174049hasina_5আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে উত্‍সবের আমেজ বিরাজ করছে৷আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা নগরী৷ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে স্থাপনাকে ঘিরে ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে৷আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ও কার্যালয় রাস্তাঘাট বিভিন্ন রংয়ের বাতির নানা রঙের আয়োয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে৷ তোরণগুলো সিনিয়র নেতাদের দখলে থাকলেও ব্যানার, ফেস্টুনে বেশি জায়গা দখল করে রেখেছেন-পদপ্রাপ্তির আশায় থাকা নেতাকর্মীরা৷সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, সম্মেলন স্থলে চোখ ধাঁধাঁনো আলোকসজ্জার ব্যবস্থাসহ নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারসহ অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে উদ্দ্যানটি৷ নৌকার আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলনের মূল মঞ্চ৷ এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের ওপরে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে৷এসব তোরণগুলোতে বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাসের বিভিন্ন আলোক চিত্র সাঁটানো হয়েছে৷ তাছাড়া জঙ্গিবাদের পক্ষ অবলম্বন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য সনি্নবেশিত থাকবে লিফলেট, ব্যানার ও পোস্টারে৷

পাশাপাশি চলছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা৷ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলন শনিবার শুরু হচ্ছে৷ সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার৷ এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার৷ সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উত্‍সাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে৷দলীয় সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৬ হাজার ৫শ’ ৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন৷ সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন ২৩ অক্টোবর রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে৷ সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে৷ এসময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এ নির্বাচন কমিশন৷ তিন সদস্যের এ কমিশনের সদস্যারা হলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রশিদুল আলম৷উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ এছাড়াও দেশের কুটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন৷

অন্যদিকে ১২টি দেশের ৫৫জন অতিথি এই সমম্মেলনে যোগ দিচ্চেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে৷ ইতোমধ্য সারাদেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে৷ ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ৷ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে৷
সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা শহরগুলো সাজানো হয়েছে৷ শুধু দেশেরই নয়, প্রবাসী বাঙালীদেরও দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে৷ আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলটি কেমন নেতৃত্ব আনছে, ঘোষণাপত্রে কী ঘোষণা থাকছে, সেটি দেখার অপেক্ষায় এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষ৷

অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে নির্বিঘ্নে করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশক্ষণপ্রাপ্ত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক৷আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম৷তিনি জানান, সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন৷ তারা সম্মেলনস্থল, ৭টি প্রবেশপথসহ আশেপাশের এলাকায় ৫০টি ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করবেন৷ প্রত্যেক ইউনিটে একজন টিম লিডার থাকবেন, তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন৷সাজ-সজ্জা উপ কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন হবে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ৷ এর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং গৌরব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হবে৷ ঢাকা শহরসহ সারা দেশে আলোকসজ্জা শেষ হয়েছে৷ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এসব সাজ-সজ্জায়৷

সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের হাতে দেওয়া হবে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের ভিডিও সিডি৷ সেখানে জঙ্গিবাদের পক্ষে দেওয়া তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে৷ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাজসজ্জার সাথে সাথে ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতেও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ছাপ পড়েছে৷ সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক সাবি্বর বিন সামস বলেন, ২০তম জাতীয় কাউন্সিল আওয়ামী লীগের নিজস্ব ফেসবুক পেজে থেকে সরাসরি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করা হবে৷ ফেসবুকে সম্মেলন সরাসরি দেখতে এ লিংকে ক্লিক করতে হবে যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/বাবহঃং/১৯০৫৯১২৫৪৬৮৩৪৩২/ ৷ ২২ ও ২৩ অক্টোবরের সম্মেলনে ৫০ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট বসার ব্যবস্থা থাকবে৷ তাদের সুবিধার্থে ১০টি বড় পর্দায় সম্মেলন দেখানো হবে৷

এছাড়াও অনলাইনে অংশগ্রহণ এবং সমর্থন জানানোর জন্য যঃঃঢ়://নধফমব.ধষনফ.ড়ত্‍ম লিঙ্ক এ গেলে ফেসবুক ফটোতে ব্যাজটি সংযুক্ত করা যাবে৷ এরপর সেই ফটোকে করা যাবে প্রোফাইল পিকচার ৷ ব্যাজটিতে একদিকে লেখা আছে: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন, অন্যদিকে এবারের সম্মেলনের সস্নোগান: ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’৷ ব্যাজের উপরের দিকে আওয়ামী লীগের লোগোও আছে৷ ১২ দেশের ৫৫জন অতিথি আসছেন : চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কানাডা, অস্টোলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকাসহ ১২টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন৷ তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে৷দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা, কাউন্সিলর, প্রতিনিধি, দেশী-বিদেশী অতিথি ও শুভানুধ্যায়ী মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের আগমন আশা করা হচ্ছে৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭টি প্রবেশপথ করা হয়েছে৷ এছাড়া থাকছে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস৷

১৫০/৮৪ ফুট সুবিশাল মঞ্চ তৈরি : সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে৷ লম্বায় ১৫০ ফুট, চওড়ায় ৮৪ ফুট৷ মঞ্চের ছাদের উ”চতা ৪২ ফুট৷ নির্মাণকাজে যুক্ত কর্মীরা জানান, মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ সত্মরের৷ একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট৷ যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে৷ সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন৷ আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে৷মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়ে গেছে৷ এর ভেতরে ২০ হাজার চেয়ার রাখা হয়েছে৷ রয়েছে ১৬টি এলইডি টেলিভিশন৷ গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক কারিগর মঞ্চ তৈরির কাজ করেছেন৷ চারুকলার প্রায় দেড় ডজন ছাত্র সুদৃশ্য এই মঞ্চ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে৷ বৃহস্পতিবার রাতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মঞ্চটি বুঝিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা৷১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের৷ এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৬৭ বছর৷ এ পর্যনত্ম দলটির ১৯টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়৷ সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম৷

এদিকে, আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের আগামী দিনের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির বিষয়টি চিনত্মায় রেখেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ধরনের পরিবর্তনের কথা চিনত্মা করছেন৷এই পরিবর্তনের ফলে দলের বর্তমান ৭৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদের অনত্মত ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নয়৷নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, কমিটি মনোনীত করবেন নেত্রী (শেখ হাসিনা)৷ তাই কারা বাদ পড়বেন, নতুন কারা আসবেন সেটা বলা কঠিন৷নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতারা জানান, ২০০৯ সালের সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগে বেশ কিছু নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে৷ ওই সম্মেলনে আকস্মিকভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিরাট পরির্তন আনা হয়৷ তখন পুরোনো অনেক নেতাকে বাদ দিয়ে নতুনদের অনত্মর্ভূক্ত করা হয়৷ গত দুই মেয়াদে তারা দায়িত্ব পালন করে নেতৃত্বের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন৷একইভাবে এবারের সম্মেলনেও পরিবর্তন আসতে পারে৷ ফলে বর্তমান নেতৃত্ব থেকে একটি অংশকে বাদ দিয়ে সেখানে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে৷এই পরিবর্তন কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতিমন্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমন্ডলী এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পর্যনত্ম হতে পারে৷ এদিকে, আওয়ামী লীগের বর্তমান ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদের আকার বাড়ানোরও সিদ্ধানত্ম হয়েছে৷

গত ৬ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৮১ সদস্য করার নীতিগত সিদ্ধানত্ম নেওয়া হয়৷ এর মধ্যে সভাপতিম-লীর ৪টি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২টি, সাংগঠনিক সম্পাদক ১টি৷এদিকে, সমপ্রতি দেশে নতুন একটি প্রশাসনিক বিভাগ হওয়ায় সাংগঠনিক সম্পাদকের সংখ্যা ১টি বাড়বে৷ এছাড়া প্রশিক্ষণ সম্পাদক সৃষ্টি করা হবে, এতে সম্পাদকমন্ডীর সসদ্য ১ জন বাড়বে৷সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ১৫ জন৷ এই সংখ্যা বেড়ে ১৯ করা হতে পারে৷ আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ জন বেড়ে হবে ৫ জন৷প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ জন৷ এখন তা বেড়ে হবে ৮ জন৷ সে অনুযায়ী গঠনতন্ত্রে সংশোধনীর জন্য খসড়া তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডরীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে, সে অনুযায়ী কমিটির আকার বাড়বে৷ তবে পরিণিতি ও পরিক্কতা বিবেচনা করা হবে৷ নেত্রী বলেছেন বাড়াতে হবে, কিন্তু সেটা বিশাল আকারের নয়৷ সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলী সব জায়গাতেই সংখ্যা বাড়বে৷মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাদ পড়বে কিনা জানি না, তবে কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব তো আসবেই৷ নতুন যারা তৈরি হয়েছে তাদের তো আনতে হবে৷

অন্যদিকে, একদিন পরই আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন৷ অষ্টমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা৷যদিও সমপ্রতি দু’টি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দল তাকে অবসরের সুযোগ দিলে খুশি হবেন৷কথাটি নিয়ে কোনো সিদ্ধানত্ম না এলেও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছেন অনেক নেতাই৷আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা যতোদিন বেঁচে থাকবেন- তাকে এ পদে থাকতেই হবে৷ আওয়ামী লীগে এখনো শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়নি৷ সুতরাং, তিনি চাইলেও তাকে ছাড়া হবে না৷অনেকে মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী আসলে এ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নেতা হিসেবে গ্রহণ করতে কারো দিকে ইঙ্গিত করছেন৷আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যনত্ম কেউ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, এবারও করবেন না৷ শেখ হাসিনাকেই সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হবে৷

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দলের হাল ধরেছিলেন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া এই ক্যারিশম্যাটিক নেতা৷১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়৷ ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তিনি৷এরপর ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯ এবং ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা৷সম্মেলনের আগ মুহূর্তে গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘১৯৮১ থেকে ২০১৬- ৩৫ বছর, আর কতো?’নতুন নেতা নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চাইবো, সবাই নতুন নেতা নির্বাচিত করুক৷ দলটা আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাক৷

গত ০২ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দল যদি আমাকে অবসরের সুযোগ দেয়, তাহলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো৷সভাপতির সিদ্ধানত্ম নেতাকর্মীরা টু শব্দ না করে মেনে নেন৷ তাই এমন সিদ্ধানত্ম যেনো না আসে যাতে নেতাকর্মীদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হয়, সেটাই চাইছেন সবাই৷১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পরও শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন৷ নেতাকর্মীদের চাপেই তখন সিদ্ধানত্ম পরিবর্তন করেন তিনি৷এতোদিন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হিসেবে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা থাকলেও এবার বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও কাউন্সিলর হিসেবে থাকছেন৷

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, শেখ হাসিনা অবসর চাইলে তারা তা মেনে নেবেন না৷ যেকোনো মূল্যে তারা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চান৷কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের কয়েকজন বলেন, ‘কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করবেন! প্রশ্নই ওঠে না’৷আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিনবার ক্ষমতায় এসেছে৷ তিনি আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক৷ তিনিই ফের দলের সভাপতি হবেন’৷এছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে সাধারণ সম্পাদকের পদ চলে যাচ্ছে নোয়াখালীতে! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শীর্ষমহল থেকে এমন বার্তাই পাচ্ছেন কাউন্সিলররা৷ আর তা থেকেই ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, কে হচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির আগামী দিনের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রধান নেতা, দলের সাধারণ সম্পাদক৷আর এ বার্তাকেই ‘চমক’ বলছেন দলটির কাউন্সিলররা৷

কমপক্ষে ১০ জন কাউন্সিলর বলেছেন, নানা মাধ্যমে শীর্ষমহল হয়ে আসা বিশেষ বার্তা পেয়েছি৷ এখন অপেক্ষা কেবল ঘোষণার৷ আমরা আনন্দিত, আমরা খুশি৷এখানেও মহাসড়কের কথা রয়েছে৷ হা হা! উন্নয়নের মহাসড়ক৷ আর সড়কমন্ত্রী কে? আমাদের ওবায়দুল কাদের ভাই’৷নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে যদিও এ নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাসের ছিঁটে-ফোটাও নেই৷ ওবায়দুল কাদের বন্ধ রেখেছেন ট্যাগিং অপশনও৷ কর্মী-সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত হয়ে তাকে ট্যাগ করলেও তা দেখার সুযোগ নেই অন্য বন্ধুদের৷ কেবল কাদের ছাড়া৷তবে কর্মী-সমর্থকদের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এখন সরগরম৷কাদেরই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক- এমনটা নিশ্চিত হয়েই অনেকে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন প্রিয় নেতাকে৷ সাধারণ সম্পাদক হতে চলেছেন- এমন জোরালো গুঞ্জনে নেতাকর্মী, সমর্থক আর শুভানুধ্যায়ীদের আগাম অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা কেমন লাগছে?’ – ওবায়দুল কাদেরের মোবাইল ফোনে এ প্রশ্ন করা হলে হলে সযত্নে এড়িয়ে যান তিনি৷তবে বরাবর তিনি যেভাবে এ পদের প্রার্থী হিসেবে নিজের নামটি নাকচ করে আসছিলেন, এবার কন্ঠে নাকচ করে দেওয়ার মতো শোনা যায়নি কোনো শব্দ৷ তাছাড়া আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে অনেক চমক থাকবে এমন কথা আগেই বলা হয়েছে৷ কি হতে পারে এসব চমক? এ নিয়ে অনেক প্রত্যাশা, অনেক অনুমান রয়েছে৷তবে অনেকাংশেই নিশ্চিত হওয়া গেছে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসছেন এই সময়ের তারুণ্যের অন্যতম প্রিয় নেতা তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ৷ গত ১৯ অক্টোবর সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম৷ তিনি সাংবাদিকদের জানান, ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দল পরিচালনায় একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব উপহার দেওয়া হবে৷