গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের আগুন দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।অনেকেই ইউটিউব ও ফেইসবুকে ওই ভিডিও শেয়ার করছেন। উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী এ ঘটনাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও কয়েকটি দেশীয় টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালে ওই ভিডিও ধরে ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।তবে পুলিশ বলছে, তাদের সদস্য আগুন দেয়নি, ভিডিওর বিষয়েও তাদের জানা নেই।সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা বিরোধপূর্ণ জমি থেকে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালকে গত ৬ নভেম্বর উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় সংঘর্ষ বাঁধে এবং সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট, ভাংচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়।সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের ওই ঘটনায় সমালোচনা হয় দেশজুড়ে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, সাঁওতাল পল্লীর ভেতরে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়ছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ঘরে লাথি মরেন এবং পরে এক পুলিশ সদস্য ওই ঘরে আগুন দেন। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ পোশাকে থাকা আরেকজন আগুন অন্য ঘরে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেন।ভিডিওর একটি অংশে আরও কয়েকটি ঘরে আগুন দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট, একজনের পোশাকের পিঠে ডিবি, আরেকজনের পুলিশ লেখা ছিল। শাহনেওয়াজ সুমন নামের একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদস্যরাই এসব বসতিতে আগুন দিয়েছিল বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করছেন সাঁওতালরা।ভিডিও শেয়ার দিয়ে উচ্চ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান নাটকীয় ভঙ্গিতে লিখেছেন, আমি আল জাজিরার নির্লজ্জ প্রপাগান্ডার তীব্র প্রতিবাদ করছি। সাঁওতালদের ভিটেমাটিতে আমাদের সৎ, সাহসী ও দেশ্রপ্রেমিক পুলিশ আগুন লাগাতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি নিশ্চিত, পুলিশ মূলত আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল।”

কিন্তু নিজের ওই ভাবনাকে ভুল হিসেবে বর্ণনা করে এরপর তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণীত আইনে দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা তুলে ধরেন এবং দেখান, সেখানে আগুন লাগানোর অপরাধের কথাও বলা হয়েছে।ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব অপরাধ ঠেকানোর ব্যবস্থা না করায় তাদের ভূমিকাও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে এই আইনজীবীর মত।

তিনি লিখেছেন, আমরা যারা রোহিঙ্গাদের জন্য কাঁদছি, আমাদের স্মরণ রাখা উচিত, সহশীলতার মত মানবতাও ঘর থেকেই শুরু করা উচিত। যাই হোক, সরকারি জমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এ ধরনের দখলদারদের উচ্ছেদে ভিটেবাড়িতে আগুন দেওয়া কোনো যথাযথ পদক্ষেপ হতে পারে না।তাকবির হুদা নামে একজন লিখেছেন, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন বসতিস্থাপনকারী এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠী সাঁওতালের বাড়িতে পুলিশ আগুন দিচ্ছে বলে ধরা পড়েছে ভিডিওতে।

তাহমিদ হাসান নামে অন্য একজন প্রশ্ন করেছেন, আল জাজিরা যদি না পেত তাহলে আমরা কি এই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারতাম? আমরা এখন জেনেছি, কিন্তু আমরা কি এটা ধর্তব্যে নিয়েছি?ইসরাফিল ফরাজি নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী পুলিশের আগুন দেওয়ার এই ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়েছেন।অঞ্জন বৈদ্য লিখেছেন, “রক্ষক ই যখন ভক্ষক! বাংলাদেশের পুলিশ প্রথমে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু সাঁওতালদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে।ওই ভিডিরও বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দৃর্বত্তরা আগুন লাগানোর পর আমরা ওখানে গেছি, ফায়ার সার্ভিস ডেকেছি, নেভানের চেষ্টা করেছি।ভিডিওর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য এই পুলিশ কর্মকর্তার।

Video : Al Jazeera