দাঁড়িপাল্লা সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রাম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় তা রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করতে মত দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের ফুল কোর্টের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানাতে নির্বাচন কমিশনকে বুধবার চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ।সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সভাপতিত্বে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ফুল কোর্ট সভায় সোমবার এ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অবহিত করার বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক এ দলটিকে বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়েও জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।এদিকে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে করা দলটির আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়।২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করা হয়েছিল।হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ মঙ্গলবার জানান, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারকরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন।সাব্বির ফয়েজ বলেন, ন্যায়বিচারের প্রতীক দাড়িপাল্লা বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টেরও মনোগ্রাম। এই প্রতীক যেন কোনো রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমশিনকে চিঠি দেওয়া হবে। আগামীকাল বুধাবার আমরা চিঠি পাঠাব।বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী এক সময় দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর ওই প্রতীকেই দলটিকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দলীয় গঠনতন্ত্রের কারণে উচ্চ আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ হয়ে গেছে।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত দলগুলোর তালিকায় এখনও জামায়াতের নাম ও প্রতীক রেখে বলা হয়েছে- মাননীয় হাই কোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর উপর ০১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও লুটপাটের মত মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সাত শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে আদালতে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।একাত্তরের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে জামায়াতের কার্যক্রম নিষ্দ্ধি করার দাবি রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের। সরকার দল হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্েযাগ নিলেও আইন না থাকায় আটকে আছে বিষয়টি। সাব্বির ফয়েজ জানান, সুপ্রিম কোর্টেরও মনোগ্রামে বর্তমানে দাড়িপাল্লার দুই দিকে দুটি করে শেকল রয়েছে। এই সংখ্যা বাড়িয়ে তিনটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ কমিয়ে ৬২ দিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুল কোর্ট। চলতি বছর ২২ দিন সরকারি ছুটিসহ মোট ৮৪ দিন অবকাশের সূচি রয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।