সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারালো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ করলো কিউইরা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে ৫২ বল হাতে রেখে ২৩৯ রান তুলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নিউজিল্যান্ড। তাই হার দিয়ে বছর শেষ করলো বাংলাদেশ।শনিবার ভোরে নেলসনে এ ম্যাচে টস ভাগ্যে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দলপতির সিদ্ধান্তকে দুর্দান্তভাবে পালন করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। দেখে-শুনে খেলে, রানের চাকা সচল রেখে ২০ দশমিক ৩ বলে বাংলাদেশের স্কোর শতরানে নিয়ে যান তামিম ও ইমরুল।

তবে শতরানের পর এই জুটিকে খুব বেশি এগোতে দেননি নিউজিল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। দলীয় ১০২ রানে ইমরুলকে নিজের শিকার বানান স্যান্টনার। ৬২ বলে ৪৪ রান করেন ইমরুল। তার ইনিংসে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো।ইমরুল না পারলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৪তম ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন তামিম। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর কিছুটা ভড়কে যান তিনি। কারণ অন্যপ্রান্তে ৬ রানের ব্যবধানে উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন সাব্বির রহমান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৪টি চারে মারমুখী মেজাজে শুরু করেছিলেন সাব্বির। তবে ১৪ বলে ১৯ রানেই থেমে যেতে হয় তাকে। এই ইনিংসে ব্যর্থ মাহমুদুল্লাহ করেন মাত্র ৩ রান। প্রথম দু’ম্যাচে তাদের রান ছিলো ০ ও ১।

১৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চাপ আরও বড় হয়, যখন দলীয় ১৪১ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তামিমকেও। ৫টি চারে ৮৮ বলে ৫৯ রানে থামেন তিনি।এরপর মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ম্যাচের লাগাম হাতে নেয়ার পথেই ছিলেন সাকিব আল হাসান। পঞ্চম উইকেটে ৬ ওভারে ২৭ রান যোগ করে তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু রান আউটের ফাঁদে পড়ে নিজের উইকেট দিয়ে আসেন সাকিব। তার বিদায়ের ১১ রানের ব্যবধানে ফিরেন মোসাদ্দেক ও তানবীর হায়দারও। এতে তামিম-ইমরুলের দেখানো বড় সংগ্রহের পথটা নিজেরাই বন্ধ করে ফেলে বাংলাদেশের মিডল ও লোয়ার-অর্ডার। সাকিব ৩৫ বলে ১৮, মোসাদ্দেক ১৩ বলে ১১ ও তানবীর ৩ রানে ফিরেন।

দলীয় ১৭৯ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ২শ’র নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে। কিন্তু সেটি হতে দেননি উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৯ বলে মারমুখী ৪৪ রান করে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে ২৩৬ রানের লড়াকু স্কোর এনে দেন নুরুল। এছাড়া বাংলাদেশের ইনিংসের শেষদিকে মাশরাফির ১৮ বলে ১৪ রানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি ও স্যান্টনার ২টি করে উইকেট নেন।জয়ের ২৩৭ রানের লক্ষ্যে শুরুটা ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের আঘাতে ব্যক্তিগত ৪ রানেই ফিরে যান কিউই ওপেনার টম লাথাম। ৪ রান করেন তিনি।

লাথাম ফিরে যাবার কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন আরেক ওপেনার মার্টিন গাপটিলও। তবে হ্যামেস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। আহত অবসরের আগের গাপটিলের রান ছিলো ৬ রান।দলীয় ১৬ রানে গাপটিল আহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করলে জুটি বাঁধেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও নিল ব্র“ম। তবে এই জুটি কোন রান যোগ করার আগেই বিচ্ছিন্ন হতে পারতো। যদি না প্রথম স্লিপে ক্যাচ ফেলতেন বাংলাদেশের ইমরুল। সাথে ভাগ্যও খারাপ বোলার মুস্তাফিজের।জীবন পেয়ে আর পিছন ফিরে তাকাননি ব্র“ম। পিছন ফিরে তাকাননি উইলিয়ামসনও। তাই নিউজিল্যান্ডের জয়ের পথ ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে ফেলেন তারা। শেষ পর্যন্ত দু’জনের ১৭৯ রানের বড় জুটিতে জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।তবে জয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি ব্রুম। ব্যক্তিগত ৯৭ রানে ফিজের বলেই আউট হন তিনি। তার ৯৭ বলের ইনিংসে ১২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। তবে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন উইলিয়ামসন। ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১৬ বলে ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার সাথে ২৩ বলে ২৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন নিশাম। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর ৩২ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচের সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন।ওয়ানডে সিরিজ শেষে এবার তিন ম্যাচের টুয়েন্টি টুয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড। নেপিয়ারে আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে টি-২০ সিরিজ। পরের দু’টি হবে ৬ ও ৮ জানুয়ারি।

এদিকে, আড়াই বছর পর ওয়ানডেতে ধবলধোলাই বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজের একটিতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি তারা। এই ব্যর্থতায় হতাশ হলেও ভেঙে পড়ছেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যর্থতার মধ্যেই খুঁজে নিচ্ছেন সান্ত¡নার নুড়ি পাথর।

গত আড়াই বছর বাংলাদেশ ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছে দেশের মাটিতে, বিশেষ করে ওয়ানডেতে। কিন্তু ওয়ানডেতেই কিউইদের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হার। যে দুই সংস্করণে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি খাবি খায়, সেই টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সামনে। বিরূপ কন্ডিশনে এই দুই সিরিজেও ভরাডুবির শঙ্কা থাকছেই…। অবশ্য ওয়ানডে সিরিজে হেরেও মনোবল হারাচ্ছেন না মাশরাফি, ‘তিন ম্যাচ দিয়েই আমাদের বিচার করা ঠিক না। যদি বিচারই করতে হয়, অনেক ইতিবাচক দিকের কথা বলব। উপমহাদেশের দল এখানে এসে সুযোগও তৈরি করতে পারে না। আমরা অন্তত সেটা করতে পেরেছি। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকতাম। পাঁচ বছর পর এখানে খেলতে এসে সবকিছু আমাদের পক্ষে থাকবে, আশা করা ঠিক না। এই সফরে এখনো অনেক ম্যাচ বাকি আছে। এটা ভেবে এখনই ভেঙে না পড়ে যদি ভালো খেলতে পারি…একটি ভালো দিন পুরো সফরটা অন্য রকম করে দিতে পারে।

তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের ওপেনিং জুটিতে ১০২ রান যোগ করার পরও স্কোরটা বড় হয়নি বাংলাদেশের। দুর্দান্ত শুরুর পরও এই হারের ব্যাখ্যা কী? মাশরাফিরও সেটি জানা নেই। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বললেন, ‘ব্যাখ্যা দেওয়া আসলে কঠিন। এমন শুরুর পর আমরা আশা করছিলাম স্কোরটা আরও বড় হবে। সাত-আটজন ব্যাটসম্যান তখন ড্রেসিংরুমে। এক-দুটি উইকেট পড়ার পর আবার সেট হয়ে খেলতে হয়, ওরা যেটা করতে পেরেছে, আমরা সেটা পারিনি। আমরা মানসিকভাবে অতটা শক্ত ছিলাম না।
সুযোগ পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে না পারায় ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নয়, মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি বড় করে দেখছেন মাশরাফি, দুই দলের স্কিল যদি তুলনা করেন, তাদের সমানই ছিলাম। আমরা আসলে মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছি। এখনো বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যাটসম্যানদের রান করার সামর্থ্য আছে। স্কিল আছে, মানসিকভাবেই তারা পিছিয়ে পড়েছে। আরেকটু ইতিবাচক থাকলে ভালো হতো।