সারাদেশে হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর গাবতলী এলাকা। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে ব্যাপক তান্ডব চালায় পরিবহন শ্রমিকরা। তারা গাবতলীর প্রধান সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর চালায়।রাজধানীর গাবতলী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আনে।পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান দাবি করেন, এ সড়কের পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। সকাল থেকে এ পর্যন্ত গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত জনকে আটক করা হয়েছে তবে কেউ হতাহত হয়নি।ভোরে রাস্তা বন্ধ করে দেয় শ্রমিকেরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিবহন শ্রমিকেরা রাস্তার পাশে থাকা অস্থায়ী দোকানগুলো মাঝ এনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। দফায় দফায় শ্রমিক-পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে।রাজধানীসহ সারাদেশে আজও সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
রাজধানীতে বেশির ভাগ সড়কগুলো ফাঁকা, বাস নেই বললেই চলে, দুই একটা চলাচল করে। পিকআপ, প্রাইভেট কার, টেম্পো, সিএনজিচালিত অটো রিকসা চলছে আবার রিকশা চললেও বেশি ভাড়া হাকিয়ে বসে আছেন তারা।এ পরিস্থিতি অফিসগামী হাজারো মানুষের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে দূর গন্তব্যের অফিসগামী যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন বাস না পেয়ে রীতিমতো নাকাল হন তারা।
এদিকে, সকালে আবারো গাবতলী এলাকা পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।মঙ্গলবার শ্রমিকদের অবস্থান ছিল গাবতলী গরুর হাটের ক্রসিংয়ের সামনে। আজ তারা গাবতলীর আন্ডারপাস পেরিয়ে মসজিদের কাছাকছি স্থানে অবস্থান নেয় এবং ধীরে ধীরে মাজার রোডের দিকে এগোয় তারা।সংঘর্ষের ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, শ্রমিকেরা টায়ার জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ করেন। কোনো ধরনের যানবাহন রাস্তা দিয়ে যেতে বাধা দেয় তারা। বর্তমানে গাবতলী এলাকায় সব ধরনের দোকান ও কারখানা বন্ধ রয়েছে।সকালে আন্দোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে শ্রমিকেরা কতটুকু ছাড় দেবেন তা নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপর।
দারুস সালাম থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, গাবতলীর পরিস্থিতি এখন শান্ত তবে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।দুই চালকের সাজার প্রতিবাদে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে।বাসচালক জামির হোসেন ও এবং সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে নারীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদ- পাওয়া ট্রাকচালক মীর হোসেনের মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানান বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম।আগুনে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ বক্স ও পুলিশের একটি রেকারসহ অন্তত চারটি গাড়ি। রক্ষা পায়নি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ বাধে। গোটা এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে কয়েকশ’ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে তারা।ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করার পর সংঘর্ষ চলে। র‌্যাব সাঁজোয়া যান নিয়ে ওই এলাকায় টহল শুরু করে।রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামও শত শত নেতাকর্মী নিয়ে শ্রমিক তা-ব প্রতিহত করার চেষ্টায় রাস্তায় নামেন।পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, শ্রমিকরা বিনা উস্কানিতেই কমপক্ষে ৪০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ বলেন, ধর্মঘটের মধ্যে মানুষের ভোগান্তি কমাতে গাবতলীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সাধারণ যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের পরামর্শ দেয়ার সময় উত্তেজিত একদল শ্রমিক বিনা উস্কানিতে তা-ব শুরু করে।দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান জানান, শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা সড়কে গাড়ি দেখলেই ভাঙচুর করছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন।বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন-ট্রাকচালক মীর হোসেন মিরুর মৃত্যুদ-ের রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সোমবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সংগঠনের যৌথ সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয় মঙ্গলবার ভোর থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করবে তারা।এ ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ভোর থেকে শুরু করে।এর আগে সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজে বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে বৈঠকে পর সিদ্ধান্ত হয় ধর্মঘট প্রত্যাহারের। বিভাগের ১০ জেলার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা।
বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার প্রতিবাদে রোববার সকাল ৬টা থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ধর্মঘট পালন করে তারা।মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতের দেয়া এ সাজার বিরুদ্ধে তারা এ কর্মসূচি পালন করে।তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বক্স দুদু বলেন, তারা সোমবার খুলনা বিভাগের ধর্মঘট প্রত্যাহারের সভায় আলোচনার সময় খবর আসে ঢাকার আদালতে সাভারে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি মামলায় মীর হোসেন মিরুর মৃত্যুদ-ের রায় দেয়া হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মালিক-শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন। পরে রাতে বৈঠকের পর দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকা হয়।সকাল ৬টা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে এ ধর্মঘট পালন করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।ধর্মঘটের ফলে দূরপাল্লার সব যান চলাচল বন্ধ থাকে এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।ঢাকার গাবতলী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে দুদিন ধরে ধর্মঘট চালিয়ে আসা পরিবহন শ্রমিকদের।পুলিশের রাবার বুলেট আর টিয়ার শেলের জবাবে ধর্মঘটী শ্রমিকরা বৃষ্টির মত ঢিল ছুড়ছেন। ঢাকার অন্যতম প্রধান এই প্রবেশপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।বুধবার সকাল থেকে গাবতলীতে সংঘর্ষের সময় সাতজনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের মিরপুর জোনের ডিসি মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এদিকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে সংঘর্ষে আহত বৈশাখী পরিহনের এক শ্রমিককে পুলিশের টেম্পোতে করে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।আহত ওই শ্রমিকের নাম শাহ আলম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে স্লিন্টারের মত বহু চিহ্ন রয়েছে।গাবতলীর এক শ্রমিক বলেন, বাস টার্মিনালের বিপরীত দিকে একটি গলির মুখে পুলিশের ছররা গুলি লেগেছিল শাহ আলমের গায়ে।দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় দুই চালকের সাজার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে আকস্মিক এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়।মঙ্গলবার গবতলীতে আন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে দিনভর অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখানোর পর রাতে গাড়ি ভাঙতে বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শ্রমিকরা।মঙ্গলবার রাতের পর সংঘাতের পর বুধবার সকালে আন্দোলনরত শ্রমিকরা গাবতলীর আন্ডারপাস পেরিয়ে মসজিদের কাছাকছি অবস্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে আমিন বাজার সেতুর দক্ষিণ দিক থেকে মাজার রোডের প্রবেশ মুখ পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।টার্মিনালের কাছে রাস্তার ওপর টায়ার জ¦ালিয়ে অবরোধ করে রেখেছে শ্রমিরা। এই গোলযোগের মধ্যে রাস্তার দুই পাশের সব দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।গাবতলী বাস টার্মিনাল ছাড়াও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে আছে শ্রমিকরা। সুযোগ পেলেই গলি থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে দেখা গেছে তাদের।পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষে শ্রমিকদের সঙ্গে কিশোর বয়সী অনেককেও দেখা গেছে।মিরপুর জোনের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা পরিস্থিতি শান্ত করে সাধারণ যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। পুরো এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।এদিকে, রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে আজ বুধবার সুনসান নীরবতা। যাত্রী নেই, নেই হইচই। তবে দিগন্ত বাস কাউন্টারের সামনে টমেটো দিয়ে মুড়ি মাখাচ্ছিলেন এক নারী। অপলকে তা দেখছিল ছোট দুটি ছেলে। কাছে গিয়ে জানা গেল, ওই নারীর নাম রোকসানা। রায়হান আর হাসান নামের ছেলে দুটির খালা তিনি।দুপুরে ভাতের বদলে মুড়ি কেন?এ প্রশ্নের জবাবে রোকসানা বলেন, ‘পাশের হোটলে সব বন্ধ। ভাত পাব কোথায়?’পাশে বসা মাঝবয়সী একজন তাজ মো. কবির বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভাই, যাব কোথায়? তিন দিন ধরে এখানে আছি। পরিবার নিয়ে এত দিন ঢাকায় থাকতাম। এখন আর ঢাকায় থাকব না। বাড়িভাড়া মিটিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে একেবারে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে চলে যাচ্ছিলাম। সঙ্গে বউ রওশন আরা, দুই ছেলে রায়হান ও হাসান। আরও আছেন বাচ্চাদের খালা রোকসানা ও তাঁর স্বামী।
কবিরের ভাষ্যমতে, মিরপুর ১২ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা। ওখানে কারচুপির কাজ করতেন। ঢাকায় আয় কমে যাওয়ায় সাতক্ষীরায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কবির। বাসা ছেড়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাবতলী বাস টার্মিনালে যান তাঁরা। সঙ্গে হাঁড়িপাতিল আর কাপড়ের ছয়টি বস্তা। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা। ঢাকায়ও থাকার জায়গা নেই, আবার সাতক্ষীরাও যেতে পারছেন না। অগত্যা বাস কাউন্টারেই আশ্রয় নেয় পুরো পরিবার। প্রথম দুই দিন ভাত খেলেও গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে টার্মিনালের হোটেলগুলো বন্ধ।রওশন আরা বলেন, ভাই, বাথরুম করতেই ২০০ টাকা গেছে। তবে কষ্ট হচ্ছে বাচ্চা দুটোর। আর কোনো দিন ঢাকা আসব না।

ফিরে যাওয়ার সময় আতিথেয়তা করলেন কবির। মুড়ির থালা এগিয়ে বললেন, আমাগের সাথি দুটো মুড়ি খান। প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় ঘাতক বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত। গত ২২ ফেব্র“য়ারি দেওয়া এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে আঞ্চলিকভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে চালকের বিরুদ্ধে গত সোমবার মৃত্যুদন্ডের রায় দেন আদালত। এরপরই মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে ধর্মঘট ডাকা হয়। যাত্রীদের জিম্মি করে আদালতের রায়বদলানোর কৌশল নিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চারটি সংগঠনের নেতাদের বৈঠক শেষে বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শাজাহান খান।কর্মবিরতিতে যাওয়া পরিবহনশ্রমিকদের এখন থেকেই যানবাহন চালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তাঁর বিশ্বাস, এই অনুরোধের পর দেশের সব সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হবে।পরিবহন খাতে চলমান অচলাবস্থার অবসানে দুপুরের দিকে মতিঝিলের বিআরটিসি ভবনে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। নৌমন্ত্রী সারা দেশের শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। আর বাস ও ট্রাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা।বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করে সকালে তাঁরা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উভয় মন্ত্রী মালিক-শ্রমিকদের সমস্যা উপলব্ধি করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরা আইনগতভাবে সমস্যার সমাধানে অগ্রসর হবেন। সে ক্ষেত্রে সরকার আইনানুগ সম্ভাব্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।শাজাহান খান বলেন, আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে যান চলাচলের জন্য মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, এই অনুরোধের পর দেশের সব সড়কে যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর এই কথার পর সারা দেশে ডাকা লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার হলো কি নাÑসাংবাদিকের এমন প্রশ্নে শাজাহান খান বলেন, ধর্মঘটই তো ডাকা হয়নি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে পরিবহনশ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে গিয়েছেন। তাঁদের কাজে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় ঘাতক বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত। গত ২২ ফেব্র“য়ারি দেওয়া এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে আঞ্চলিকভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে চালকের বিরুদ্ধে সোমবার মৃত্যুদন্ডের রায় দেন আদালত। এরপরই গতকাল মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।