দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন রাজধানীর গুলিস্তান থেকে অযৌক্তিকভাবে হকারদের উচ্ছেদ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি।বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় সম্মিলিত হকার্স জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।শিরীন আকতার বলেন, মেয়র সাহেব কোনো ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন না করে অযৌক্তিকভাবে হকার্সদের উচ্ছেদ করেছেন। যা কখনো কাম্য নয়। তিনি আমাদের একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি কিন্তু তার কাছে এমন ঘটনা আশা করা যায় না। তাই অবিলম্বে হকার্সদের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।তিনি আরো বলেন, রাজধানীর সৌন্দর্য হচ্ছে হকার্স আর রিকশা। এই হকার্স আর রিকশা বাদ দিয়ে কখনো রাজধানীর সৌন্দর্যের কথা ভাবা যায় না। কেননা রাজধানীর অতীত ভাবলে সেটাই তো দেখা যায়। রাজধানীর কতোভাগ মানুষ গাড়িতে চড়ে। এখনো অধিকাংশ মানুষ রিকশাতে চড়ে। এছাড়া এই হকার্সরাই এখনো নিম্নমধ্যবিত্তদের কাজে সহযোগিতা করছেন।

জাসদের সহ-সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সরকার যখন বিপদে পড়ে তখন এই হকার্সরাই সরকারের পাশে থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকার হকার্সদের কথা ভুলে গিয়েছেন। মনে রাখবেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় কিন্তু এই হকার্সরাই ছিলো সরকারের পরম বন্ধু। কাজেই তাদের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা না করে কোনোভাবেই হকার্সদের উচ্ছেদ করা ঠিক হবে না।তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যদি হকার্সদের নিয়ে নীতিমালা থাকতে পারে তাহলে বাংলাদেশে কেন হকার্সদের নিয়ে নীতিমালা থাকবে না। এটি সরকারকে ভাবতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে? আর কিভাবে বেঁচে থাকবে সেটাও সরকারকে চিন্তা করে কাজ করতে হবে।

এদিকে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে রাস্তা বন্ধ করে প্রায় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনটি। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে আশেপাশের এলাকায়। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে।বিক্ষোভ সমাবেশে জাসদের সহ-সভাপতি অ্যাড. হাবিবুর রহমান শওকতসহ বিভিন্ন হকার্স নেতারা বক্তব্য রাখেন। গত কয়েকদিনে গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়ে পরিষদের সমন্বয়ক আবুল হোসেন বলেন, মেয়র সাঈদ খোকন তুঘলকি পদক্ষেপ নিয়েছেন।এর ফল ভালো হবে না। আপনার পিতাও এই নগরের মেয়র ছিলেন। তিনি কখনও হকারদের উচ্ছেদ করনেনি। আশা করি আপনিও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না।

গত ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, রোববার থেকে সাপ্তাহিক কোনো কর্মদিবসে আর গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় দিনের বেলায় ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। হকাররা দোকান নিয়ে বসতে পারবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে। তবে ছুটির দিনে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।এরপর রবি ও সোমবার সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় চালানো হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান। সোমবার উচ্ছেদের পর হকারদের একটি দল মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়ে আসে। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ না করা, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, হকারদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ এবং প্রকৃত হকারদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দেওয়াসহ ১০ দফা দাবির কথা সেখানে তুলে ধরেন তারা।অন্যদিকে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে গত সোমবার মেয়র বলেন, জনগণের চলাচল নির্বিঘœ করতে করপোরেশেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।মঙ্গলবারের সমাবেশে মেয়রের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে হকার সমন্বয় পরিষদের নেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী হকারদের উচ্ছেদ করতে বলেননি। প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার আলোকে ব্যবস্থা নিন।

মেয়র একা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী (বিদেশ থেকে) ফিরে আসুন, স্থানীয় সাংসদও বিদেশে আছেন। তারা আইন প্রণেতা।…আপনার হকার উচ্ছেদের এ সিদ্ধান্ত অমানবিক।সুইজারল্যান্ড সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার সঙ্গে দেখা করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশে।কর্মসূচির এক পর্যায়ে হকার সমিতির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, গুলিস্তান এলাকায় তালিকাভুক্ত হকারের সংখ্যা ১৬ শ’। বাকিরা হকার নয়।হকারদের একাধিক সংগঠন থাকাও তাদের দুর্দশার একটি কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।