800x480_image57740743আগামী ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর উত্‍ক্ষেপণ হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট৷ বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম৷আগামী বছর ডিসেম্বরে উত্‍ক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷শুক্রবার মহাখালীর টেলিফোন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম৷ দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ নির্মাণ প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন তিনি৷

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে৷ বাকি কাজও সময় মতোই শেষ হবে৷ প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ ৮৩ শতাংশ, এন্টেনা তৈরি ৫৬ শতাংশ এবং সার্ভিস মডিউল তৈরির কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে৷ বর্তমান কাজের শিডিউল অনুযায়ী, আগামী নভেম্বর ২০১৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং ডিসেম্বরে উত্‍ক্ষেপণ করা হবে৷শুক্রবার গুলশানের বিটিসিএল টেলিফোন এঙ্চেঞ্জ ভবনে স্যাটেলাইট উত্‍ক্ষেপণ প্রকল্পের অগ্রগতি এবং সারা দেশে স্থাপিত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান৷

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে স্যাটেলাইট সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট রিভিউ (এসআরআর) এবং প্রিলিমিনারি ডিজাইন রিভিউ (পিডিআর) সম্পন্ন হয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ ৮৩ শতাংশ, অ্যান্টেনা তৈরির কাজ ৫৬ শতাংশ এবং কমিউনিকেশন ও সার্ভিস মডিউল তৈরির কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে৷পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের নভেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএঙ্ ও ফ্যালকন ৯ উত্‍ক্ষেপণযান ব্যবহার করে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এ উপগ্রহ উত্‍ক্ষেপণ করা হবে৷বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের এই কাজ চলছে ফ্রান্সে থালিস এলিনিয়া স্পেসের ফ্যাসিলিটিতে৷ নির্মাণ, পরীক্ষা ও পর্যালোচনা শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের লঞ্চ সাইট কেপ কার্নিভালে পাঠানো হবে সেটি৷ উত্‍ক্ষেপণের এক মাস আগে থেকে স্পেসএঙ্ এর লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন-৯ এর ইন্ট্রিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরম্ন হবে৷

ইতোমধ্যে স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের ভৌত নির্মাণের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, থালিস ইতোমধ্যে গ্রাউন্ড স্টেশনের জন্য যন্ত্রপাতি কেনার কাজ শেষ করেছে৷বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক গোলাম রাজ্জাক বলেন, উত্‍ক্ষেপণের আগে লঞ্চ প্যাডে প্রস্তুতিতে দুই মাস সময় লাগে৷ নির্ধারিত সময়েই উত্‍ক্ষেপণের কাজ শেষ হবে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷ ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উত্‍ক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রসত্মাব অনুমোদন দেওয়া হয়৷এরপর ১১ নভেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উত্‍ক্ষেপণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে থালিসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি৷গত সেপ্টেম্বরে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উত্‍ক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে বিটিআরসি প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে৷বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উত্‍ক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে৷বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে৷

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে৷দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় পর্যনত্ম রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, মোট ২২ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মধ্যে ১৩ হাজারের কাজ শেষ হয়েছে৷আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, এর ফলে বিটিসিএল এর মাধ্যমে সারা দেশে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি৷

এদিকে, শুক্রবার গুলশানে বিটিসিএল টেলিফোন এঙ্চেঞ্জ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদেন প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের জানান, বার বার সুযোগ দেওয়ার পরও বিটিআরসির পাওনা শোধ না করায় সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে৷বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধে মানবিক আবেদন’ জানানো ছাড়া টেলিযোগাযোগ বিভাগ বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র ‘তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম৷তিনি বলেন, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এখন কীভাবে পরিশোধ করা হবে, সেই দায়িত্ব সিটিসেলকেই নিতে হবে৷সরকারের পাওনা পৌনে পাঁচশ কোটি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করে বিটিআরসি৷

এরপর বিটিআরসির কর্মকর্তারা র্যাব-পুলিশ নিয়ে মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে বন্ধের নির্দেশনা বাসত্মবায়ন করেন৷শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তরঙ্গ স্থগিত করার পর সিটিসেলের কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা আদায়ে কোনো উদ্যেগে নেওয়া হবে কি-না৷জবাবে তারানা হালিম বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী চলে৷ বিটিআরসি শুধু নিয়ন্ত্রকের কাজ করে থাকে৷বিটিআরসির অভিযানের পর মহাখালীর প্যাসিফিক সেন্টারে বন্ধ করা হচ্ছে সিটিসেলের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার বিটিআরসির অভিযানের পর মহাখালীর প্যাসিফিক সেন্টারে বন্ধ করা হচ্ছে সিটিসেলের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারএকটি কোম্পানি কোথা থেকে ঋণ গ্রহণ করবে, সেই ঋণ কীভাবে পরিশোধ হবে বা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তারা কীভাবে পরিশোধ করবে- এটা একানত্ম সেই কোম্পানির দায়িত্ব৷ সেই হিসেবে সিটিসেলের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দায়-দায়িত্ব সিটিসেলের৷ এই দায়িত্ব সিটিসেলকেই গ্রহণ করতে হবে৷নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিটিআরসি তার নির্ধারিত ভূমিকার বাড়তি কিছু করতে পারবে না জানিয়ে তারানা হালিম বলেন,টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির পক্ষ থেকে মানবিক একটা আবেদন থাকবে, যার যে দেনা আছে সিটিসেল যেন তা পরিশোধ করে৷ সিটিসেলের সুনাম রক্ষার্থে এই সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন৷