পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকের কথায় সরকারকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, তখন তাদের কথায় সরকারের ওই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেছেন বলে জানা যায়। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডার একটি আদালত মন্ট্রিলভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে খালাস দিয়েছেন। গত শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এই রায়ের ফলে পদ্মাসেতু প্রকল্পে যে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক, তা থেকে বাংলাদেশ দায়মুক্তি পায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। এই অভিযোগরে বিরুদ্ধে তার যে দৃঢ় অবস্থান ছিল, তিনি তার সেই দৃঢ়তা আবারও সভায় প্রকাশ করেন। তবে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে ছোট করার যে চেষ্টা হয়েছিল তার জন্য তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সত্যের পক্ষে থাকলে অবশ্যই এক সময় বিজয়ী হওয়া যায়। আজ সেটাই হয়েছে। আমরা যে মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম সেই সত্যাটাই প্রমাণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আমাকে, আমার পরিবারকে, সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হোম অফিসে আমার ছেলে-মেয়েকে পর্যন্ত ডেকে নিয়ে হয়রানি করা হয়। একজন মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হলো, সচিবকে গ্রেফতার করে জেলে দেওয়া হলো; এতে তারাও তখন হেয় হয়েছিলেন। আসলে বিশ্ব ব্যাংক এই প্রকল্পে টাকাই ছাড় দেয়নি, তাহলে দুর্নীতি হবে কী করে!এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে যোগ করে বলেন, বিশ্ব ব্যাংক তখন একেক বার একেক জনকে বাদ দিতে বলে। একে বাদ দিলে, ওকে জেলে নিলে সব হয়ে যাবে বলতে থাকে।তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের কথায় ওই সময় আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। ওই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া তখন ঠিক হয়নি।সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে রাখার জন্য তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি বলেছি, ৬০ বছর চাকরির বসয় পার হয়ে গেছে, তারপরও উনি ওই ব্যাংকের এমডি ছিলেন। এখন আমরা আর কী করতে পারি? এরপর থেকেই তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আমার সরকারকে হেয় করতে এই মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দেন। অথচ আমাদের ’৯৬ সালের সরকারের সময় ড. ইউনূস ব্যাংকের অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার থেকে ৪ শ’ কোটি টাকা নেন।পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই ধন্যবাদ জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সকালে এই বৈঠক শুরু হয়। দুপুরে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ এ কথা জানান।মন্ত্রিপরিষদ বলেছেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। তিনি বারবার বলেছেন, এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি, হয়ে থাকলে বিশ্বব্যাংককে তা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সেটি প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এটি প্রধানমন্ত্রীর অবিচল অবস্থানের কারণেই সম্ভব হয়েছে।মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে প্রমাণ হয়েছে, কোনো দুর্নীতি হয়নি। এজন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, দুর্নীতি হয়নি এটি প্রমাণ হওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়ায় দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। দেশের জিডিপিও কাঙ্খিত ভাবে বাড়েনি। এই ঘটনা না ঘটলে জিডিপি ১ বা ২ শতাংশ বাড়ত।