জঙ্গী তৎপরতাকে বিবেচনায় রেখে নজিরবিহীন পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শুক্রবারেও ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। এদিন জুমা’ বার হওয়ায় লাখো মুসল্লীর ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই ইজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লি¬রা অংশ নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়ক ও গলিগুলোর ওপরে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ইজতেমার শুরুর দিন শুক্রবার জু’মার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমাস্থলে মুসল্লি¬দের ঢল নামে। এদিন সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন টঙ্গী এজতেমা ময়দানে। এদিকে আজ শনিবার বাদ আসর ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। কাল (রবিবার) আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। এবারের বিশ^ ইজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসুল্লির সঙ্গে বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশের প্রায় ৭ হাজার মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন।

শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল খোরশেদ আম বয়ানের মাধ্যমে এবারের বিশ্বইজতেমার মূল কজ শুরু করেন। এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুরুব্বি মাওলানা মো. জাকির হোসেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি¬র উদ্দেশে যথারীতি ঈমান, আমল, আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্বের ৩ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৫ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাযের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এর ৪ দিন পর আগামী ২০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা।

প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে জু’মার জামাতকে কেন্দ্র করে টঙ্গীতে মুসল্লি¬দের ঢল নামে। জু’মার মূল জামাত এজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থাপিত ৭টি ভাসমান ব্রিজের মাধ্যমে মেহরাবের সঙ্গে নদীর পূর্ব পাড়ের মূল ময়দানের সেতুবন্ধ স্থাপিত হয়। ফলে এবছর ভাসমান সেতুতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি¬ জুমার জামাতে শরিক হন। দুপুর পৌণে দু’টায় জু’মার নামাজ শুরু হয়। জুমার জামাতে ইমামতি করেন কাকরাইল মারকাজ মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ ফারুক হোসেন। শুক্রবার জু’মার আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৭টি দেশের প্রায় ৭ হাজার মুসল্লি¬ এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও সমবেত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে তবলীগের ৬ উসূল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্বের ৩দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। আজ (শনিবার) বাদ আছর প্রতিবছরের ন্যায় যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন করা হবে বলে ইজতেমা সূত্রে জানা গেছে। এসব বিয়ে বর ও উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বর ও কনের নাম তালিকাভুক্তি হচ্ছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাজের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। ২০জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমা ময়দান এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবারই প্রথম বিশ্ব ইজতেমার চারপাশ এবং বাহিরে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে লাখো মুসল্লি সেখানে সমবেত হয়েছেন। বিভিন্ন জেলার যুবক, কিশোর, বায়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণীর মানুষ ইজতেমায় এসেছেন। অনেকে ৪০ দিন (এক চিল্লা) বা ১২০ দিন (তিন চিল্লা) ইসলামের দাওয়াত শেষ করে ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইজতেমা শেষে ইসলামের দাওয়াত দিতে ৪০ দিন (এক চিল্লা) বা ১২০ দিনের জন্য (তিন চিল্লা) বেরিয়ে পড়বেন। ধনী, দরিদ্র সবাই এখানে এক সামিয়ানার নিচে একসঙ্গে অবস্থান করছেন। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যবহার্য দ্রব্যাদি কাঁধে বহন করে মাঠে আসছেন।

বৃহত্তম জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত ॥ বিশ্ব ইজতেমার শুরুর দিন জু’মা বার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ যাবৎকালের বৃহত্তম জু’মার জামাত। দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটে জু’মার জামাত শুরু হয়। ওই নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ ফারুক হোসেন। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসুল্লি ছাড়াও জু’মার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার লাখ লাখ মুসুল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশে-পাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশে-পাশের খোলা জায়গাসহ সবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসুল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জু’মার নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নামাজে ২০ লক্ষাধিক মুসল্লী শরীক হন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।

প্রথম দিনে যারা বয়ান করলেন ॥ ঈমান-আমলের উপর প্রথম দিন বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল খোরশেদ। বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মুরুব্বি মাওলানা মো. জাকির হোসেন। জু’মা নামাজের পর বয়ান করেন দিল্লীর মাওলানা ওয়াসিকুর রহমান, বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহসান ও বাদ মাগরিব মাওলানা শওকত। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রথম দিনের বয়ান ॥ বয়ানে বলা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান স্থান হলো মসজিদ আর সবচেয়ে কমদামি জায়গা হলো বাজার। যারা মসজিদে নামাজ আদায় করেন, তাদের জন্য বেহেশতে মহল তৈরী হয়। যে মসজিদকে ভালবাসে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাকে ভালবাসেন। এ দুনিয়ায় যিনি একটি মসজিদ বানানো, আল্লাহ তারজন্যে পরপারে একটি মহল বানাবেন। জুম্মারদিন , একটি পবিত্রদিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুম্মার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানি দিন। এটি দু’ ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমা’র নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-ওজু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকী লেখা হয়। আমরা যা করবো আল্লাহকে রাজি করার জন্য করবো। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।

বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥ বিশ্বইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসুল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।

জু’মার নামাজে ভিআইপিদের অংশ গ্রহণ ॥ ইজতেমার প্রথম দিনে জুম্মার নামাজে অংশ নেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাণের কর্মকর্তাগণ।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ॥ টঙ্গী হাসপাতাল ও বিভিন্ন মেডিক্যাল ক্যাম্পে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার জন মুসুল্লী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং প্রায় অর্ধশত জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ্যদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের ও হৃদরোগের রোগী বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: আলী হায়দার খান। এদিকে সরকারী হাসপাতাল ছাড়াও মুসল্লীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ইজতেমা ময়দানে প্রায় অর্ধশত বেসরকারী প্রতিষ্ঠাণ বিনা মূল্যে কাজ করছে।

ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা ॥ শুক্রবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে মুসুল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসুল্লীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে ও মন্নু নগর এলাকায় বাংলাদেশ হোমিও প্যাথি পরিষদ, র‌্যাব’র ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ ওয়াক্ফ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকেলস, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ইসলামি ফাউন্ডেশনের ইসলামি মিশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনেরসহ বিভিন্ন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এলোপ্যাথি ছাড়াও মুসুল্লীরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে তাদের ক্যাম্পে ভিড় করেছেন। অসুস্থ্যদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী।

ইজতেমা উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি বাতিল ॥ ইজতেমা উপলক্ষ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। মুসুল্লীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ইজতেমায় দায়িত্বপালনকারী সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: আলী হায়দার খান। তিনি আরো জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। তিন শিফ্টে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ ছাড়াও মেডিক্যাল অফিসারগণ ইজতেমা ময়দানে ডিউটি করছেন। এছাড়াও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে আরও শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ হাসপাতালের উদ্যোগে মুন্নগেট, বাটা গেট ও এটলাস হোন্ডা রোডে মুসলি¬দের তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। মুসুল্লি রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষনিক অ্যা¤ু^লেন্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া ইজতেমা মাঠের উত্তরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রায় অর্ধশত ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমায় অসুস্থ্যদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী। হোটেলে খাবারের মান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিষ্ট্রেটসহ সেনিটেশন টিম কাজ করছে।

প্রথম দিনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭ হাজার বিদেশি মুসুল্লি ॥ ইজতেমার প্রথম পর্বে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এজতেমা মাঠে বিশ্বের অন্ততঃ একশ’টি দেশের প্রায় ৭ হাজার জন বিদেশী মুসল্লির আগমন ঘটেছে। এবারের এজতেমায় বিশ্বের অন্ততঃ শতাধিক দেশ থেকে প্রায় ১৫ হাজার মুসুল্লিদের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন ইজতেমার মুরব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ৮৭টি দেশের প্রায় ৬ হাজার ৮’শ ৮৭ জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। আগামি দুই দিনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে আগত এসব বিদেশী মেহমানদের জন্য ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যৌতুকবিহীন বিয়ে শনিবার ॥ ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ি আজ (শনিবার) বাদ আসর যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকে ওইসব বিয়ের জন্য বয়ান মঞ্চের কক্ষেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। ইজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারীভাবে তুরাগ তীরের ১৬০একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

বিশ্ব ইজতেমায় আগত ৬ মুসল্লির মৃত্যু ॥ এবারের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে যোগ দিতে এসে হৃদযন্ত্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে শুক্রবার সকালে আরো এক মুসুল্লি মারা গেছেন। তার নাম বাবুল মিয়া (৬০)। তিনি ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলার মাছিমপুর এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে। এ নিয়ে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ছয় মুসুল্লীর মৃত্যু হয়েছে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোকলেছুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাবুল মিয়াকে মৃতাবস্থায় ইজতেমা ময়দান থেকে হাসপাতালে আনা হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে মানিকগঞ্জে সাহেব আলী (৩৫), বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের নান্দাইলের মারুয়া গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে মোঃ ফজলুল হক (৫৬), বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা সদরের খেজুরডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে আঃ আব্দুস সাত্তার (৬০) এবং সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার নিজবন্নী এলাকায় মোঃ জানু ফকিরের (৭০) এবং বুধবার দিবাগত রাতে মারা গেছেন কক্সবাজারের মোঃ হোসেন আলী (৬৫) মারা যান। ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

ইজতেমায় বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস ॥
এজতেমা ময়দানে মুসল্ল¬ীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে বিআরটিসির শতাধিক স্পেশাল বাস সার্ভিস চলাচল করছে। বিআরটিসির এসব বাস আব্দুল¬াহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, গাজীপুর-চৌরাস্তা, মতিঝিল-ভায়া ইজতেমাস্থল, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থল, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমাস্থল, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, মতিঝিল-বাইপাল ভায়া এজতেমাস্থল বিআরটিসির বাস সার্ভিস চলাচল করছে।

অপরদিকে বিশ্ব এজতেমায় আগত মুসল্লী¬দের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করছে। এ ছাড়াও সকল আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুই ধাপের ইজতেমার প্রথম ধাপের শুক্রবার ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা দুটি জুম্মা স্পেশাল, আখেরি মোনাজাতের আগের দু’দিন জামালপুর ও আখাউড়া থেকে দুটি করে চারটি অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করছে।

বিশ^ ইজতেমার মুরুব্বী মাওলানা গিয়াস উদ্দীন জানান, দেশের ৬৪ জেলাকে প্রথমবারের মতো গত বছর হতে দু’বছরে চার ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। গত বছর ৩২টি জেলা নিয়ে ইজতেমার দুই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বাকী ৩২ জেলার মুসল্লীরা দু’পর্বে এ বছর অংশ নিচ্ছে। এবছরের প্রথম পর্বে অংশ নেবে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে ১৫টি জেলাসহ ঢাকার বাকী অংশের তাবলিগ অনুসারীরা। তবে বিদেশী মুসল্লীরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে। মুসল্লীদের স্থান সংকূলান না হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১১ইং সাল থেকে দুই পর্বের ইজতেমা শুরু পর ২০১৫ সালে আবারও এ পরিবর্তন আনা হয়। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বীরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।