%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%9c%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ab

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার আসামি র‌্যাবের বরখাস্ত মেজর আরিফ হোসেনকে রিমান্ডে নির্যাতন করে ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করার অভিযোগ করা হয়েছে। আজ সোমবার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন আরিফ। এদিন সকাল সোয়া ১০টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। এসময় আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বিচার প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে আসামি আরিফ হোসেন ও বরখাস্ত লে. কমান্ডার এম এম রানা পৃথক লিখিত বক্তব্য আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জমা দিয়েছেন।

আরিফ হোসেনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জোর করে জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক চাকরিচ্যুত তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ হোসেন ও চাকরিচ্যুত নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ থেকে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়েছে। এসময় চার আসামি নিজেদের নির্দোষ ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং কোনও সাফাই সাক্ষী দেবেন না বলে আদালতকে জানান।

তবে আরিফ হোসেন ও এম এম রানা পৃথক লিখিত বক্তব্য আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জমা দিয়েছেন। পরে আদালত আগামী ৩১ অক্টোবর পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন জানান, কঠোর নিরাপত্তায় কারাগার থেকে ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। পরে আদালতের কার্যক্রম শেষে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা বিজয় কুমার পাল ও অপর বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭জন করে। আদালত দুটি মামলায় ১০৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানো ও বক্তব্য গ্রহণ শুরু করেছেন।

চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ: আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিল করা চার্জশিটে উঠে এসেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেন অবৈধভাবে জমি দখল, শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়, কাঁচপুর ব্রিজের নিচে পাথর বালুর ব্যবসা, মাছের আড়ৎ, চিটাগাং রোডে যাত্রার নামে হাউজি, ওয়ান টেন জুয়া খেলাসহ প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকা আয় করতেন। সেখানে সুবিধাভোগী লোকজনের অবাধে যাওয়া আসা ছিল। ৭ খুনের ঘটনার ৫-৭ মাস পূর্বে থেকে র‌্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর (অব:) আরিফ হোসেন নূর হোসেনের অফিসে প্রতিমাসে ৮-১০ বার যাতায়াত করত। সেই সুবাদে মেজর আরিফ হোসেনের সঙ্গে নূর হোসেনের সখ্য গড়ে উঠে। নূর হোসেনে মেজর আরিফ হোসেনকে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা প্রদান করতেন বলে গ্রেপ্তারকৃত আসামি রহম আলী আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন।

র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার এস এম রানা, মেজর আরিফ হোসেন ও অধিনায়ক লে. কর্ণেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অনৈতিকভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য নূর হোসেনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন। নূর হোসেন তাদের অফিসে আসা যাওয়ার অন্তরালে কাউন্সিলর নজরুলকে টাকার বিনিময়ে অপহরণ, হত্যা ও গুমের প্রস্তাব দেন। যা মেজর আরিফ হোসেনের মোবাইল ফোনের সাংকেতিক কথাবার্তা ও আলোচনা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।