সময়ের সঙ্গে উপযোগী করে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিদ্যমান নীতিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে এর একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের সীমা বাড়ানো হচ্ছে। বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে এজেন্ট ও সাব-এজেন্ট নিয়োগ কাঠামোয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পৌঁছে দিতে চালু করা হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। দিন দিন বাড়ছে এর পরিসর। যে কারণে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে এজেন্ট ও সাব-এজেন্টের কাঠামোগত পরিবর্তন। নিরাপত্তা বাড়াতে আরও বেশি করে দেখেশুনে নিয়োগ দিতে হবে এজেন্ট, সাব-এজেন্ট। এদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা সেটাও আনা হবে এজেন্ট ও সাব-এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে কতদিনের অভিজ্ঞতা লাগবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এতে করে নিরাপত্তা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন নীতিমালায় দৈনিক লেনদেনের সীমা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বিদ্যমান নীতিমালায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজন গ্রাহক দিনে সর্বোচ্চ দুইবার লেনদেন করতে পারে। ৫০ হাজার টাকা করে দুইবারে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ও উত্তোলন করতে পারে। সংশোধিত নীতিমালায় প্রতিটি লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা ১ লাখ বা তারও বেশি করা হবে। এছাড়া দিনে কয়বার লেনদেন করতে পারবে সেটিও নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, শিগগিরই এ খসড়া নীতিমালাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আপলোড করে ব্যাংকগুলোর মতামত নেয়া হবে।

এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি কাজ করছে। রোববার এ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সংশোধিত খসড়া নীতিমালার ওপর আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। সভায় বলা হয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পরিসর বৃদ্ধির কারণে বিদ্যমান নীতিমালাটিকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্যই নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে।এ বিষয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম তদারকি কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটা মিটিং হয়েছে। এটা এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কমিটির মিটিং ছিল। বিদ্যমান গাইডলাইন হালনাগাদ বা প্রসারিত করার জন্যই কাজ চলছে। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। মূলত নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামনে রেখেই নীতিমালাটি পরিবর্তন করা হবে। এক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে এজেন্ট, সাব-এজেন্টের স্ট্রাকচারে। কারণ পরিসর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নীতিমালা ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। এছাড়া গাইডলাইনের বিষয়ে আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের মতোই এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমও সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। তবে ব্যাংকগুলো যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে তবে এ লেনদেন সময়সীমা আরও বাড়াতে পারবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো আপত্তি করবে না। এছাড়া বর্তমানে গ্রাম ও শহরে এজেন্ট নিয়োগের অনুপাত ২:১। অর্থাৎ গ্রামে দুইজন এজেন্টের বিপরীতে শহরে একজন এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন পায় ব্যাংকগুলো। তবে সংশোধিত নীতিমালায় প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এজেন্ট ব্যাংকিং করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু অঞ্চল নির্ধারণ করে দেয়া হবে যেখানে ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে বাধ্য থাকবে।জানা গেছে, কম খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিংসেবা চালুর লক্ষ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংসেবা চালুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা জারি করা হয়। এ পর্যন্ত ১৩ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর লাইসেন্স পেলেও কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে ১০টি। এগুলো হলো ডাচ্Ñবাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। যে তিন ব্যাংক এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সেগুলো হলো ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক। এছাড়া বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ১০টি ব্যাংকের সারা দেশে ১ হাজার ৪০০ এজেন্ট ও প্রায় ২ হাজার ৫০০ সাব-এজেন্ট রয়েছে।