এমনটাই হয়েছিল। নির্বাচনি বিতর্কটি নিয়ে রেজিস্টার্ড ভোটাররা বলেছেন, ট্রাম্পের চেয়ে নিজস্ব মতামত অনেক যথাযথ ও স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন হিলারি। তারা মনে করেন, নির্বাচনী ইস্যুগুলোতে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারির বোঝাপড়া অনেক স্বচ্ছ। প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতার প্রশ্নেও এগিয়ে রয়েছেন হিলারি।

জরিপে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ মার্কিনি হিলারিকে ট্রাম্পের চেয়ে বেশি উপযুক্ত প্রার্থী মনে করেন। বিপরীতে ট্রাম্পকে বেশি যোগ্য মনে করেন ৩৫ শতাংশ ভোটার। আর শক্তিশালী নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নেও হিলারিকে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা। ৩৯ শতাংশ ভোটার যেখানে ট্রাম্পের শক্তিশালী নেত্বত্বে আস্থার কথা জানিয়েছেন, সেখানে হিলারির প্রতি আস্থা রেখেছেন ৫৬ শতাংশ ভোটার।

নিষ্ঠা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে অবশ্য দুই প্রার্থীর মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান দেখছে না ভোটাররা। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ মার্কিনি হিলারিকে বেশি নিষ্ঠাবান মনে করেন, যেখানে ট্রাম্পের নিষ্ঠায় আস্থার কথা জানান ৪০ শতাংশ ভোটার।

জরিপে ট্রাম্প অবশ্য একটি ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছেন। প্রতিপক্ষকে আক্রমণেই বেশি সময় ব্যয় করার প্রশ্নে হিলারির চেয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। কে বেশি আক্রমণকারী সেই প্রশ্নে ৩৩ শতাংশ মার্কিনি হিলারির কথা বলেছেন। যেখানে ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখেছেন ৫৬ শতাংশ ভোটার।

উল্লেখ্য, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে দুই প্রার্থী ইতিমধ্যে প্রায় দেড় বছর কাটিয়েছেন। তাঁরা অসংখ্য বিতর্ক ও নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়েছেন। পত্রিকা-টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এসব ছাপিয়ে দুজনের জন্যই মুখোমুখি বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রায় অর্ধেক মার্কিন ভোটার বিতর্ক দেখেই পছন্দের প্রার্থী বাছাই করে থাকেন। সামনে এমন আরও দু’টি বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন হিলারি ও ট্রাম্প।

একটি হিসাবে বলা হয়েছে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প অন্তত ১৬টি মিথ্যাচার করেছেন। পক্ষান্তরে হিলারির বক্তব্যে কোনও মিথ্যা ছিলো না। তবে দুই-একটি অস্পষ্ট কিংবা ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয় এমন বক্তব্য তিনিও দিয়েছেন। তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে, সামাজিক মাধ্যম যেখনে সব কিছুই মুক্ত করে দিয়েছে তখন আর কোনও কিছু গোপন থাকে না। আর সে কারণে যে কোনও মিথ্যাচার দ্রুতই প্রমাণিত হয়ে যায়। ফলে ডনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কে যেসব মিথ্যা বলেছেন, তার অতীত মন্তব্যের যেগুলো অস্বীকার করেছেন, সেগুলোই এখন সামনে আসছে তুলনামূলক বিচারে।

যাতে উভয় প্রার্থীর সত্যকথন, অনেকাংশেই সত্য, সত্য তবে অস্পষ্ট, মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ এসব মাত্রায় বিবেচনা করা হয়েছে।জলবায়ূ পরিবর্তন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের অতীত মন্তব্য ‘এটা স্রেফ চীনের ধোঁকাবাজি’ প্রসঙ্গ তুলে আনলে ট্রাম্প বলেন, তিনি এমন কথা বলেননি। তাহলে কে সত্য বললেন হিলারি নাকি ট্রাম্প?

তথ্য হচ্ছে ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর একটি টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন কথাটি চীনারা তাদের স্বার্থেই সৃষ্টি করেছে, যাতে একচ্ছত্রভাবে তৈরি খাতের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। তারও একবছর পর টেক্সাস লুজিয়ানা অসময়ে বরফ ঢাকা পড়ার পর ট্রাম্প আরেকটি টুইটে বলেছেন ‘বিশ্ব ‍উষ্ণায়ন একটি ধোঁকাবাজি।’

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বিতর্কে হিলারি ক্লিনটন দাবি করেন, তার যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তাতে দেশে ১০ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর ডনাল্ড ট্রাম্প ডনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ৩.৪ মিলিয়ন লোক কাজ হারাবে। ক্লিনটন তার বক্তব্যে ওই দিনই মার্ক জানদির একটি বিশ্লেষণকে উদ্ধৃত করেন। এই বক্তব্য অবশ্য অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ ছিলো। জানদির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, হিলারি যদি কিছু নাও করেন ৭ মিলিয়ন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে আর তিন মিলিয়ন কর্মসংস্থান হবে।

ট্রাম্প বলেন, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে প্রশান্তমহাসাগরীয় অংশীদারিত্বকে অনুসমর্থন করবেন। হিলারিকে তিনি বলেন, আপনি এর সমর্থক। এটি স্বর্ণালী সম্ভাবনা। উত্তরে হিলারি বলেন, আমি বলেছি, বিষয়টি ভালো। তবে যখন এ নিয়ে আলোচনা হয় তার অংশ আমি ছিলাম না। রেকর্ড বলছে, ২০১২ সালে হিলারি একটি বক্তৃতায় এই অংশিদারীত্বকে স্বর্ণালী সম্ভাবনা বলেছেন। সুতরাং তিনি বিতর্কে সেটি অস্বীকার করলেন। তবে ট্রাম্প যে বলেছেন, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে এটি অনুমোদন দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন সেটি একটি মিথ্যাচার।

বিতর্কের শুরুতেই মিথ্যাচার করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। হিলারি যখন বলেন তিনি তার বাবার কাছ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার নিয়েই ব্যবসা শুরু করেছেন তখন ট্রাম্প বলেন, তিনি মোটে ১ মিলিয়ন ডলার নিয়েছিলেন। যেটি মিথ্যা। এছাড়া ট্রাম্প নিজেকে একজন সেল্ফ মেড ম্যান হিসেবে দাবি করেন সেটিও মিথ্যাচার। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে ১৯৮৫ সালে একটি ক্যাসিনো লাইসেন্স ডকুমেন্ট থেকে দেখা যায় ট্রাম্প তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের কাছ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার লোন নিয়েছেন।

জাতীয় ঋণ প্রসঙ্গে ট্রাম্প আগে থেকেই বলে আসছে তিনি নির্বাচিত হলে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ‍ঋণের পরিমান কমিয়ে আনবেন। গত মে মাসে প্রার্থীতার বিতর্কে তিনি বলেছিলেন, তিনি ঋণ দাতাদের বলে কয়ে ঋণের চেয়ে কম অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। অথচ হিলারি যখন এই প্রসঙ্গ তুললেন, তখন ট্রাম্প বার বার বলছিলেন, হিলারি ভুল বলছেন। গৃহায়ণ সঙ্কটের পেছনে ট্রাম্পকে দায়ী করেন হিলারি ক্লিনটন। ২০০৬ সালে এক বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছিলেন, আমার প্রত্যাশা পুরো প্রক্রিয়াটি ভেঙ্গে পড়ুক। তার পর আমি এতে ঢুকবো আর কিছু পয়সা কামাবো। হিলারির এই বক্তব্য অস্বীকার করেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ব্যবসা এমনই হয়। যাই হোক বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সত্য কথাই বলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। স্টপ অ্যান্ড ফ্রিস্ক প্রসঙ্গে ট্রাম্প দাবি করেন নিউইয়র্কে এই ব্যবস্থা অসাংবিধানিক নয়।

অথচ ২০১৩ সালে তৎকালীন মেয়র ব্লুমবার্গের নেওয়া একটি নীতি কেন্দ্রীয় আদালত এই কারণে বাতিল করে দেয়। সুতরাং ট্রাম্পের দাবিটি মিথ্যা। বার্থার আন্দোলন তথা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক নিয়ে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব শুরু হয় ২০০৮ সালে ক্লিনটন ক্যাম্পেইন থেকেই, এমন দাবি করেন ট্রাম্প। এজন্য ক্লিনটনের দীর্ঘ সময়ের বন্ধু সিডনি ব্লুমেন্থালকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, ব্লুমেন্থালই বিষয়টি সাংবাদিকদের বলেছেন। অনেক দিন ধরেই ট্রাম্পের এমন বক্তব্য অস্বীকার করে আসছিলেন। আর ব্লুমেন্থাল এমন কিছু করেছেন তার কোনও প্রমাণও কোথাও নেই। সুতরাং ট্রাম্প মিথ্যাচার করেছেন।