হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে না নেওয়া ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ এবং কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।স্বরাষ্ট্র, শিল্প সচিব, আইজিপি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে ট্যানারি বন্ধের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে। আদালতে বেলার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫৪টি ট্যানারি রয়েছে হাজারীবাগে, যেগুলো সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হাই কোর্টের এক রায়ে।এরপর বহুবার সময় দেওয়া হলেও অধিকাংশ কারখানা এখনও সরেনি। এ কারণে পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ট্যানারিগুলোকে প্রতিদিনের জন্য জরিমানাও করেছে হাই কোর্ট।সরকার গতবছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েও ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ থেকে সরাতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ৩ জানুয়ারি এই আবেদন করেন।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়েছে, এমন খবর যুক্ত করে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি আবেদন করে। এতে সাভারে স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত হাজারীবাগে থাকা ট্যানারি কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।পরে আদালত এ বিষয়ে জানতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নন, এমন একজন কর্মকর্তাকে তলব করেন। পরে কর্মকর্তা এসে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এরপর আদালত সোমবার এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে ২০১১ সালে ৩০ এপ্রিলের পর হাজারীবাগে ট্যানারি চালানোর অনুমোদন নাই। এরপরও সরকার চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেন। এ সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নেয়নি। এ কারণে জানুয়ারিতে আদালতে আবেদন করেছি। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে না নেওয়া ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ এবং কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে হাজারীবাগের ১৫৪টি ট্যানারি কারখানার বকেয়া পড়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয় হাই কোর্ট। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক সম্পূরক আবেদনে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ তখন এই আদেশ দেয়।আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদেশের পর ঐ দিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই সময়ের মধ্যে তারা ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা না দিলে কারখানা বন্ধ বা মালিকদের গ্রেপ্তারের আবেদন জানাব আমরা।হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আবেদনে গত বছরের ১৬ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ ট্যানারি মালিকদের পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।

পরে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে আপিল বিভাগ জরিমানার সিদ্ধান্ত ঠিক রেখে পরিমাণ কমিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়। শিল্প সচিবকে ওই অর্থ আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়।ক্ষতিপূরণ আদায়ের ওই নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয়নি জানিয়ে এরপর শিল্প সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।এরপর গত ২৫ জানুয়ারি হাই কোর্ট শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে তলব করলে তিনি ১৩ ফেব্র“য়ারি হাজির হয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।মনজিল মোরসেদ জানান, শিল্প সচিব সেসব ট্যানারি মালিকের তথ্য দিয়েছেন, সেখানে তিনি দেখিয়েছেন গত বছরের আগস্টের পর থেকে ১৫৪ কারখানার মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণের ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে।তখন আমরা এসব ট্যানারির বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছিলাম আদালতের কাছে। অথবা তাদের ব্যক্তিগতভাবে হাজির হতে বলা বা বকেয়া অর্থ দ্রুত পরিশোধ করার নির্দেশনা চেয়েছিলাম।আদালত আজ নির্দেশ দিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারি কোষাগারে বকেয়া টাকা জমা দিতে হবে। আদালত বলেছে, ওই সময়ের মধ্যে টাকা জমা দেওয়া না হলে তাদের সিরিয়াস কনসিকোয়েন্স ফেইস করতে হবে।