গাজীপুরে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারনে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝুকিপূর্ণ ভবনে ক্লাশ করছে। এতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে চলেছে। ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়রা। তারা নতুন ভবন নির্মাণের দাবী জানিয়ে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নীলের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রাণের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন ক্লাশ করছে। জেলা শহর এলাকার এ বিদ্যালয়ে স্থানীয় নীলের পাড়া গ্রামসহ আশেপাশের কয়েক গ্রামের পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ের দু’টি ভবনের মধ্যে একটি এক তলা ভবন ও অপরটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। এরমধ্যে অন্ততঃ দু’যুগ আগে পুনঃনির্মিত দু’কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনে মাত্র ৭০/৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ক্লাশ করতে পারে। ফলে একটি মাত্র ভবনে পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান করা কোনমতেই সম্ভব হয়। তাই ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের চাহিদা ও ভোড়ান্তির কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই বিদ্যালয়ের জন্য একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর পৌর সভার চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ১৯৯৮সালে ওই ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট ১৯৯৯ সালে ওই ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাষ্টার নব নির্মিত এ দ্বিতল ভবনের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ওই দ্বিতল ভবনটির দেয়ালে ও ছাদের ভিতরে বাইরে বিভিন্নস্থানে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং প্লাস্টার ও ইট খসে পড়ছে। এতে যে কোন সময়ে ভ’মিকম্প, ঘূর্ণিঝড় বা কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা। স্কুলটির বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ইতোপূর্বে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন এবং প্রতিকারের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ওই আবেদনের কোন সাড়া মিলেনি। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারনে ঝুকিতে পড়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাদের অভিভাবক ও এলাকাবাসি। ফলে বেহাল এভবনে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিদিন ক্লাশ করছে। যে কোন মুহুর্তে দূর্ঘটনার আশংকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাছাড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রতিবছর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থান সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এমতাবস্থায় বিদালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভোগান্তি দুর করতে নতুন ভবনের দাবী জানিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাহেলা বেগম ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খোকন জানান, আমরা বিদ্যালয়ের ভবনের ফাটলের ছবি ও বিভিন্ন তথ্যসহ স্থানীয় উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় বছর খানেক আগেই জমা দিয়েছি এবং ব্যাক্তিগতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার হচ্ছেনা। এদিকে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকায় ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়ের পাঁচশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে নিরাপত্তহীনতার মধ্য দিয়ে পাঠদান করতে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ের আরো একটি ভবনের প্রয়োজন। আমরা এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।